Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
21st July TMC Rally

সেটাও ছিল রবিবার, এটাও রবিবার, তবে পাঁচ বছর আগের সেই রবি আর এই রবির ফারাক আছে অনেক

২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই নিয়ে তৃতীয় বার ২১ জুলাইয়ের সভা হচ্ছে রবিবার। ২০১৯ সালের আগে ২০১৩ সালের ২১ জুলাইও ছিল রবিবার।

২০১৯ সালের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২০১৯ সালের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ ০৯:০১
Share: Save:

কোনও রাজনৈতিক জমায়েত কতটা সফল, তার অন্যতম সূচক জনতার ভোগান্তি। তবে এ বারের ২১ জুলাই তৃণমূলের সমাবেশে সেই ভোগান্তির মধ্যে খুব একটা পড়তে হবে না আমজনতাকে। কারণ, সে দিন রবিবার। সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, পাইকারি বাজার বন্ধই থাকে। ট্রেন, মেট্রো, বাস, লঞ্চে অফিসযাত্রীদের ভিড়ও থাকে না। ফলে সেই ভোগান্তির সূচকে এ বারের ২১ জুলাইয়ের সাফল্যের মাপ হবে না। তবে শাসকদলের নেতাদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটে বিপুল জয় এবং বিধানসভার উপনির্বাচনে চারে চার হওয়ার পরে এ বারের ‘শহিদ দিবস’-এর সভা বিজয়োৎসবে পরিণত হতে চলেছে।

ঘটনাচক্রে, পাঁচ বছর আগেও ২১ জুলাই ছিল রবিবার। সেই ২১ জুলাইও ছিল একটি লোকসভা ভোটের পরে। কিন্তু শাসকদলের নেতাদের বক্তব্য, পাঁচ বছর আগের রবিবারের ২১ জুলাইয়ের সঙ্গে এ বছরের ২১ জুলাই রবিবারের গুণগত ফারাক রয়েছে।

মূলত তিনটি ফারাকের কথা বলছেন শাসকদলের নেতারা। এক, পাঁচ বছর আগের লোকসভা ভোটে বিজেপি এক লাফে ১৮টি আসন জিতে গিয়েছিল। যা তৃণমূলের কাছে ছিল ‘রাজনৈতিক ধাক্কা’। যে ধাক্কার ফলে তৃণমূলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে কী হবে? তবে ২০২৪ সালের ছবিটা পুরোপুরি উল্টে গিয়েছে। বিজেপি আগের থেকে অনেকটা কমে নেমে গিয়েছে ১২টি আসনে। আর তৃণমূল পৌঁছে গিয়েছে ২৯টি আসনে। যা ২০২৬ সালের বিধানসভার আগে শাসকদলের কাছে ‘উৎসাহব্যঞ্জক’। দুই, পাঁচ বছর আগে সারা দেশের প্রেক্ষাপটে বিজেপি ছিল নিরঙ্কুশ। পদ্মশিবিরের দখলেই ছিল ৩০৩টি আসন। কিন্তু এ বার তা নয়। ৪০০ আসন পার করার হুঙ্কার দিয়েও বিজেপিকে থামতে হয়েছে ২৪০টি আসনে। তৃতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদীকে ‘পরনির্ভরশীল’ হয়ে সরকার গড়তে হয়েছে। যা সামগ্রিক ভাবে বিজেপি-বিরোধী পরিসরকেই উজ্জীবিত করেছে। জাতীয় রাজনীতিতেও তৃণমূলের গুরুত্ব বেড়েছে। তিন, পাঁচ বছর আগে তৃণমূলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব দলের অন্দরে এ ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল ধাক্কা খাওয়ার পরে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে অভিষেক বক্তৃতা করেছিলেন। কিন্তু তখন সংগঠনের উপর তাঁর এখনকার মতো ‘নিয়ন্ত্রণ’ ছিল না। তার পরবর্তী সময় থেকেই অভিষেক পরামর্শদাতা এবং পেশাদার সংস্থা নিয়োগের বিষয়ে এগিয়েছিলেন। তখন থেকেই তৃণমূলে কর্পোরেট ধাঁচের সাংগঠনিক কাজকর্ম শুরু হয়। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট এবং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে সেই কৌশলে ভর করেই তৃণমূল সাফল্য পেয়েছে বলে মনে করে দলের বড় অংশ।

২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই নিয়ে তৃতীয় বার ২১ জুলাইয়ের সভা হচ্ছে রবিবার, ছুটির দিন। ২০১৯ সালের আগে ২০১৩ সালের ২১ জুলাইও ছিল রবিবার। মাঝে ২০২০ এবং ২০২১ সালের ২১ জুলাইয়ের সভা কোভিডের কারণে ভার্চুয়াল মাধ্যমে হয়েছিল। ২০১৯ সালের ২১ জুলাই ছিল রবিবার। কিন্তু সেই রবিবার এবং এই রবিবারের ফারাক সম্পর্কে বলতে গিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে সিপিএম এবং কংগ্রেসের প্রত্যক্ষ মদতে বিজেপি বাংলায় ১৮টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু তার পরে মানুষ তাঁদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। এবং বিজেপিকে বিসর্জন দিয়েছেন। ২০২১ সালে বাংলা দেখিয়েছিল, বিজেপিকে ঠেকানো যায়। ২০২৪ সালে বাংলা তো বটেই, সারা দেশ সেই পথে হেঁটেছে।’’ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য অবশ্য ভিন্ন। তাঁর কথায়, ‘‘খারাপ সময় হোক বা ভাল সময়— বারবারই ২১ জুলাইয়ের ভিড় তৃণমূলকে উৎসাহিত করেছে। ফলে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলালেও ২১ জুলাই দিনটির পৃথক গুরুত্ব রয়েছে।’’

তবে তৃণমূলের নেতারা পাঁচ বছর আগের ২১ জুলাইয়ের সঙ্গে এ বারের ২১ জুলাইয়ের একটি মিলও খুঁজে পাচ্ছেন। তা হল, ২০১৮ পর্যন্ত বাংলার রাজনীতিতে তৃণমূলের নিশানায় থাকত সিপিএম এবং কংগ্রেস। কিন্তু ২০১৯ সালেই প্রথম ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপি হয়ে ওঠে আক্রমণের মূল লক্ষ্য। তার কোনও বদল হয়নি। এ বারেও হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Rally 21st July TMC Rally Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE