মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে সাফল্যের পর তৃণমূলের প্রথম বড় কর্মসূচি হতে চলেছে রবিবার। ২১ জুলাইয়ের সেই সভাকে ‘সেতুবন্ধনের’ সভা হিসাবে দেখছেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের অনেকে। যেখানে এক দিকে লোকসভার জয়ের বিজয় উদ্যাপিত হবে। অন্য দিকে, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে দলকে দিশা দেবেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, ২০২৬ সালে নির্ধারিত সময়ে বিধানসভা ভোট হলে মাঝে আরও একটি ২১ জুলাই পড়বে। কিন্তু শাসকদলের নেতৃত্বের অনেকেই মনে করছেন, মমতা চাইবেন দু’বছর আগে থেকেই বিধানসভার লক্ষ্যে সংগঠন সাজাতে এবং দলের অভিমুখ ঠিক করে দিতে।
তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকের বক্তব্য, ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে শাসকদলকে আর বড় কোনও ভোটের মুখোমুখি হতে হবে না। পুরভোট নির্ধারিত সময়ে হলে তা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৭ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। আর পঞ্চায়েত ভোট ২০২৮ সালে। ফলে বিধানসভার আগে কোনও স্থানীয় স্তরের নির্বাচনে কয়েকটি উপনির্বাচন ছাড়া ‘টেস্ট’ পরীক্ষার সুযোগ নেই।
লোকসভা ভোটে তৃণমূল ২৯টি আসন পেলেও দেখা গিয়েছে শহরাঞ্চলে শাসকদল ‘ধাক্কা’ খেয়েছে। রাজ্যের ১২১টি পুরসভার মধ্যে ৬৯টিতে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। কলকাতা, আসানসোল, শিলিগুড়ির মতো ‘কর্পোরেশন’ এলাকাতেও তৃণমূল অনেক ওয়ার্ডে পিছিয়ে। শহরাঞ্চলের ক্ষতে প্রলেপ দিতে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক স্তরে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন ‘প্রশাসক’ মমতা। অনেকের মতে, প্রশাসনের পাশাপাশি সংগঠনের বিষয়েও রবিবারের সভা থেকে বার্তা দিতে পারেন তিনি।
তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিও নজরে থাকবে রবিবারের সভায়। লোকসভা ভোটের পর চিকিৎসার জন্য ‘ছোট বিরতি’ নিয়েছিলেন অভিষেক। চিকিৎসা করিয়ে শুক্রবারেই আমেরিকা থেকে কলকাতায় ফিরেছেন তৃণমূলের সেনাপতি। যদিও তার পর শনিবার রাত পর্যন্ত অভিষেককে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি পর্বে কোনও ভূমিকাতেই দেখা যায়নি। রবিবার তিনি কী করবেন, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে তৃণমূলের মধ্যে। রবিবার সভায় অভিষেককে কী ভূমিকায় দেখা যায়, বক্তৃতা করলে তার অভিমুখ কী হয় সে সব দিকেও নজর থাকবে।
শনিবার দুপুরেই জানা গিয়েছিল, মমতার আমন্ত্রণে ২১ জুলাইয়ের সভায় যোগ দিতে কলকাতায় আসছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। বিকেলে সভাস্থল পরিদর্শনে এসে মমতা বলেন, ‘‘আমি অখিলেশকে আমন্ত্রণ করেছি। আবহাওয়া ভাল থাকলে অখিলেশ আসবেন।’’ উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ শেষ পর্যন্ত ধর্মতলার মঞ্চে এলে তৃণমূলের এ বারের কর্মসূচি জাতীয় স্তরেও ‘রাজনৈতিক বার্তা’ দেবে বলে মনে করছেন অনেকে। তা ছাড়া, কংগ্রেসকে কিছুটা ‘এড়িয়ে’ আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে সমন্বয় রাখার ব্যাপারে তৃণমূল যে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছে, সে দিক থেকেও অখিলেশের উপস্থিতি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হবে। মুম্বইয়ে মুকেশ অম্বানীর পুত্র অনন্ত অম্বানীর বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পওয়ারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মমতা। মুম্বইয়ে অখিলেশের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল মমতার। তবে তাঁদের পৃথক কোনও বৈঠক হয়নি। সেখানেই অখিলেশকে ২১ জুলাইয়ের সভায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী।
বহু বার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে অন্যান্য দলের নেতা থেকে চিত্রতারকা বা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতীদের তৃণমূলে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে। লোকসভা ভোটের পরবর্তী পর্যায়ে এ বারের ২১ জুলাইয়ে যোগদান নিয়ে তৃণমূলের ভিতরে-বাইরে অনেক রকমের জল্পনা রয়েছে। ‘উল্লেখযোগ্য’ কেউ তৃণমূলে শামিল হন কি না, রবিবার তা-ও দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy