Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

তৃণমূলের প্রার্থী-ক্ষোভ ছড়াল আরও জেলায়

দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছে শুক্রবার। প্রার্থী অপছন্দ হওয়ায় সে দিন রাত থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে তৃণমূলের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

প্রার্থী বদলের দাবি। দেগঙ্গায় রবিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

প্রার্থী বদলের দাবি। দেগঙ্গায় রবিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৪:৩৩
Share: Save:

ঝড় থামার লক্ষণ নেই। বরং তা ছড়াচ্ছে নতুন নতুন এলাকায়।

দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছে শুক্রবার। প্রার্থী অপছন্দ হওয়ায় সে দিন রাত থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে তৃণমূলের বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা পরে রবিবারও উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গে পথ অবরোধ, পোস্টার, কটূক্তি, জমায়েত, হুমকি, হুঁশিয়ারি— নানা ভাবে অপছন্দের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জারি থেকেছে।

শাসক দলের নেতারা অবশ্য বলছেন, দল ক্ষমতায় থাকলে ভোটের টিকিটের দাবিতে এই ধরনের বিক্ষোভ অস্বাভাবিক নয়। বিশেষত তৃণমূলের মতো দল, যেখানে ব্যক্তির প্রাধান্যই বেশি, সেখানে এটা আরও স্বাভাবিক। সে দিকে ইঙ্গিত করেই তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘অর্থনীতিতে একটা মূল কথা আছে— চাহিদা এবং জোগান সব সময় মেলে না। না মিললে কিছু বিক্ষোভ তো হবেই।’’

টানা সাত বার সিপিএমের টিকিটে বিধায়ক হওয়া আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা এ বার ভাঙড়ে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ায় এ দিন সেখানে তাঁর কুশপুতুল পোড়ান শাসক দলের একাংশ। রেজ্জাক জাগুলগাছির মরিয়া গ্রামে এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ঢোকার পরই ওই ঘটনা ঘটে। দেওয়ালে ‘খুনি রেজ্জাক’, ‘হার্মাদ রেজ্জাক’ লেখা পোস্টারও পড়ে। তবে শোনপুরে বিকেলে রেজ্জাক কর্মী-সম্মেলন করেন। তাঁর দাবি, সেখানে হাজার দশেক লোক এসেছিলেন। ফলে কুশপুতুল পোড়ানো নিয়ে তিনি ভাবিত নন। আরাবুল ইসলাম-ঘনিষ্ঠ এক নেতার আবার হুমকি, রেজ্জাককেই প্রার্থী রাখা হলে তিনি তৃণমূল ছেড়ে নির্দল হিসাবে লড়বেন!

অশান্তি আছে হুগলিতেও। সিঙ্গুরের প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে পরিবর্তনের দাবি শুক্রবারেই উঠেছিল। রবিবার সেই দাবিতে মিছিল এবং সিঙ্গুর থানার সামনে বিক্ষোভ হয়। তাতে কিছু ক্ষণ যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাণ্ডুয়াতেও ফুটবলার রহিম নবিকে প্রার্থী করার প্রতিবাদে মিছিল হয়।

নানুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা কাজল শেখ-গোষ্ঠীর বিরোধিতা সত্ত্বেও শীর্ষ নেতৃত্ব বিধায়ক গদাধর হাজরাকেই প্রার্থী করেছেন। ফলে গদাধর-গোষ্ঠী ভোটে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা করছেন। এই পরিস্থিতিতে এ দিন কাজল-গোষ্ঠীকে সতর্ক করেন লাভপুরের তৃণমূল প্রার্থী মনিরুল ইসলাম। নাম না করে কাজলকে ‘গাধা’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। এ নিয়ে কাজলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি দলের সৈনিক। দলের ক্ষতি হয়, এমন কোনও কাজ করি না।’’

দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়কে খড়্গপুর গ্রামীণ কেন্দ্রে প্রার্থী করার প্রতিবাদে এ দিন গোকুলপুরে বিক্ষোভ হয়। টাটা মেটালিক্স কারখানার আইএনটিটিইউসি পরিচালিত ঠিকা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক শেখ আনোয়ার তাতে নেতৃত্ব দেন। আনোয়ার ওই কেন্দ্রে নির্দল হিসেবে লড়বেন বলেও হুমকি দেন। তাঁর দাবি, ‘‘এলাকার মানুষ দীনেন রায়কে চেনে না। উনি নেত্রীকে ভুল বুঝিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।’’ দীনেনবাবুর অবশ্য বক্তব্য, “যে কেউ প্রার্থী হতেই পারেন। আর এই বিক্ষোভ সিপিএম ও একটি সংবাদ গোষ্ঠীর সাজানো!”

বিক্ষোভ-অবরোধ-মিছিল এ দিন দেগঙ্গাতেও হয়েছে। কান্দি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শান্তনু সেন এ দিন সেখানে গিয়ে পাশে পাননি স্থানীয় নেতাদের একটা বড় অংশকে। মুর্শিদাবাদের নওদার প্রার্থী মাসুম করিমকে বদল করা না হলে সেখানে নির্দল প্রার্থী দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় ১০টি পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ।

একই ছবি উত্তরেও। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীকে বদল করার দাবিতে জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। শীতলখুচি কেন্দ্রের প্রার্থী হিতেন বর্মনকে বদলের দাবিতে মাথাভাঙার শিকারপুরে বিক্ষোভ-মিছিল হয়। প্রার্থী বদল না হলে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন অন্তত ৭টি পঞ্চায়েতের কর্মকর্তা ও স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য-সহ ৫০ জন জনপ্রতিনিধি। হিতেনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘মানুষকে বিভ্রান্ত করতে কিছু নেতা সভা-মিছিল করেছেন। বিষয়টি জেলা নেতৃত্বকে জানান হয়েছে।” মেখলিগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী অর্ঘ্য রায়প্রধান চ্যাংরাবান্ধায় দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন।

শুধু খড়্গপুর সদরের চিত্রটা একটু আলাদা। সেখানকার প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারিকে ঘিরে শনিবার যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন,
এ দিন তাঁদেরই মিষ্টিমুখ করান
তিনি। এটা কি ‘গাঁধীগিরি’? রমাপ্রসাদবাবুর জবাব, ‘‘ওঁদের জন্যই তো প্রথম প্রচার পেলাম!’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC aggitation election assambly election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE