Advertisement
E-Paper

জয়ন্তের ‘এত বড় বাড়ি’? জানতই না তৃণমূল! দায়িত্ব এড়িয়ে ‘ভুল সংশোধন’ করার ঘোষণা সৌগতদের

সোমবার কামারহাটি পুরসভায় বিধায়ক মদন মিত্র এবং পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহার সঙ্গে বৈঠকে বসেন সৌগত রায়। তার পরেই দায় উড়িয়ে জানিয়ে দেন, জয়ন্তের এত বড় বাড়ির কথা তৃণমূলের কেউ জানতেন না।

(বাঁ দিকে) জয়ন্ত সিংহ। মদন মিত্র (মাঝে)। সৌগত রায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) জয়ন্ত সিংহ। মদন মিত্র (মাঝে)। সৌগত রায় (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ১৭:২৭
Share
Save

কামারহাটিতে মা এবং পুত্রকে মারধরে অভিযুক্ত জয়ন্ত সিংহ যে এত বড় বাড়ি করেছেন, তা তাঁরা জানতেন না। সোমবার এমনটাই দাবি করলেন দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। কামারহাটির মারধরকাণ্ডের পর জয়ন্তের ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠতা’ নিয়ে সরব হয়েছিল বিরোধীরা। সৌগত এবং এলাকার বিধায়ক মদন মিত্রের সঙ্গে তাঁর ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল। সোমবার সাংবাদিকদের সামনে সেই ‘দায়’ ঝেড়ে ফেললেন দমদমের সাংসদ। যদিও ‘ভুল হয়েছে’ মেনে নিয়ে জানালেন, তা ‘সংশোধন’ করা হবে। কোনও প্রোমোটারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখা যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বর্ষীয়ান এই তৃণমূল নেতা। প্রকাশ্যে দলের নেতা-কর্মীদের পরস্পরের বিরুদ্ধে মুখ খোলার বিষয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সৌগত।

জয়ন্তকে কামারহাটিতে প্রকাশ্যে মা এবং পুত্রকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পরেই জয়ন্তের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছেন এলাকার বাসিন্দাদের বড় অংশ। তৃণমূল নেতৃত্বের দিকেও উঠেছে আঙুল। অভিযোগ, শাসকদলের একাংশের প্রশ্রয়েই জয়ন্তের রমরমা। সাধারণ দুধ ব্যবসায়ী থেকে ক্রমে ফুলে ফেঁপে তিনি এলাকার ‘ডন’ হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ। কী ভাবে বিশাল সাদা অট্টালিকা তৈরি করেছেন, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বিরোধীরা সে সব নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। এই আবহে সোমবার কামারহাটি পুরসভায় বিধায়ক মদন এবং পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহার সঙ্গে বৈঠকে বসেন সৌগত। প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক শেষে দায় উড়িয়ে জানিয়ে দেন, জয়ন্তের যে এমন অট্টালিকা রয়েছে, সে কথা তৃণমূলের কেউ জানতেন না। তাঁর কথায়, ‘‘গোপাল বলেছেন, কিন্তু আমরা জানতাম না যে, জয়ন্ত সিংহ এত বড় বাড়ি করেছেন। কেউ না বললে জানব কী করে? সংবাদমাধ্যমও আগে জানায়নি।’’

প্রশ্ন ওঠে, জয়ন্তের বিষয়ে কি কিছুই জানতেন না সাংসদ? সাংবাদিকদের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ওর (জয়ন্ত) বাড়বাড়ন্ত জানব না কেন? এর আগে যখন বুম্বাকে মেরেছিল, উত্তরবঙ্গ থেকে ধরে এনেছিল পুলিশ। দেড় মাস হেফজতে ছিল।’’ এর পরেই সৌগত আঙুল তুলেছেন পুলিশের দিকে। দাবি করেছেন, সে বার পুলিশ যথেষ্ট কঠিন ধারা দেয়নি বলে ছাড়া পান জয়ন্ত। তাঁর কথায়, ‘‘যিনি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তিনি ছাড়া পাওয়ার পরেই জামিন পান জয়ন্ত। পুলিশ যথেষ্ট কঠিন ধারা দেয়নি ওর বিরুদ্ধে। তাই ছাড়া পেয়েছে।’’ তবে এ বার পুলিশকে কড়া পদক্ষেপের কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন সৌগত। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে বলেছি কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হোক ওকে (জয়ন্ত)। কঠিন ধারা দিক জয়ন্তের বিরুদ্ধে।’’ জয়ন্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘গুন্ডাদের বলিনি আমার হয়ে ভোট দাও।’’ তবে মেনে নিয়েছেন, অতীতে ‘ভুল’ হয়েছে, তা ‘সংশোধন’ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এর পরেই তৃণমূলের নেতাদের হুঁশিয়ারি, ‘‘দলের ক্ষতি হয়, মুখ নষ্ট হয়, সে রকম কারও সঙ্গে মেলামেশা করা যাবে না। প্রোমোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা যাবে না। নির্দেশ না-মানলে শোকজ় করবে দল, দরকারে বহিষ্কার করবে।’’

আড়িয়াদহের তালতলার ক্লাবে মারধরের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে বিজেপি অভিযোগ করেছিল, মদনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে জয়ন্তের (আনন্দবাজার অনলাইন সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি)। সেই ভিডিয়োতে চ্যাংদোলা করে এক জনকে মারধর করতে দেখা গিয়েছিল। তাতেও জয়ন্তের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। জয়ন্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অভিযোগ অস্বীকার করে মদন পাল্টা আঙুল তুলেছিলেন সৌগত এবং ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের দিকে। দাবি করেছিলেন, পুলিশকে এই নিয়ে বার বার বলার পরে তারা সৌগতকে জানাতে বলেছিল। সৌগত এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাননি তখন। যদিও গোটা ঘটনায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে রাজ্যের পুলিশ। দলের একাংশ মনে করছিল, এ ভাবে পরোক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই আঙুল তুলছেন মদন। এ বার দলের নেতা-কর্মীদের মন্তব্য করা নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন সৌগত। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কর্মীরা কোথাও বিবৃতি দেবেন না। নীতিগত ভাবে মনে করি, দলের কারও বিরুদ্ধে কোনও নেতা-কর্মীর প্রকাশ্যে মুখ খোলা উচিত নয়। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পার্টিতে কেউ কারও বিরুদ্ধে মুখ খুলবে না।’’ মদনও যে এই নিয়ম মেনে চলছেন, তা-ও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মদন নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর মুখ খুলবেন না।’’ মদনও তাতে সায় দিয়ে বলেছেন, ‘‘পার্টির সিদ্ধান্ত, সৌগতদা ছাড়া কেউ কথা বলবেন না। সেখানে আমার কথা বলা শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল।’’ তবে কোনও সৌগতের অনুপস্থিতিতে কোনও ভাল বিষয়ে অবশ্যই কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

Jayant Singh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}