একটা সময় পয়লা বৈশাখ পেরোলেই বাঙালি ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টাতেন। কবে অক্ষয়তৃতীয়া, সেই খোঁজে। সাংসদ-অভিনেত্রী শতাব্দী রায় ছোটবেলায় সেই সময় দেখেছেন। যে সমস্ত গয়নার দোকানে পয়লা বৈশাখে হালখাতা বা লক্ষ্মী-গণেশ পুজো হত না, তারা এ দিন করত। অভিনেত্রীর স্পষ্ট মনে আছে, দোকান সাজানো হত বেল, জুঁই অথবা রজনীগন্ধার মালায়। হালখাতা করতে গেলেই ক্যালেন্ডার আর মিষ্টির বাক্স মিলত।
এই হিসাব বদলে গিয়েছে যখন শতাব্দী অভিনয় দুনিয়ায় এসেছেন। তখন স্টুডিয়োপাড়ায় এই দিন মহরত বা নতুন ছবির ঘোষণার দিন। “এমনও দিন গিয়েছে, ওই দিন একসঙ্গে পাঁচটি ছবির মহরত হয়েছে। পাশাপাশি দুটো স্টুডিয়োয় মহরত হলে সমস্যা নেই। একটা থেকে বেরিয়েই আর একটিতে ঢুকে পড়তাম। কখনও কখনও পাঁচটি ছবির মহরত হত পাঁচটি স্টুডিয়োয়। একটা শেষ হলে আর একটিতে দৌড়তাম”, আনন্দবাজার ডট কমের কাছে স্মৃতি উজাড় করেছেন সাংসদ-অভিনেত্রী।
শতাব্দী জানিয়েছেন, এই দিনে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হত স্টুডিয়োপাড়ায়। অনেক সময় মুম্বই থেকে তারকারা মহরতের অতিথি হয়ে আসতেন। ক্ল্যাপস্টিক দিতেন। ছবির একটি দৃশ্য হয়তো ক্যামেরাবন্দি হত। তার পরেই ছুটি। মিষ্টিমুখের পালা। যাঁরা নোনতা ভালবাসতেন তাঁদের জন্য নোনতা খাবার আনানো হত। খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে বাড়তি পাওনা আড্ডা। এ দিন কাজের চাপ কম থাকায় অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজকেরা একসঙ্গে বসে মন খুলে আড্ডা দিতেন।
অক্ষয়তৃতীয়া বললে আরও একটি কথা মনে পড়ে শতাব্দীর, “সোনার গয়নার বিজ্ঞাপন করতাম খুব। এই দিন সোনা কেনার একটা চল আছে বাঙালির মধ্যে। ফলে, প্রথম সারির অলঙ্কার বিপণি থেকে মডেলিংয়ের জন্য ডাক পেতাম।”
আরও পড়ুন:
তিনি নিজেও কি গয়না কিনতেন এই দিনে? অভিনেত্রীর সাফ জবাব, তিনি কোনও দিনক্ষণে বিশ্বাসী নন। ইদানীং যেমন চল হয়েছে, ধনতেরাসের দিন সোনার গয়না বা রুপোর বাসন কিনতেই হবে, শতাব্দী সে সব মানেন না। তাঁর কথায়, “আমার যে দিন মনে হয় সে দিন আমি কেনাকাটা করি। বিশেষ দিনে নয়।”
অক্ষয়তৃতীয়ায় এখন আর ছবির মহরত হয় না। গয়নার মডেলিং থেকেও অনেক বছর দূরে। এ বছর শতাব্দী বিশেষ দিনে কী করবেন? এ বার জবাব দিলেন বীরভূমের সাংসদ, “এই দিনে জগন্নাথদেবের পুজো হয়। তারাপীঠ মন্দিরে জগন্নাথদেবের পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। এ দিন রামপুরহাট যাব।” তার পরেই আফসোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় জগন্নাথদেবের মন্দির উদ্বোধন করবেন অক্ষয়তৃতীয়ায়। ওখানে উপস্থিত থাকতে পারলে ভাল লাগত তাঁরও।
- পুরাণ মতে, অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস মহাভারতের কাহিনি বর্ণন করতে শুরু করেছিলেন গণেশকে। এ দিন থেকেই শ্রুতিলিখনের কাজ শুরু করেন গণেশ। বৈশাখ মাসের শুক্ল তৃতীয়া তিথিতেই শ্রীক্ষেত্র পুরীতে শুরু হয় জগন্নাথের রথ নির্মাণ।
- বৈশাখ মাসের শুক্ল তৃতীয়া তিথিটিকে অক্ষয় তৃতীয়া হিসাবে বিবেচনা করা হয়। হিন্দুদের পাশাপাশি জৈন ধর্মাবলম্বীরাও এই দিনটিকে পবিত্র মনে করেন। সৌভাগ্য অক্ষয় হয় এই তিথিতে— এমনই বিশ্বাস। বাঙালি ব্যবসায়ীর কাছে পয়লা বৈশাখের পর এই তিথিতেই হয় বিশেষ উদ্যাপন। দোকানে দোকানে পূজিত হন আরাধ্য দেবতা। মনে করা হয়, এই তিথি যে কোনও দেবতার পুজোর জন্যই প্রশস্ত।
-
রণিতা কি লাখ টাকার সোনা কিনে অক্ষয়তৃতীয়া পালন করলেন?
-
‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তবে আচার মানি না’, অক্ষয়তৃতীয়ায় কি বিশেষ পুজো করেন লোপামুদ্রা?
-
তখন অবাঙালিদের ধনতেরাস আমাদের অক্ষয়তৃতীয়া! সোনা কেনা, ছবি মহরতের দিন: ইন্দ্রাণী দত্ত
-
কৈশোরে সাদা কাগজের গ্লাসে কমলা রসনা, ওই পানীয় ছাড়া অক্ষয়তৃতীয়াই ফিকে: জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
-
‘কালো রঙের গাড়ি জীবনে কিনিনি’, অক্ষয়তৃতীয়ার শুভ-অশুভ নিয়ে কী জানালেন তৃণা সাহা?