অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
করোনা পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মসূচি স্থগিত রাখার অভিমত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছিলেন শনিবার। কিন্তু বাহাত্তর ঘণ্টা পার করে মঙ্গলবার পর্যন্ত দলীয় ভাবে তা নিয়ে একটি কথাও বলল না তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন ও জল্পনা চলছেই।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক তাঁর নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের জন্য ওই পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। এবং বলেছেন, এটি তাঁর ব্যক্তিগত মত। তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কয়েকজন ইতিমধ্যেই অভিষেকের মতকে মান্যতা দিয়েছেন। কিন্তু সরকারি ভাবে তা তৃণমূলের দলীয় সিদ্ধান্ত বলা যাবে না। বরং রাজ্য প্রশাসন এখনও পর্যন্ত পুরসভাগুলির নির্বাচন এবং গঙ্গাসাগর মেলা, দুইয়ের ক্ষেত্রেই ‘কোভিড সতর্কতা’ এবং আদালতের নির্দেশ মেনে এগনোর কথা জানিয়েছে। যার অর্থ রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কর্মসূচিতে দল পুরোপুরি লাগাম পরাতে চাইছে না।
যাঁরা তৃণমূলের উচ্চপদাধিকারী তাঁদের অনেকেই আবার রাজ্যের মন্ত্রীও বটে। ফলে তাঁদের সকলের বক্তব্য, সরকার যা বলছে এবং করছে তাঁরা তার সঙ্গে সহমত। দলের আর এক শীর্ষনেতার বক্তব্য, ‘‘সাধারণত এই ধরনের কোনও নীতিগত অবস্থান নিতে গেলে তা আগে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাতে হয়। তাঁর অনুমোদন এক্ষেত্রে আবশ্যিক। বিশেষ করে সামগ্রিক ভাবে রাজ্য সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হলে তা আরও জরুরি। কারণ আমরা শাসকদল এবং মমতা মুখ্যমন্ত্রী।’’
তা হলে কি এ নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে মমতার আগে কোনও কথা হয়নি? দলের এক নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘প্রথমত, অভিষেক নিজেই বলেছেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত। দ্বিতীয়ত, তাঁর এই বক্তব্যে ইঙ্গিত শুধু এখানকার পুরভোট বা গঙ্গাসাগর মেলা বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে কেন?এ তো উত্তরপ্রদেশ সহ অন্য পাঁচ রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনের দিকেও আঙুল তুলেছে। সে কথা তো কেউ বলছেন না।’’
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক যদি নীতিগত কোনও অবস্থান নেন, তা হলে সেটা কি নিছক ‘ব্যক্তিগত’ বলে ধরে নেওয়া যায়? নিজের এলাকা ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের ওই পদক্ষেপ কিন্তু সেই প্রশ্নও তুলে দিচ্ছে। আর তাঁর এই অভিমত শুধু তাঁর নিজের দলের একাংশের মধ্যে নয়, প্রশংসা পাচ্ছে সমাজের অন্য স্তরেও। যেমন চিকিৎসকমহল সহ নাগরিক সমাজের সাধুবাদও পেয়েছেন তিনি।
অভিষেকের সঙ্গে সহমত হয়েছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ সৌগত রায় এবং সুখেন্দুশেখর রায়। তবে সৌগতবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘পুরভোট এবং গঙ্গাসাগর মেলার প্রস্তুতি আগেই শুরু হয়েছিল। ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতিতে কিছু করতে হলে অভিষেকের মত মাথায় রেখে কাজ করা উচিত।’’
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা দলের প্রথম সারির নেতা ফিরহাদ হাকিম অবশ্য সরকারের অবস্থানের পক্ষেই মত দিয়েছেন। দু’জনেরই বক্তব্য, সরকার আদালতে বা বাইরে যা বলেছে এবং করছে, মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে তাঁরা সেই মতের শরিক। একই ভাবে
তাঁদের সংযোজন, ‘সরকার বা দলের নেতৃত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই রয়েছেন। ফলে তিনি যা করছেন, তা সব কিছু বিবেচনা করেই করছেন।’ রাজ্যের আর এক মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য, ‘‘অভিষেক বলেছেন এ তাঁর ব্যক্তিগত মত। সব বিষয়েই আমাকে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, তার কোনও মানে নেই।’’
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘পুরভোট বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েকটি জায়গায় হবে। গঙ্গাসাগর মেলার জন্য হাই কোর্ট নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। সরকার সে সব মেনেই নিজের ভূমিকা পালন করবে।’’ ওই কর্তার আরও সংযোজন, ‘‘যে সব রাজ্য থেকে তীর্থযাত্রী আসছেন, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি সেই বাস আসতে দিচ্ছে কেন? কেন আটকে দিচ্ছে না? জনস্রোত এখানে পাঠিয়ে দিয়ে সব কিছুর দায় বাংলার উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে কেন?’’
মঙ্গলবারও অভিষেকের মতামতের বিষয়ে তাঁকে উদ্দেশ করে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। এই প্রসঙ্গে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই ঘোষণার পরেও খেলা, মেলা চলছে। এটা মুখরক্ষার জন্য বলা না কি ভাবমূর্তি তৈরি করার জন্য, জানি না। ডায়মন্ড হারবারে এমপি কাপ হয়েছিল। তাঁর (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের) পাশে যাঁরা বসেছিলেন, তাঁদের কয়েক জন সংক্রমিত হয়েছেন। ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও সংক্রমিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy