কোথাও বিক্ষোভকারীদের মার, চলল কিল-চড়-ঘুষি, বাদ গেলেন না মহিলারাও। কোথাও আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশই তুলে নিয়ে গেল বিক্ষোভকারীদের। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আবহে যাদবপুরকাণ্ড ঘিরে ছাত্র ধর্মঘটের ডাকে সোমবার সকাল থেকেই তপ্ত রাজ্যের নানা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সার্বিক ভাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের প্রভাব কমই।
গত শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হেনস্থার শিকার হন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভের সময় আহতও হন মন্ত্রী। তার পরেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে যাদবপুরে। তাতে জখমও হন শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো দুই পড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে এক জন সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর কর্মী। অন্য জন আরএসএফের। অভিযোগ, দুই পড়ুয়ার মধ্যে এক জনকে চাপা দিয়েছে মন্ত্রীর গাড়ি। আর জনের পায়ের উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে গিয়েছে। এরই প্রতিবাদে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের ডাক দেয় এসএফআই।
সোমবার সকাল থেকেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং ডিএসও। পঠনপাঠন বন্ধ কলা বিভাগে। কিন্তু হাতাহাতি বা ধস্তাধস্তির মতো গন্ডগোল সেই অর্থে হয়নি। সোমবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষাও হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, অনেক ছাত্র পরীক্ষা দিতে আসেননি। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে অনেক পরীক্ষার্থীদের দাবি, ধর্মঘটের জেরে তাঁরা পরীক্ষা দিতে সাহস পাচ্ছিলেন না প্রথমে।
আরও পড়ুন:
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই যাদবপুর বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হলেও ওই স্কুলে নির্বিঘ্নেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে। যাদবপুরের মতো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ দেখায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির কর্মীরা। ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেই হেয়ার স্কুল। সেখানেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোনও বিঘ্ন ঘটেনি বলেই খবর।
যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘটের প্রভাব থাকলেও রাজ্যের সর্বত্র সেই ছবি দেখা গেল না। অধিকাংশ জায়গায় ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে গন্ডগোল বাধে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের জেরে জখমও হন দু’জন। সকালে মেদিনীপুর কলেজেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। পড়ুয়াদের কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। কয়েক জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেও নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। তবে ওই অশান্তির পর ক্লাস হয়েছে কলেজে।
ডিএসও কর্মীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র রণক্ষেত্রের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া কলেজে। টিএমসিপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন ডিএসও কর্মীরা। দু’পক্ষের হাতাহাতিতে জখমও হন কয়েক জন। বিক্ষোভকারী এক ছাত্রীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেখানে। পশ্চিম বর্ধমানের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েও সে ভাবে ধর্মঘটের কোনও প্রভাব দেখা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, স্বাভাবিক নিয়মেই পঠনপাঠন চলছে সেখানে। রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার বলেন, ‘‘সমস্ত ক্লাস স্বাভাবিক ভাবে চলছে। এসএফআই-এর ধর্মঘট বা কোনও কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দেখা যায়নি।’’ স্বাভাবিক নিয়মে পঠনপাঠন চলছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত স্টেট ইউনিভার্সিটিতেও।
তবে ধর্মঘটের সামান্য প্রভাব দেখা গেল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনও বিভাগে ক্লাস হয়েছে। আবার কোনও কোনও বিভাগে ক্লাস হয়নি। সেখানে টিএমসিপি-র সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষও বেধেছিল এসএফআই এবং ডিএসও-র কর্মীদের। ধস্তাধস্তিতে এসএফআই-এর দু’জন জখমও হন। পরে পুলিশে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ডিএসও নেতা শাহারিয়র আলম বলেন, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী এসে আমাদের উপর চড়াও হয়েছিল। আমাদের দু’জন আহত হয়েছে। সকলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে। তবে কোথাও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের যাতে সমস্যা না হয়, সেই দিকটা আমরা দেখেছি।’’ পাল্টা টিএমসিপির নেতা গোপাল সরকার বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সমস্যা পড়ছিল শুনেই আমরা গিয়েছিলাম। বিক্ষোভকারীরা আমাদের দেখে নিজেরাই নিজেদের জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়েছিল। আমরা স্রেফ ধর্মঘট তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম।’’