লিউকোপ্লাস্ট জড়ানো স্যালাইনের চ্যানেল কাটতে গিয়ে সদ্যোজাত শিশুর বুড়ো আঙুলটাই আস্ত কেটে ফেলেছিলেন সরকারি হাসপাতালের নার্স। তার পর রক্তাক্ত শিশুটিকে মায়ের কোলে ধরিয়ে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলেন, ‘‘আঙুলটা কাটার দরকার ছিল, তাই কেটে দিয়েছি!’’
রবিবার রাতে, দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট হাসপাতালের ওই নার্সের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছেন সদ্যোজাত ওই কন্যার মা মামণি মণ্ডল। পরিবারের অভিযোগ, আঙুল কেটে ফেলার পরে বেগতিক বুঝে তাঁদের তড়িঘড়ি ‘রেফার’ করে দেওয়া হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মামণির স্বামী বাবলা বলেন, ‘‘আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ছি দেখে হাসপাতাল সুপার এসে আমাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে যান ওখানে প্লাস্টিক সার্জারি করে কাটা আঙুল জুড়ে দেওয়া যাবে।’’
আঙুল অবশ্য জোড়া লাগেনি। ওয়ার্ডের এক কোণে রাখা ডাস্টবিন থেকে মেয়ের কাটা আঙুলের টুকরোটা নিয়ে সে রাতেই দশ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে মণ্ডল দম্পতি ছোটেন শিলিগুড়ি। তবে সোমবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে জানতে পারেন— প্লাস্টিক সার্জারির ব্যবস্থা সেখানে নেই। অগত্যা মেয়ের রক্ত ভেজা আঙুলে ব্যান্ডেজ জড়িয়েই ফিরে আসেন বালুরঘাট হাসপাতালে।
শুধু দায়সারা চিকিৎসাই নয়, ওই পরিবারকে এ ভাবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর ঘটনায় বালুরঘাটের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যভবন। স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষকর্তার প্রশ্ন, ‘‘কাটা আঙুল জোড়া দেওয়াই যদি লক্ষ্য হয়, তবে ওই পরিবারকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হল না কেন?’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া রাজ্যের আর কোনও সরকারি হাসপাতালে প্লাস্টিক সার্জারির সুযোগ নেই।
কেন ওই পরিবারকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হল? দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে’র কাছে কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবারের মধ্যে হাসপাতালের সুপারের কাছে ঘটনার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত নার্স রাখী সরকারকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।’’ বালুরঘাট হাসপাতালের সুপার তপন বিশ্বাস আবার বলছেন, ‘‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই এর উত্তর দেবেন।’’ তিনি অবশ্য জানান, মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি করে শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। পাঁচ চিকিৎসককে নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়ে ঘতদন্তও শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত অবশ্য দোষ স্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শিশুটিকে সোমবার ছুটি দেবেন বলে চিকিৎসক রাতেই স্যালাইনের চ্যানেল খুলে রাখতে বলেন। চ্যানেল কাটতে গিয়ে কী করে যে এমন ঘটে গেল বুঝতে পারছি না।’’ শিশুটির আত্মীয় বিজন মণ্ডল থানায় ওই নার্সের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’ আঙুল কাটার অভিযোগ এনেছেন।
সরকারি হাসপাতালে এমন ঘটনা নতুন নয়। গত বছর বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও একই ভাবে আঙুল কেটে যায় এক সদ্যোজাতের। সে ক্ষেত্রেও অভিযুক্ত ছিলেন এক নার্স। তবে বালুরঘাটের ঘটনায়, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষও দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে বলে মত উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান গৌতম দেবের। তিনি বলেন, ‘‘কোনও রোগীকে হয়রান করা ঠিক নয়। প্লাস্টিক সার্জারির ব্যবস্থা না থাকলেও কী ভাবে কী করা যেত সেটাও ভাবা জরুরি।’’ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত সুপার নির্মল বেরা অবশ্য বলছেন, ‘‘শিশুটির আঙুল জোড়া লাগাতে প্লাস্টিক সার্জারি জরুরি ছিল। সে পরিকাঠামো এখানে নেই। তাই শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।’’
বালুরঘাটের দাসুল গ্রামের মামণিদেবী ৩ জুলাই বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই রাতেই তাঁর শিশুকন্যার জন্ম হয়। ৫ জুলাই তাঁদের ছুটিও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দিন কয়েক পরে, ১০ জুলাই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ফের হাসপাতালে ভর্তি হয় শিশুটি। তার পরেই এই কাণ্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy