অনুঘটক হয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ নিরাপত্তা পরিষদের ‘১২৬৭ আল-কায়দা নিষেধাজ্ঞা কমিটি’র সিদ্ধান্ত। ওসামা বিন লাদেনের সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বা ‘সন্ত্রাসবাদী সংগঠন’ হিসাবে ঘোষিত হওয়ার পরে।
মুম্বইয়ে ২৬/১১ সন্ত্রাসের চক্রী হাফিজ মহম্মদ সঈদ, জাকিউর রহমান লকভিরা ‘দ্য ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স’ (এফএএফটি)-এর নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ‘ছায়া সংগঠন’ গড়ে কাশ্মীরে নাশকতার ধারা বজায় রাখতে সক্রিয় হয়েছিলেন সে সময়। আর সেই সূত্রেই গড়ে উঠেছিল তেহরিক লবাইক ইয়া মুসলিম (টিএলএম), ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) -এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠী। যে টিআরএফ সন্ত্রাসবাদীদের হামলায় মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার বৈসরন উপত্যকায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন পর্যটক। রাতে নৃশংস হত্যালীলার দায় স্বীকার বিবৃতিও দিয়েছে পাক জঙ্গিগোষ্ঠীটি।
টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। তখন সবে সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র অবলুপ্তি হয়েছে। ঠিক সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেই লশকরের ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। মূল লক্ষ্য ছিল, কাশ্মীরের স্থিতাবস্থায় বিঘ্ন ঘটানো এবং ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা। সেই লক্ষ্য সাধনের জন্য নাশকতামূলক কাজকর্মে পুনর্বিন্যাস আনার চেষ্টা শুরু করে এই জঙ্গিগোষ্ঠী। বিশেষ ভাবে নিশানা করা হয়ে পরিযায়ী শ্রমিক এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের।
গোড়ায় অবশ্য এই গোষ্ঠীর উপস্থিতি ছিল শুধুই অনলাইনে। পরে ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি করে তারা। প্রতিষ্ঠার মাস ছয়েকের মধ্যেই অনলাইন থেকে বাস্তবে রূপ পায় টিআরএফ। উপস্থিতি জানান দিতে লশকর, জৈশ-ই-মহম্মদ-সহ একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠীর থেকে এই সংগঠনে সদস্যদের নিযুক্ত করা হয়েছিল। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, টিআরএফ জঙ্গিগোষ্ঠীর দ্রুত আড়ে-বহরে বিস্তারের নেপথ্যে সরাসরি ভূমিকা ছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের। ২০২৩ সালে টিআরএফকে ‘সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল কেন্দ্র। জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা।
টিআরএফের জন্ম হয়েছিল কাশ্মীরি জঙ্গি শেখ সাজ্জাদ গুলের হাতে। নতুন জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরির আগে গুল ছিলেন লশকরের কমান্ডার। এই সংগঠন তৈরির আগেও সাংবাদিক হত্যা-সহ একাধিক হিংসায় যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। লশকর, জৈশের পাশাপাশি মূলত কাশ্মীরিদের নিয়ে গঠিত জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল মুজাহিদিনের দলছুট গোষ্ঠীর কমান্ডার মাইসের আহমেদ দারও পরবর্তী কালে শামিল হয়েছিলেন টিআরএফে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ততদিনে টিআরএফের জাল ছড়িয়ে গিয়েছিল উপত্যকার গভীরে। গত জুন মাসেই জম্মু-কাশ্মীরের রেইসি জেলায় পুণ্যার্থীদের একটি বাসে হামলা হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ১০ জন পুণ্যার্থীর। ওই হামলার নেপথ্যেও ছিল টিআরএফ।