Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Abhishek Banerjee

অভিষেকের ডায়মন্ড মডেল কি তাঁরা বাস্তবায়িত করতে পারবেন? তৃণমূলের অনেক সাংসদই বলছেন, অসম্ভব!

শুক্রবার অভিষেক জানিয়েছিলেন, তাঁর লোকসভা কেন্দ্র এলাকার এক-দেড় লক্ষ তৃণমূলকর্মীর থেকে থেকে সাহায্য নিয়ে তিনি ৭০ হাজার মানুষকে বার্ধক্যভাতা দেবেন। রাজ্য সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবেন না।

Abhishek Banerjee

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:০৭
Share: Save:

তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার নতুন ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’-এর কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সেই মডেল অনুসরণ করা যে সব কেন্দ্রে সম্ভব নয়, তা মেনে নিচ্ছেন তৃণমূলের অনেক সাংসদ। কেউ কেউ আবার এ-ও জানিয়েছেন, এমন কোনও ‘মডেল’-এর বিষয় তাঁদের জানা নেই। দল যদি বলে, নির্দেশ দেয়, তখন ভাবা যাবে।

নতুন ডামন্ড হারবার মডেল কী?

অভিষেক শুক্রবার তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের অন্তর্গত ফলতার কর্মসূচি থেকে জানান, ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে যে ৭০ হাজার মানুষ তাঁর কেন্দ্রে বার্ধক্যভাতার জন্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে রাজ্য সরকার এখনই টাকা পাঠাতে পারবে না। অভিষেক বলেন, ‘‘সরকার যবে দেবে দিক! তার আগে আমরা ডায়মন্ড হারবারের ৭০ হাজার মানুষকে বার্ধক্যভাতা দেব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটাই ডায়মন্ড হারবার মডেল। কারও যদি গায়ে লাগে, তা হলে কিছু করার নেই।’’ তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ এ-ও বলেছিলেন যে, তাঁর সংসদীয় এলাকায় এক-দেড় লক্ষ সক্রিয় তৃণমূলকর্মী রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তিনি এই ভাতা দেবেন।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের পন্থা কি নেবেন রাজ্যে শাসক দলের অন্য সাংসদেরা? শনিবার আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁদের অনেকের সঙ্গে। সংখ্যাগরিষ্ঠের বক্তব্য— অসম্ভব!

অভিষেকের ডায়মন্ড হারবারের পাশের লোকসভা কেন্দ্র জয়নগর। সেখানকার তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল কার্যত হাত তুলে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ডায়মন্ড হারবারে যদি বার্ধক্যভাতার জন্য ৭০ হাজার মানুষ নতুন করে নাম নথিভুক্ত করেন, তা হলে আমার জয়নগরের সংখ্যাটাও তার আশপাশেই হবে। এত মানুষকে মাসের পর মাস ভাতা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। সাধ থাকলেও সাধ্য আমার নেই।’’

প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, তাঁর লোকসভা কেন্দ্র দমদমে ওই ‘মডেল’ বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। আনন্দবাজার অনলাইনকে সৌগত বলেন, ‘‘আমার কেন্দ্রে ওই রিসোর্স (সম্পদ) নেই। ফলে ওই ভাবে ভাতা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’ সৌগতের মতোই ‘বাস্তব পরিস্থিতি’র কথা উল্লেখ করে অপারগতার কথা জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহও। যিনি ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে জিতলেও পরে অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়ে তৃণমূলে শামিল হয়েছিলেন। অর্জুনের কথায়, ‘‘আমাদের এখানে (ব্যারাকপুরে) পুরোটাই প্রায় শিল্প এলাকা। সেখানে জুটমিল-সহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মডেল বাস্তবায়িত করার বাস্তব পরিস্থিতি নেই।’’

অনেক তৃণমূল সাংসদ আবার সরাসরি ‘না’ বলেননি। যেমন বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের তিন বারের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বলেন, ‘‘আমি এখনও এমন কিছু জানি না। দলের তরফে এমন কোনও নির্দেশ পাইনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা করছেন, সেই মডেলকে স্বাগত জানাই। কিন্তু দল বললে তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবব।’’ আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের নেত্রী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সেনাপতি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি বলেন তখন আমার কেন্দ্রে কী করা যায় ভেবে দেখব।’’ বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়েরও বক্তব্য, ‘‘ডায়মন্ড হারবার মডেল সফল হলে দল যদি বলে, তখন নিশ্চয়ই তা বাস্তবায়িত করা যাবে।’’

বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল, হাওড়া সদরের প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, জঙ্গিপুরের খলিলুর রহমান, উলুবেড়িয়ার শাজদা আহমেদকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ফোন তোলেননি। জবাব দেননি মোবাইলে পাঠানো বার্তারও। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন সাংসদ আবার প্রতিক্রিয়া জানাতেও রাজি হননি।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় তৃণমূলের প্রতীকে ২২ জন জিতেছিলেন। তার পর কাঁথি ও তমলুকের সাংসদ শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছে়ড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর আসানসোলের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তার পর উপনির্বাচনে বিজেপির থেকে আসন ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার অভিষেক যা বলেছিলেন, তার মর্মবস্তু ছিল এই যে, সাংসদেরা তাঁদের নিজের কেন্দ্রের মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। কোভিডের সময়ের কথা মনে করিয়ে দিয়ে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ২২ শতাংশ সংক্রমণের হারকে ১০ দিনে দুই শতাংশে নামিয়ে এনেছিলাম। এক দিনে ৫০ হাজার টেস্ট করিয়েছিলাম। সারা ভারতে কেউ পেরেছে? বাংলা তো ছেড়ে দিন!’’ সেই সূত্রেই অভিষেক তাঁর লোকসভা কেন্দ্র এলাকায় বার্ধক্যভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তবে তৃণমূলের সাংসদদের মধ্যে দলের ‘সেনাপতি’ ওই বিষয়ে একেবারেই একমেবাদ্বিতীয়ম। অভিষেক যে মডেলের কথা তুলে ধরে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছিলেন, ‘বাস্তব পরিস্থিতি’র কথা বলে তৃণমূলের অনেকেই বলছেন তা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেউ কেউ আবার আনুষ্ঠানিক দলীয় নির্দেশিকার দিকে তাকিয়ে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy