বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তাকে সামনে রেখে এখন থেকেই ঘর গোছানোর কাজ শুরু করতে চলেছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে মন্ত্রীদের এক-এক জনকে এক-একটি জেলার দায়িত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য দু’টো। এক, সংগঠন মজবুত করা। দুই, প্রশাসনিক কাজকর্মের অগ্রগতি ঘটানো।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্ব পেয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দলের তরফে দায়িত্ব পাওয়ার পরে আজ, মঙ্গলবার প্রথম জেলায় আসছেন সুব্রতবাবু। বন্যা পরিস্থিতি দেখতেও সুব্রতবাবুকে জেলায় পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে বার তিন দিন জেলায় ছিলেন মন্ত্রী
দলের এক সূত্রে খবর, এদিন মেদিনীপুরে এসে তিনি দু’টো বৈঠকে যোগ দেবেন। দু’টোই দলীয় বৈঠক। প্রথম বৈঠকটি হবে ফেডারেশন হলে। দ্বিতীয়টি হবে বিদ্যাসাগর হলে। প্রথম বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন দলের ব্লক সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা কমিটির সদস্য এবং শাখা সংগঠনের জেলা সভাপতিরা। দ্বিতীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন দলের অঞ্চল সভাপতি, পঞ্চায়েত প্রধান, ব্লক কমিটির সদস্যরা। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও সারা হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই কি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের জেলা সফর? সদুত্তর এড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “মঙ্গলবার সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেদিনীপুরে আসছেন। দলীয় বৈঠক রয়েছে। এটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।” তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষের বক্তব্য, “দলের নানা বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে।” দু’টো বৈঠকেই মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা এবং দলের বিধায়কদের থাকার কথা। বিদ্যাসাগর হলের বৈঠকে থাকবেন জেলার কর্মাধ্যক্ষ, জেলা পরিষদের সদস্যরাও।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরকে বিরোধীশূন্য করতে চাইছে শাসক দল। ১৯টি আসনের সবক’টিই দখল করতে মরিয়া তারা। এ নিয়ে লুকোছাপাও করছেন না শাসক দলের নেতৃত্ব। দিন কয়েক আগে মেদিনীপুরে এসে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জেলাকে বিরোধীশূন্য করার ডাক দেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। অবশ্য জেলার সব এলাকায় যে শাসক দলের পায়ের তলায় সমান জমি রয়েছে তা নয়। বেশ কিছু এলাকায় দলের গোষ্ঠীকোন্দল মাথাচাড়া দিচ্ছে। চাওয়া-পাওয়া বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমনিতেই সারদা-কাণ্ড সহ একের পর এক ঘটনায় দল বিড়ম্বনায়। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে জেলেও গিয়েছেন দলের সাংসদ-মন্ত্রী-নেতারা। সেখানে গোষ্ঠীকোন্দল গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো। পরিস্থিতি এমনই যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উপ-নির্বাচনেও সব আসনে লড়াইয়ে যেতে চায়নি শাসক দল। জেলা পরিষদের একটি আসন, পঞ্চায়েত সমিতির দু’টি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের চারটি আসনে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিল। বিরোধী প্রার্থী না থাকলে কিছু করার নেই!
জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের মধ্যে আছেন। থাকবেন। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব ক্রমে কমছে। মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কুত্সা- অপপ্রচার করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। অবশ্য মানুষ এই কুত্সা-অপপ্রচার প্রত্যাখান করছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে খুঁজে পাওয়া যাবে না!” অবশ্য তিনি মানছেন, দল ক্ষমতায় থাকলে চাওয়া- পাওয়ার একটা ব্যাপার চলে আসে। যে কিছু পায় না বা প্রত্যাশা মতো পায় না, তার মধ্যে একটা অসন্তোষ আসে। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে সংগঠনের ভিত আরও মজবুত করা প্রয়োজন। মানুষের কাছে গিয়ে যদি বলা যায়, এই সময়ের মধ্যে কি কি হয়েছে, কি কি পরিকল্পনা রয়েছে, তাহলে ওই অসন্তোষ অনেকটা কমে। তৃণমূলের ওই জেলা নেতার কথায়, “সংগঠনই সব। সংগঠনের মাধ্যমেই তো মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। আমরা তাই পাড়া কমিটি গঠনের কথা বলেছি। এখন থেকেই পাড়ায়- বুথে গিয়ে মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার কথা বলেছি। জানিয়েছি, শুধুমাত্র দলের কার্যালয়ে বসে সময় কাটানো যাবে না। এলাকায় বিরোধী দলগুলো কী কী পদক্ষেপ করছে, সে দিকেও নজর রাখতে হবে। এবং প্রয়োজন মতো ব্লক এবং জেলা নেতৃত্বকে জানাতে হবে।” তাঁর কথায়, “দল বেড়েছে। আমাদের সকলকেই শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। এমন কিছু করব না, যা মানুষের মনে আঘাত দেয়। দলের ক্ষতি করে।” ওই নেতার মন্তব্য, “মনে রাখতে হবে, সব কাজ কেউ করতে পারে না। তবে মানুষের পাশে থাকাটাই বড় ব্যাপার! মানুষের পাশে থাকবে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।”
মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেদিনীপুরে এসে দলীয় কর্মীদের কি বার্তা দেন, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy