ভোটার আইডি কার্ড বা সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ‘ভুলের দায়’ স্বীকার করতে হবে বলে দাবি করল তৃণমূল। সোমবার দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন নয়াদিল্লিতে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, কমিশন ‘ভুলের দায়’ স্বীকার না করলে মঙ্গলবার তাঁরা এই বিষয়ে আরও নথি প্রকাশ করবেন। রবিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিশন মেনে নিয়েছে যে, একই এপিক নম্বরে ভোটার আইডি কার্ড বা সচিত্র পরিচয়পত্র একাধিক রাজ্যে রয়েছে। তার মানেই সেই সচিত্র পরিচয়পত্র ‘ভুয়ো’ নয়। সেই নিয়েই সোমবার ক্ষোভ প্রকাশ করল তৃণমূল।
ডেরেক, তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাগরিকা ঘোষ, লোকসভার সাংসদ কীর্তি আজাদ সোমবার বেশ কিছু সচিত্র পরিচয়পত্রের একটি তালিকা তুলে ধরেন। সেই তালিকায় দেখা গিয়েছে, একই এপিক নম্বর লেখা অনেকগুলি ভোটার আইকার্ড রয়েছে। ডেরেকদের দাবি, এই ভোটার আইকার্ডগুলির বেশির ভাগই বিজেপি- শাসিত রাজ্যের বাসিন্দাদের। এই প্রসঙ্গে ডেরেক বলেন, ‘‘আমরা চাই, পশ্চিমবঙ্গে কেবল সেখানকার বাসিন্দারাই ভোট দিক। দেখা যাবে, ভোটারদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না, কারণ, তাঁদের ভোট অন্য কেউ দিয়ে গিয়েছেন, যাঁদের ভোটার আইডি কার্ডের এপিক নম্বর তাঁদেরই মতো।’’ ডেরেক আরও জানান যে, সে ক্ষেত্রে অন্য রাজ্য থেকে ভোটারেরা এসে ভোট দিয়ে যাবে। এটা কিছুতেই মানা যায় না।
আরও পড়ুন:
ভুয়ো ভোটার, একই নম্বরের একাধিক ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে অভিযোগ উঠেছে দেশে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পরিস্থিতিতে রবিবার নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করে ব্যাখ্যা দেয় যে, অনেক ক্ষেত্রেই এপিক নম্বর এক হলেও ভোটকেন্দ্র এবং বিধানসভা কেন্দ্র আলাদা হয়। এপিক কার্ডে যে কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে, শুধু সেখানেই ভোট দেওয়া যাবে। অন্য কোথাও নয়। ডেরেক সোমবার এই নিয়ে পাল্টা অভিযোগ করে জানান যে, তৃণমূল এই নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করার কথা ঘোষণার পরেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কমিশন। তিনি এই বিষয়টিকে ‘দুর্নীতি’ বলেও আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কমিশনের প্রশংসা করব, তবে সীমিত। কারণ, তারা ভুলের কথা বললেও তার দায় স্বীকার করেনি।’’ তার পরেই তিনি কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ‘‘কমিশনকে অনুরোধ করছি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দায় স্বীকার করুন। না করলে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আরও কিছু নথি প্রকাশ করব।’’ এই নিয়ে তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন ডেরেক।
কয়েক দিন আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সভায় মমতা অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় রাজ্যের ভোটারদের নামের জায়গায় হরিয়ানা, গুজরাত, পঞ্জাবের বাসিন্দাদের নাম ভোটার হিসেবে নথিবদ্ধ করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে বিজেপি, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলে মমতা দাবি করেছিলেন, বিজেপি ঠিক এই ভাবেই মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে বিরোধীদের হারিয়েছে। এর পরে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভোটার তালিকা ধরে সমীক্ষার (স্ক্রুটিনি) কর্মসূচিতে নেমেছেন। রবিবার কমিশনের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে তৃণমূল দাবি করে, এর ফলে মমতার তোলা অভিযোগ ‘মান্যতা’ পেয়েছে। এ বার তৃণমূলের তরফে দাবি করা হল, এই ‘ভুলের জন্য দায়’ স্বীকার করতে হবে কমিশনকে।