Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
অভিযোগ অস্বীকার তৃণমূল সাংসদের

ঘুরপথে বিদেশে লগ্নি, ইডি-র নজরে কেডি

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে এমনিতেই জেরবার তৃণমূল নেতৃত্ব। তার মধ্যেই অন্য একটি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে গেল দলের আরও এক রাজ্যসভা সাংসদ, কে ডি সিংহের নাম। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩২
Share: Save:

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে এমনিতেই জেরবার তৃণমূল নেতৃত্ব। তার মধ্যেই অন্য একটি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে গেল দলের আরও এক রাজ্যসভা সাংসদ, কে ডি সিংহের নাম। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ। সারদা ধাঁচের একাধিক লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারিতেও নাম জড়িয়েছে রাজ্যের শাসক দলের কয়েক জন নেতার। তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংহের লগ্নিসংস্থা অ্যালকেমিস্টের বিরুদ্ধেও রয়েছে নিয়ম না মেনে রাজ্যের সাধারণ মানুষের থেকে টাকা তোলার অভিযোগ। তবে এই আর্থিক কেলেঙ্কারিটির সঙ্গে কোনও চিট ফান্ড বা বেআইনি ভুয়ো লগ্নি সংস্থার সম্পর্ক নেই। গোয়েন্দাদের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে অন্য ভাবে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই কে ডি সিংহকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।

কী ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে?

সূত্রের খবর, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রকের অধীন ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) কাছ থেকে একটি রিপোর্ট এসেছে ইডি-র হাতে। দিল্লিতে ইডি-র সদর দফতরে সেই রিপোর্ট খোলার পরেই চোখ কপালে উঠেছে গোয়েন্দাদের। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের অস্টিন ফিউচার্স নামের একটি সংস্থার সঙ্গে চিনের একটি বিমা সংস্থার বিপুল আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে ওই রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়েছে অস্টিন ফিউচার্স সংস্থাটি এএক্সএ চায়না রিজিয়ন ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে ৩০ মিলিয়ন ডলার লগ্নি করেছে। ইনভেস্টমেন্ট-লিঙ্কড পলিসি কেনার মাধ্যমে এই লগ্নি করা হয়েছে। ভারতীয় অর্থে এই লগ্নির মূল্য প্রায় ১৮০ কোটি টাকা।

এ পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড হল কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংস্থাগুলি ওই দ্বীপ রাষ্ট্রে সংস্থা তৈরি করে অন্যত্র বিনিয়োগ করে। যাতে নিজের দেশে কর ফাঁকি দেওয়া যায়। সেই সূত্রেই ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের একটি সংস্থা কেন হঠাৎ চিনের সংস্থার থেকে বিমা কিনতে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়। তখনই জানা যায়, এই লেনদেনের মাধ্যমে আসলে লাভবান হচ্ছেন একজন ভারতীয়। যাঁর নাম কে ডি সিংহ। ইডি সূত্রের দাবি, এই অস্টিন ফিউচার্স নামের সংস্থার পিছনে আসলে কে ডি সিংহের মালিকানাধীন একটি ট্রাস্ট রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, ওই ট্রাস্টের অর্থই ঘুরপথে অস্টিন ফিউচার্সের মাধ্যমে চিনের সংস্থায় লগ্নি করা হয়েছে। মূলত কর ফাঁকি দিতে বা কালো টাকা সাদা করার জন্যই এই ধরনের আর্থিক লেনদেন করা হয়ে থাকে বলে ইডি-কর্তাদের বক্তব্য।

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই গোটা বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে। বিপুল অঙ্কের এই আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি ও আয়কর দফতরের কাছে কোনও তথ্য রয়েছে কি না, তা-ও জানতে চেয়েছে ইডি। এ বিষয়ে কে ডি সিংহকেও খুব শীঘ্রই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ইডি সূত্রের বক্তব্য। বিষয়টি নিয়ে আজ কে ডি সিংহের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “আমরা খবরের চ্যানেলগুলোতে শুনেছি যে, তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংহের বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত চালাবে বলে ঠিক করেছে। আমরা ইডি-র কাছ থেকে কোনও প্রশ্ন পাইনি। তাই আমরা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করার অবস্থায় নেই। কারণ, কেন এই তদন্ত চালানো হবে, সেটা আমরা জানি না। তবে খবরের চ্যানেলগুলোতে যা বলছে, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ করছি। সংবাদমাধ্যমে যে ট্রাস্টের কথা বলা হচ্ছে, কে ডি সিংহের তেমন কোনও ট্রাস্টের মালিকানা নেই। আমরা বিদেশে কখনও কোনও বেআইনি লগ্নি করিনি। সত্য যাতে উদ্ঘাটিত হয়, সে জন্য আমরা যে কোনও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কে ডি সিংহের রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট করতে এবং তৃণমূলের ভাবমূর্তিকে আঘাত করতেই এ সব মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে।”

আরও একটি আর্থিক কেলেঙ্কারি, এবং তাতে তৃণমূলের আরও এক সাংসদের নাম জড়িয়ে যাওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই আজ বিরোধীরা একযোগে আক্রমণ করেছে রাজ্যের শাসক দলকে। সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বা বিজেপির তথাগত রায়েদের অভিযোগ, বেছে বেছে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদেরই দলের মন্ত্রী বা সাংসদ করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেতারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, সত্যিই কে ডি-র নাম আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গেলে দলের অস্বস্তি আরও বাড়বে।

এর আগে নির্বাচনের সময় বেহিসেবি নগদ টাকা সঙ্গে নিয়ে ঘোরার অভিযোগ উঠেছিল কে ডি সিংহের বিরুদ্ধে। সারদা কেলেঙ্কারির টাকা এই তৃণমূল সাংসদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে বলেও বিরোধীরা একাধিক বার অভিযোগ করেছেন। যদিও সেই সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে কে ডি সিংহের তরফে। এই তৃণমূল সাংসদের বিভিন্ন দফতরে আয়কর বিভাগও তল্লাশি চালিয়েছে। একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ডিসেম্বরে অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীর সংস্থা অ্যালকেমিস্ট ক্যাপিটালকে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে নিষেধ করেছে সেবি। সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন ডিরেক্টর, যাঁদের মধ্যে কে ডি সিংহ নিজেও রয়েছেন, তাঁদের শেয়ার বাজারে লেনদেনের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কে ডি অবশ্য এখন অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীর কার্যকরী পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি এখন সংস্থার চেয়ারম্যান এমেরিটাস হিসেবে রয়েছেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE