শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় বিজেপি নেতা খুনের ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ চালাচ্ছে বিজেপি। তার মধ্যেই জেলার চণ্ডীপুরে এক সাইকেল আরোহীকে পিষে মারার অভিযোগ উঠেছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয়ের একটি গাড়ির বিরুদ্ধে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ বার পাল্টা সুর চড়াতে শুরু করেছে তৃণমূল। শুক্রবার সকালে চণ্ডীপুরে প্রতিবাদ মিছিল করেন শাসক তৃণমূলের নেতানেত্রীরা। মিছিলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি, বিরবাহা হাঁসদা, চণ্ডীপুরের বিধায়ক অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী ছাড়াও দলের নেত্রী দোলা সেন, যুবনেতা সুদীপ রাহা এবং দেবাংশু ভট্টাচার্যেরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুভেন্দুর কনভয়ের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় ভৈরবপুরের বাসিন্দা বছর তেত্রিশের শেখ ইসরাফিলের। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, চণ্ডীপুর পেট্রল পাম্পের কাছে রাস্তা পার করার সময়ে শুভেন্দুর কনভয়ের সামনের গাড়িটি তাঁকে ধাক্কা দেয়। অভিযোগ, গাড়িটি প্রচণ্ড গতিতে যুবককে ধাক্কা মারার পর ঘটনাস্থলে আর দাঁড়ায়নি। গুরুতর জখম অবস্থায় ইসরাফিলকে এড়াশাল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তৃণমূলের বক্তব্য, যুবককে পিষে দেওয়ার পরেও মানবিকতা দেখানো হয়নি। চালক পালিয়ে গিয়েছেন। গুরুতর জখম যুবককে সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি প্রাণে বেঁচে যেতেন বলে দাবি শাসকদলের। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে অভিযুক্ত গাড়িচালককে কাঁথি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম আনন্দকুমার পাণ্ডে। শুক্রবার তাঁকে তমলুক আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক ধৃতের ১ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
নিহত যুবকের ছবি টুইটারে পোস্ট করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ লিখেছেন, ‘‘শুভেন্দুর দ্রুত গতির কনভয় এই যুবককে হত্যা করে পালিয়েছে। দাঁড়িয়ে উদ্ধারকাজের মানবিকতাও দেখায়নি। ওঁর কনভয়ের বেপরোয়া গতি নিয়ে আগেও এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। উদ্ধত শুভেন্দু গুরুত্ব দেয়নি। আসানসোলেও একটি অঘটন ঘটিয়ে পালিয়েছিল। ফেরার আসামি শুভেন্দুর গ্রেফতার চাই।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ জহর সরকারও টুইটে লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতার কনভয়ের গাড়ি এক জনকে পিষে মেরে ফেলেছে! জখম যুবককে যদি তখনই নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হত, তাঁর প্রাণ বাঁচানো যেত।’’
পাল্টা বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি পুলককান্তি গুড়িয়া বলেন, ‘‘এই ঘটনা কোনও পরিকল্পিত হামলা বা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও নয়। তার পরেও এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ময়নায় এক জন বিজেপি নেতাকে যে ভাবে নৃশংস কায়দায় খুন করা হয়েছে, সেই ঘটনা থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছে তৃণমূল। মানুষ এটা মেনে নেবে না।’’
বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনার পর দিঘা-নন্দকুমার ১১৬বি জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন উত্তেজিত জনতা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। শেষমেশ স্থানীয়দের বুঝিয়ে মধ্যরাতে তোলা হয় অবরোধ। এর পর শুক্রবার সকালেই পথে নামেন তৃণমূলের নেতানেত্রীরা। ময়নাতদন্তের পর নিহত যুবকের দেহ নিয়ে চণ্ডীপুর বাজারে মিছিল করেন তাঁরা। কারা প্রতিমন্ত্রী অখিল বলেন, ‘‘এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বিরোধী দলনেতার কনভয়ের গাড়িতে। সাইকেল আরোহী ইসরাফিল রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়েছিল। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে ওই যুবককে চাপা দেওয়া হয়। আমরা কঠোর ভাবে এই ঘটনার নিন্দা করছি। অভিযুক্তের যেন কঠোর শাস্তি হয়, সেই দাবি জানাচ্ছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কাল সারা রাত ধরে বহু মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আমরা সকলেই মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করে আমরা শেষকৃত্যে শামিল হয়েছি।’’
এ বিষয়ে বিরোধী দলনেতার দফতর সূত্রে দাবি, যে গাড়িটির বিরুদ্ধে ধাক্কা মারার অভিযোগ উঠেছে, সেটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি। সেই কারণেই সাধারণ গাড়ির তুলনায় সেটি বেশি ভারী। এ ছাড়াও ওই গাড়িটি শুভেন্দুর কনভয়ের থেকে অন্তত দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রেখে চলে। গাড়িটি তুলনামূলক ভারী বলেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে শুভেন্দু নিজে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বিজেপির পুলককান্তিও বলেন, ‘‘যে কোনও দুর্ঘটনাই দুঃখজনক। সেই দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। শুভেন্দুবাবুর কনভয়ের প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে বুলেটপ্রুফ গাড়িটি ছিল। ওই যুবক গাড়ির সামনে চলে আসেন। তাঁকে বাঁচাতে চেষ্টা করেও কোনও লাভ হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy