Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
TMC

সুদীপ: হাতি চলে বাজার…, তাপস: আমরা দলের সাদা হাতি নই গ্রে-হাউন্ড, শত্রু দেখলে তেড়ে যাই

মঙ্গলবার শুরু হয় তাপসের আক্রমণ। প্রথমে চুপ থাকলেও পরে মুখ খোলেন সুদীপও। আর শুক্রবার নতুন করে ব্যক্তিগত আক্রমণে নামলেন তাপস। তবে মমতা যে তাপসের সরব হওয়া সমর্থন করছেন না তা-ও স্পষ্ট।

সুদীপ-তাপস লড়াই নতুন মাত্রা পেল শুক্রবার।

সুদীপ-তাপস লড়াই নতুন মাত্রা পেল শুক্রবার। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২২ ১৫:২৫
Share: Save:

বিজেপি নেতা তমোঘ্ন ঘোষের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’র অভিযোগ তোলায় তাপস রায়কে কটাক্ষ করে নিজেকে হাতির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তার জবাবে সুদীপকে ‘সাদা হাতি’ আখ্যা দিয়ে নিজেকে ‘গ্রে-হাউন্ড’ বলে দাবি করলেন তাপস।

গত চার দিন ধরে সুদীপ-তাপস বিতর্ক অস্বস্তি তৈরি করেছে শাসক শিবিরে। দলের সাংসদ সুদীপের বিরুদ্ধে বিধায়ক তাপস মুখ খোলার পর থেকেই রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে যায়। সুদীপ প্রথমে চুপ ছিলেন। পরে আনন্দবাজার অনলাইনকে বার্তা পাঠিয়ে সুদীপ জানান, ‘হাতি চলে বাজার... কী একটা কথা আছে না? নো কমেন্টস।’ সে কথা প্রকাশ্যে বলেও দেন বৃহস্পতিবার। তার ঠিক আগেই তাপস বলেছিলেন, ‘‘এই সখ্য, এই সম্পর্ক, যাওয়া-আসা, পুজো, সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো শুরু হয়, দলের কর্মীরাও যদি ওঠাবসা শুরু করে, তবে দল কি সেটা ভাল চোখে দেখবে? সেই পরিস্থিতি কি আমরা সামাল দিতে পারব? দলীয় সহকর্মীদের যেন অসম্মান, অপমান করার চেষ্টা না হয়।’’ সুদীপের নাম না করলেও তাপস প্রশ্ন করেন, ‘‘অন্য কেউ এমনটা করলে তিনি কোন চোখে দেখতেন?’’ নিজের পুরনো বক্তব্যে অনড় থাকার কথা বুঝিয়ে তৃণমূলের প্রথম সারির ওই বিধায়ক আরও বলেন, ‘‘শব্দ ব্রহ্ম! সে কী করে ফেরত নেব? বলে দিয়েছি যা বলে দিয়েছি।’’

প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন তমোঘ্ন ঘোষ। তৃণমূলে থাকার সময় সুদীপের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন তমোঘ্ন। সেই তমোঘ্নের বাড়ির পুজোয় সুদীপের উপস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে প্রশ্ন তোলেন তাপস। তিনি ইঙ্গিত করেন, সুদীপের কথাতেই তমোঘ্নকে উত্তর কলকাতা বিজেপির সভাপতি করা হয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, ‘‘দলনেত্রী (মমতা)-র ভাবমূর্তিকে ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার পাশাপাশি বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন সুদীপ।’’

মঙ্গলবার শুরু করা তোপের তেজ শুক্রবার আরও বাড়ালেন তাপস। সুদীপের ‘হাতি চলে বাজার...’ মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি ‘এবিপি আনন্দ’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-ফন্দ্যোপাধ্যায়দের কথার উত্তর দেওয়ার জায়গায় নেই। আমিও ৫ বারের বিধায়ক, দশ বারের কাউন্সিলর। আমিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য।’’ এর পরেই তিনি সুদীপের নাম না করে আক্রমণ শানান। তাপস বলেন, ‘‘আমি কালিমালিপ্ত নই, আমি দুর্নীতিগ্রস্ত নই, আমি হেফাজতে থাকা লোক নই।’’ সুদীপ বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘‘হাতি চলে বাজার, কুত্তা ভোকে হাজার।’’ সেই প্রসঙ্গে তাপস দাবি করেন, ‘‘আমরা দলের ডোবারম্যান, আমরা দলের গ্রে-হাউন্ড, গ্রেট-ডেন। সতর্ক করি, শত্রু দেখলে তেড়ে যাই। কিন্তু আমরা সাদা হাতি নই, অনুৎপাদক নই। আমরা নরেন্দ্র মোদীজি, অমিত শাহজি, ওম বিড়লার কাছে গিয়ে শুঁড় নাচিয়ে বন্দনা, ভজনা করি না।’’

প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছ থেকে কোট উপহার নেওয়া এবং পাল্টা কোটের কাপড় দেওয়ার অভিযোগও তাপস তুলেছেন সুদীপের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আড়াই বছর ধরে তিনি সংসদের ভিতরে বিজেপির বিরুদ্ধে নীরব কেন?’’ কলকাতা উত্তরের জেলা সভাপতি সুদীপ বয়সে বড় হলেও তাঁর উত্তরসূরি বলেও দাবি করেন প্রাক্তন জেলা সভাপতি তাপস। একই সঙ্গে তিনি সুদীপের বিরুদ্ধে কোনও দিন কোনও আন্দোলনে যুক্ত না থাকার অভিযোগ তোলেন। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘উনি কোনও দিন সংগঠন করেছেন? কোনও আন্দোলন থেকে উঠে এসেছেন? পরাশ্রয়ী। একে, ওকে, তাকে ধরে রাজনীতিতে টিকে থাকেন।’’

সুদীপ-তাপস লড়াই নিয়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের মধ্যে ভাগ দেখা গিয়েছে। তাপসকে বোঝাতে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ তাঁর বাড়িতে গিয়েছেন। তাপসকে সমর্থন করে প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় জানিয়েছেন অন্য দল করেন বলে তিনি নিজের দাদা তথাগত রায়ের বাড়িতেও যান না। অন্য দিকে, তাপসের সমালোচনা করেছেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র। তবে দলনেত্রী মমতা যে তাপসের সরব হওয়াকে পছন্দ করছেন না সেটা মুখে না হলেও আচরণে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবারই ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে বক্তা হিসাবে দেখা গিয়েছে সুদীপকে। তাঁর স্ত্রী তথা চৌরঙ্গীর বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়কে মমতার একেবারে কাছে দেখা গিয়েছে। মমতা নয়নার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহ দেখান প্রকাশ্যে। যা দেখার পরে এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘দিদি মুখে কিছু বলেননি ঠিকই, কিন্তু তাঁর ভাবভঙ্গিতে সব স্পষ্ট। যে যা বোঝার, ঠিকই বুঝে নেবেন!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy