গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
রাত পোহালেই পাল্টা সভা। যে মাঠে জনসভা করে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, মেদিনীপুরের সেই কলেজ গ্রাউন্ডেই এ বার জনসভা তৃণমূলের। মোদীকে জবাব দিতে মমতা নিজে যাচ্ছেন না। তবে, মেদিনীপুরে পাঠাচ্ছেন দলের একেবারে সামনের সারিতে থাকা পাঁচ মুখকে— অভিষেক, শুভেন্দু, পার্থ, সুব্রত, ববি। শনিবারের এই জনসভায় তৃণমূল ঠিক কতটা ভিড় টানতে চাইছে, শুক্রবার থেকেই তার আঁচ মিলতে শুরু করেছে। একুশে জুলাইয়ের কয়েক দিন আগে থেকে যে ভাবে কলকাতায় জমায়েত হচ্ছিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা, মেদিনীপুর ঘিরেও সে ভাবেই জমায়েত শুরু হয়ে গিয়েছে সভার আগের দিন থেকেই। জানাচ্ছে জেলা তৃণমূলই।
সভা কলকাতায় নয়, তৃণমূলের কোনও কেন্দ্রীয় সমাবেশ নয়। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত থাকছেন না জনসভায়। নরেন্দ্র মোদী মেদিনীপুরে সভা করে যে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল এবং মমতার বিরুদ্ধে, তার জবাব দেবেন দলের অন্য নেতারা। মেদিনীপুর কলেজ গ্রাউন্ডকে বেছে নেওয়া হয়েছে প্রতিস্পর্ধা দেখাতে। সুতরাং জমায়েতেও যে বিজেপিকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা তৃণমূল করবে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু তা বলে এই রকম আয়োজন! শনিবার জনসভা হবে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেদিনীপুর শহরকে ঘিরে একাধিক ক্যাম্প খুলে দেওয়া হল। সভায় যোগ দিতে আসার কর্মী-সমর্থকদের জন্য প্রায় ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করল রাজ্যের শাসক দল।
কোন কোন এলাকায় তৈরি হয়েছে ক্যাম্প? পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি জানালেন— ৪০-৪৫টা জায়গায় ক্যাম্প হয়েছে। মোহনপুর, ধর্মা, কেরানিচটি, রাঙামাটি— বিভিন্ন দিক থেকে মেদিনীপুর শহরে ঢোকার জন্য যতগুলি গুরুত্বপূর্ণ মোড় রয়েছে, সেই সব ক’টির আশেপাশেই ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। কবে থেকে খুলেছে ক্যাম্পগুলো? জেলা সভাপতি বললেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই খুলে গিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার কেউ থাকেননি। শুধু খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে অনেকেই থাকবেন ক্যাম্পগুলোয়। খাওয়াদাওয়াও সেখানেই হবে।’’
মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে ধর্মা এলাকায় কর্মী সমর্থকদের রাখার জন্য তৃণমূলের ক্যাম্প। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কোনও জনসভাকে কেন্দ্র করে আগে কখনও এমন আয়োজন হয়েছে কি না, স্থানীয় বাসিন্দারা তা মনে করতে পারছেন না। জনসভার ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে সমর্থকদের মেদিনীপুরে এনে রাখতে হচ্ছে কেন, সে প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিক ভাবেই। তা হলে কি বিজেপিকে ভিড়ে টেক্কা দেওয়ার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোক আনতে হচ্ছে? অজিত মাইতি হেসে উঁড়িয়ে দিলেন প্রশ্নটা। বললেন, ‘‘বাইরে থেকে লোকজন বিজেপিকে আনতে হয়। আমাদের ও সবের দরকার পড়ে না।’’ তিনি বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর সভা ভরানোর জন্য তিন রাজ্যের লোক আনা হয়েছিল। এ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে বিজেপি কর্মীদের আনা হয়েছিল, ঝাড়খণ্ড থেকে আনা হয়েছিল, ওড়িশা থেকে আনা হয়েছিল। আমরা শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কর্মী-সমর্থকদের আসতে বলেছি। তাতেই দেখবেন ভিড়টা কোথায় পৌঁছয়।’’ জেলার বাইরে থেকে যদি লোকজন না আসেন, তা হলে আগের দিন থেকে এসে ক্যাম্পে থাকতে হচ্ছে কেন? জেলা তৃণমূলের সভাপতি বললেন, ‘‘তা হলে বুঝে দেখুন, আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ-উদ্দীপনা কোথায় পৌঁছেছে। নরেন্দ্র মোদী যে সব কথা বলে গিয়েছেন, তার জবাব দিতে গোটা দল টগবগ করে ফুটছে। রোজ কর্মী-সমর্থকরা দলে দলে আসছেন সভাস্থলের প্রস্তুতি দেখতে। আবার ফিরেও যাচ্ছেন। তাঁরা সবাই শনিবারের সভায় থাকবেন। যাঁরা যাওয়া-আসা করছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁদের জন্যই খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল।’’
আরও পড়ুন: নদিয়ার নেতাদের নিয়ে বসছেন মমতা
কিন্তু সভার দিন দুয়েক আগে থেকে কর্মী-সমর্থকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, এমনটা কি জানা ছিল জেলা নেতৃত্বের? এই বিপুল আয়োজনের জন্য খরচও তো প্রচুর। অজিত মাইতি জানালেন, দলকে সে ভাবে খরচ করতে হচ্ছে না। যে সব এলাকায় ক্যাম্পগুলি হয়েছেন, সেখানে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরাই চিঁড়ে-মুড়ি বা চাল-ডাল-আনাজ দিচ্ছেন। রান্নাও তাঁরাই করছেন।
আরও পড়ুন: দিলীপকে গরু-খোঁচা মমতার
আগের রাত থেকে মেদিনীপুর ঘিরে জমায়েত করার যে পরিকল্পনা তৃণমূল নিয়েছে, তাতে শনিবারের সভায় নজরকাড়া ভিড় হতে পারে। তবে রাজ্য বিজেপি বলছে, তৃণমূল আতঙ্কিত, তাই এত তৎপরতা দেখাচ্ছে। কিসের আতঙ্ক? রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বললেন, ‘‘পুরুলিয়ায় অমিত শাহের সভার পাল্টা সভা করেছিল তৃণমূল। এক-তৃতীয়াংশ লোক জমাতে পারেনি। মেদিনীপুরেও একই হাল হবে না তো? এটা ভেবেই ভয় পাচ্ছে। সেই কারণেই এত ক্যাম্প, এত তোড়জোড়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy