Advertisement
E-Paper

আরজি কর হাসপাতালে সিআইএসএফ মোতায়েন করার ‘দৃষ্টান্তে’ ভবিষ্যতের অশনি সঙ্কেত দেখছে তৃণমূল

তৃণমূলের অন্দরের আলোচনায় নেতাদের অনেকেই মূলত তিনটি বিষয় উল্লেখ করছেন। যেখানে রাজ্যের এক্তিয়ার, কলকাতা পুলিশের ভূমিকা এবং আগামী দিনে কী হতে পারে সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ রয়েছে।

TMC sees ominous signs of Supreme Courts order to deploy CISF for RG Kar Hospitals security

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৪ ১৮:৫৭
Share
Save

আরজি কর হাসপাতাল এবং ছাত্রাবাসের নিরাপত্তায় সিআইএসএফ মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে শীর্ষ আদালতের সেই রায়কে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ‘স্বাগত’ জানালেও ঘরোয়া আলোচনা ভবিষ্যৎ শঙ্কার কথা গোপন করছেন না দলেরই প্রথম সারির নেতাদের একাংশ। একান্ত আলোচনায় তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট, ভবিষ্যতের জন্য ‘অশনি সঙ্কেত’ দেখছেন তাঁরা। তবে এর উল্টো মতও রয়েছে। শাসকদলের একাংশ আবার মনে করছে, হাসপাতালে সিআইএসএফ মোতায়েনের ফলে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আর কিছু থাকবে না। তা রাজ্য সরকার তথা তৃণমূলের জন্য ইতিবাচক বলেই অভিমত তাঁদের।

আরজি করে সিআইএসএফ মোতায়েন প্রসঙ্গে তৃণমূলের নবগঠিত মিডিয়া কমিটির অন্যতম সদস্য কুণাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যদি আরজি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেয়, তা হলে তৃণমূলের আপত্তি নেই। কারণ, ওই হাসপাতাল টার্গেট করে অশান্তি করছে রামবাম অপশক্তি। বড় চক্রান্ত চলেছে। যদি ওদের প্ররোচনা, ওদের উস্কানি, হাঙ্গামার ছক এখন ওদের বাহিনীই সামলাতে চায়, সামলাক।’’ তবে তৃণমূলের অন্দরের আলোচনায় সিআইএসএফ-সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকেই মূলত তিনটি বিষয় উল্লেখ করছেন। এক, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়, সেখানে সিআইএসএফ-কে নিয়োগ করা হয়েছে। দুই, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে পরোক্ষে কলকাতা পুলিশের প্রতি ‘অনাস্থা’ প্রকাশিত হয়েছে। এবং তিন, তৃণমূলের নেতারা সবচেয়ে বেশি যেটি নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’, সেটি হল হাসপাতালের নিরাপত্তায় সিআইএসএফ নিয়োগ করার ‘দৃষ্টান্ত’ তৈরি হওয়া। এক নেতার মতে, এর পরে তো খুচখাচ গোলমাল হলেও অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও সিআইএসএফ মোতায়েন করার দাবি উঠবে। হাসপাতালের চিকিৎসক-সহ অন্য কর্মীরা সেই দাবিতে আন্দোলনেও নামতে পারেন। সে ক্ষেত্রেও এই ‘দৃষ্টান্ত’ দেখিয়ে এমনই নির্দেশ দিতে পারে আদালত। শাসকদলের এক নেতার কথায়, ‘‘পরিস্থিতি এখন তপ্ত। এই পরিস্থিতিতে অন্য হাসপাতালগুলিতেও যদি চিকিৎসকেরা এই দাবি তোলেন, তা হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যাবে।’’ ওই নেতা এ-ও বলেন, ‘‘কলকাতা তো বটেই, জেলাতেও অনেক সময়ে রোগীমৃত্যু-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর হয়। রাজ্য সরকারের কারণেই তা ইদানীং অনেকটা কমানো গিয়েছে। কিন্তু সিআইএসএফ মোতায়েনের নির্দেশের পর কোথাও ছোটখাটো ঘটনা হলেও এই আর্জি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমার সম্ভাবনা তৈরি হবে।’’

মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই উত্তাল আরজি কর। বিক্ষোভ চলছে হাসপাতাল চত্বরে। আন্দোলনকারীরা যেমন ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় বিচারের দাবি তুলছেন, তেমনই ‘কর্মস্থলে’ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথাও বলছেন। শুধু আরজি করে নয়, আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নয়াদিল্লির এমস-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মবিরতি চলছে। আদালত অবশ্য সেই চিকিৎসকদের কাছে কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার আর্জি এবং অনুরোধ জানিয়েছে। যে আবেদন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও করেছিলেন। কিন্তু চিঁড়ে ভেজেনি। শীর্ষ আদালতের অনুরোধের পরে মঙ্গলবার বিকালে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা।

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের নেতারা নির্দিষ্ট ভাবে সিআইএসএফ মোতায়েনের নির্দেশকেও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন। দলের এক সাংসদের বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট বলেনি যে, আরজি করের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক। আদালত সিআইএসএফকেই নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। যে বাহিনী বিমানবন্দর, জলবন্দর, কয়লাখনির নিরাপত্তা দেখে, তাদের একটা হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া রাজ্যের পক্ষে খুব একটা ইতিবাচক সঙ্কেত নয়। কারণ, এই বাহিনী ‘এলিট ফোর্স’। তাদের প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বুঝেই নিয়োগ করা হয়।’’ তবে কৌশলগত কারণেই সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলার রাস্তায় যেতে চায় না তৃণমূল। কারণ হিসাবে শাসকদলের নেতাদের ব্যাখ্যা, এখনই সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে কোনও ‘তির্যক’ মন্তব্য করলে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে। এক নেতার কথায়, ‘‘এমনিতেই ছোট ছিদ্র নিজেদের একাধিক ভুলে বড় গর্তের আকার নিয়েছে। তাকে আর বড় আমরা করতে চাই না।’’

সোমবারেই তৃণমূল সিবিআইয়ের উপর চাপ বৃদ্ধি করার পথে হেঁটেছিল। শাসকদলের তরফে বলা হয়েছিল, রবিবারের সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে। আগামী শুক্রবার যখন ধৃত সঞ্জয়কে আদালতে পেশ করবে সিবিআই, তখন যেন চার্জশিটও পেশ করে। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতও সিবিআইকে বৃহস্পতিবার প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে। তদন্তভার হাতে নিয়ে সিবিআই কী করছে, কতটা এগোতে পারছে, কার্যকরী কী ভূমিকা নিচ্ছে, সে সব প্রশ্নকেই সামনে রাখতে চাইছে তৃণমূল। তৃণমূলের তরফে সিবিআইয়ের ‘অগ্রগতি’ নিয়ে সমাজমাধ্যমে লেখালেখি চলছে। যাঁরা নাগরিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের কাউকে কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে সেই পোস্ট হোয়াট্সঅ্যাপ করে পাঠানোও হচ্ছে। তবে একটি হাসপাতালে সিআইএসএফ মোতায়েন করার নির্দেশ যে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের জন্য আরও একটি ‘ধাক্কা’, তা একান্ত আলোচনায় অস্বীকার করছেন না শাসক শিবিরের কুশীলবেরা।

R G Kar Medical College And Hospital Incident TMC cisf Hospital Security Supreme Court of India

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}