Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
TMC MLA Asit Majumder

বীরভূমের শতাব্দী মডেলে হুগলিতে দুয়ারে বিধায়ক, উদ্দেশ্য: বিধানসভার আগে ক্ষোভের বাষ্প বার করা

গত লোকসভা ভোটে হুগলিতে তিন বিধানসভা কেন্দ্র— চুঁচুড়া, বলাগড় এবং সপ্তগ্রামে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। সেখানে খারাপ ফলের কারণ অনুসন্ধানেই ‘দুয়ারে বিধায়ক’ কর্মসূচি শুরু হয়েছে হুগলিতে।

শতাব্দী রায়ের মতোই এলাকায় গিয়ে ক্ষোভের মুখে অসিত মজুমদার।

শতাব্দী রায়ের মতোই এলাকায় গিয়ে ক্ষোভের মুখে অসিত মজুমদার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৪
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল হয়েছিল। এক বছর পরের লোকসভা ভোটেও তার ব্যত্যয় হয়নি। তৃণমূল নেতাদের অনেকেই একান্ত আলোচনায় মেনে নেন, বীরভূমে দলের ভাল ফলের নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল শতাব্দী রায়ের। তাঁদের মতে, জেলা জুড়ে যে ‘গণক্ষোভ’ ছিল, তার অনেকটাই প্রশমিত হয়েছিল বীরভূমের সাংসদের জন্য। দল এবং জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ যাতে বাষ্প হয়ে বেরিয়ে আসে, শতাব্দীই তার মাধ্যম হয়ে উঠেছিলেন। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সেই ‘শতাব্দী মডেলেই’ হুগলিতে ‘দুয়ারে বিধায়ক’ কর্মসূচি শুরু করল তৃণমূল। সুফল মিলবে কি না, তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে শাসক-বিধায়ককে ঘিরে যে ভাবে ‘গণক্ষোভ’ প্রকাশ্যে এল, ‘শতাব্দী মডেলের’ সঙ্গে তার মিল রয়েছে বলেই মনে করছেন জেলার অনেকে।

গত লোকসভা ভোটে হুগলিতে বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে সাংসদ হয়েছেন তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বিধানসভা ধরে ধরে ভোট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তিন কেন্দ্র— চুঁচুড়া, বলাগড় এবং সপ্তগ্রামে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। শুধু চুঁচুড়াতেই বিজেপির কাছে প্রায় সাড়ে আট হাজার ভোটে হেরেছে দল। কেন ফল খারাপ হল? এত সরকারি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও কেন ভোটাররা মুখ ফেরালেন? সেই সব কারণ অনুসন্ধানে দুয়ারে দুয়ারে যাওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে শাসকদল। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরাসরি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাবেন বিধায়কেরা। শুনবেন, মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা।

সেই মতোই বুধবার ‘দুয়ারে বিধায়ক’ কর্মসূচিতে বেরিয়েছিলেন চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার। জনসংযোগে বেরিয়েই বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতের দেবীপুর ইটখোলা গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন বিধায়ক। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তাঁকে শুনতে হয়, ‘‘এলাকায় কোনও কাজ হয়নি। প্রধান এবং পঞ্চায়েতের সদস্যেরা কোনও কাজ করেন না।’’ রাস্তা, নর্দমা, নিকাশি, আলো, আবাসের চাহিদা পূরণ হয়নি বলেও বিধায়কের কাছে ক্ষোভ উগরে দেন অনেকে। শুধু ভোট এলে তবেই অসিতকে এলাকায় আসতে দেখা যায় বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। প্রসঙ্গত, কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতেই প্রায় চার হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। বিধায়ক অবশ্য স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেছেন। বাকি থাকা কাজ শীঘ্র করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অসিত বলেন, ‘‘মানুষের ক্ষোভ স্বাভাবিক। কাজ হয়নি, তাই মানুষ ভোট দেননি। তবে যে যে কাজ, সেগুলি করার চেষ্টা করা হবে।’’

গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে ২০২২ সালে তৃণমূলে ‘দিদির দূত’ কর্মসূচি গৃহীত হওয়ার পর থেকেই নানা জায়গায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে দেখা গিয়েছিল দলের সাংসদ-বিধায়ক এবং স্থানীয় নেতাদের। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভের খবর প্রকাশ্যে আসত বীরভূম থেকে। তত দিনে গরু পাচার মামলায় গ্রেফতারও হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। ঘটনাচক্রে, তার পর থেকেই গণক্ষোভ বেরিয়ে আসছিল। সেই সময় প্রায় রোজই বিক্ষোভের মুখে পড়তে দেখা যেত ‘দিদির দূত’ শতাব্দীকে। মূলত জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় দেখতে না-পাওয়া নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিতেন স্থানীয়েরা। কিন্তু কখনওই বিক্ষোভে পিছু হটতে দেখা যায়নি শতাব্দীকে। তিনি মানুষের ক্ষোভের কথা শুনতেন। প্রতিশ্রুতি পূরণের আশ্বাস দিয়ে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টাও করতেন। পরে সেই বীরভূমে পঞ্চায়েতের তিন স্তরের ভোটেই বাজিমাত করে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে শতাব্দী নিজেও জিতেইছেন। বোলপুর আসনটিও জিতেছে শাসকদল।

তৃণমূল সূত্রে খবর, বিধানসভা ভোটের আগেও এ বার সেই পথ হাঁটতে চাইছে দল। গত লোকসভা ভোটে যে যে এলাকায় দলের ফল খারাপ হয়েছে, সেই এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। শাসকদলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘শতাব্দী রায়ের দেখানো মডেলে দারুণ সুফল মিলেছিল বীরভূমে। সেই মডেল ঠিকঠাক কার্যকর করতে পারলে সর্বত্র সুফল মিলতে পারে। মনে রাখা জরুরি, শতাব্দীও শুরুর দিকে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়তেন। ধীরে ধীরে কিন্তু বিক্ষোভের তীব্রতা কমেছে। এমনকি, বিক্ষোভের মুখে পড়ার পরেও শতাব্দীকে নামে জয়ধ্বনি ওঠার ঘটনা ঘটেছে। শতাব্দী মেজাজ ঠান্ডা রেখেই সবটা সামাল দিতেন।’’

অসিত কিন্তু মেজাজ হারিয়েছেন প্রথম দিনেই! তবে বিক্ষোভের মুখে পড়ে নয়। স্থানীয়দের অভাব-অভিযোগ শুনে তার ‘প্রতিকার’ করতে গিয়ে। দেবীপুরে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সময় এলাকার একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও গিয়েছিলেন বিধায়ক। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এক শিশু দেরি করে স্কুলে আসায় তাকে খাবার দেওয়া হয়নি। শুধু তা-ই নয়, তার পর আর সেই শিশু স্কুলেই যেতে পারেনি। ওই অভিযোগ শোনার পরেই অঙ্গনওয়াড়ির শিক্ষিকা স্বর্ণ মুখোপাধ্যায়কে বকাঝকা করতে দেখা যায় বিধায়ককে। স্থানীয়দের দাবি, ওই দিদিমণি নিজেই দেরি করে স্কুলে আসেন। এ সব শোনার পরেই বিধায়ক তাঁকে বলেন, ‘‘আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’’

পরে অবশ্য বিষয়টির মিটমাট হয়। ওই শিক্ষিকার সামনে হাতজোড়ও করেন বিধায়ক। অনুরোধ করেন, সাধারণ মানুষ যাতে ভবিষ্যতে অভিযোগ করার সুযোগ না পান। ওই শিক্ষিকাকেও বলতে শোনা যায়, ‘‘বিধায়ক অভিভাবকের মতো। ভুল হলে বকবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Asit Mazumder Satabdi Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy