আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। দাবি, সেই কারণে তাঁকে বদলিও হতে হয়েছিল। পরে আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোলে সেই সব দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। শুরু হয় তদন্তও। সন্দীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা সেই আখতার আলিকে এ বার বদলি করা হল উত্তরবঙ্গে।
এত দিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডেপুটি সুপার (নন-মেডিক্যাল) পদে ছিলেন আখতার। তাঁকে পাঠানো হল উত্তর দিনাজপুরে। সেখানে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ডেপুটি সুপার (নন-মেডিক্যাল) করা হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এটি রুটিন বদলি।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন ওই হাসপাতালেরই তৎকালীন ডেপুটি সুপার আখতার। ২০২৩ সালে সেই অভিযোগ করা হয়েছিল। সন্দীপদের বিরুদ্ধে যে ১৫টি অভিযোগ করেছিলেন আখতার, তার মধ্যে রয়েছে সরকারি অর্থের অপব্যবহার, স্বাস্থ্যভবন এবং কলেজ কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া সরকারি সম্পত্তি অনৈতিক ভাবে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া, শিক্ষা খাতের তহবিলের অপব্যবহার, আর্থিক লাভের কারণে অবৈধ ভাবে আধিকারিকদের বদলি করা ইত্যাদি। চিকিৎসা বর্জ্য বেআইনি ভাবে বিক্রির চক্রও সন্দীপ তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, অনলাইন দরপত্র এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বড় অঙ্কের বরাতকে ছোট ভাগে ভেঙে নিজের পছন্দের সংস্থাকে বরাত দেওয়া, ওষুধের বরাতে দুর্নীতি, কোভিড তহবিল ব্যবহার করে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনারও অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের ৯ অগস্ট আরজি হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। সেই সময় থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। তদন্তের আওতায় চলে আসে আখতারের তোলা অভিযোগ।
আখতার দাবি করেছিলেন, দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবাদ করাতেই অধ্যক্ষ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। তার জেরে আচমকাই রাজ্যের হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে বদলি করা হয়। পরে তাঁকে বদলি করা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। অভিযোগ, সেই সময়ে সন্দীপ নিজের প্রভাব খাটিয়ে আখতারকে আরজি কর থেকে ‘রিলিজ়’ দেননি। স্বাস্থ্য দফতরে বিষয়টি জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি। ৫২ দিন এই ভাবে কেটেছিল। ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁর ‘সার্ভিস ব্রেক’ করানো হয়েছিল।
আরজি কর-কাণ্ডের আবহে আখতারের তোলা অভিযোগের তদন্ত করতে বিশেষ দল গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। পরে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। আখতারের তোলা অভিযোগ নিয়ে এখনও সন্দীপের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।