মুণ্ডমারিতে তৃণমূলের সভায় বক্তব্য রাখছেন দীনেন রায়। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
বিস্ফোরণের পরদিনই ব্রাহ্মণবাড়ে গিয়ে গ্রামবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি। তারপর থেকে বিস্ফোরণের গ্রামে পা পড়েনি শাসক দলের কোনও শীর্ষস্তরীয় নেতার। এ বার ব্রাহ্মণবাড়ের তিন কিলোমিটার দূরে পিংলার মুণ্ডমারিতে সভা করে বিস্ফোরণ নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ করল শাসক দল।
শনিবার বিকেলে মুণ্ডমারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে তৃণমূলের এক সভা হয়। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত ঘোষ, অজিত মাইতি, নির্মল ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী, স্থানীয় নেতা তথা জেলা কমিটির সদস্য গৌতম জানা প্রমুখ। সভায় পিংলা থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের সদস্য অজিত মাইতি বলেন, “বিস্ফোরণে মৃত্যু দুঃখজনক। এই ঘটনায় পুলিশ, সিবিআই, সিআইডি বা এনআইএ, যে কেউ তদন্ত করতে পারে। আমরা স্বাগত জানাব। তবে এই বিস্ফোরণ নিয়ে দলের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে তার প্রতিবাদ হবেই।”
বিস্ফোরণের ঘটনায় বিরোধীদের দুষে এ দিন দীনেনবাবু বলেন, ‘‘ওই দিন রাতে বিস্ফোরণে পরে গ্রামবাসীদের একাংশ গাছ কেটে রাস্তা আটকে দমকলকে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল। পুলিশকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাদের লোকেরা গেলেও তাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাধা দেওয়া হয়েছিল উদ্ধার কাজেও। ছটফট করতে করতে মানুষ মারা গিয়েছে। এর পিছনে বিরোধী দলের জেলা ও রাজ্যের নেতাদের উস্কানি রয়েছে। যাঁরা মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করল তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করতে হবে।”
ব্রাহ্মণবাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিস্ফোরণে নিহত কারখানার মালিক রামপদ মাইতিকে সামনে রেখে বকলমে কারখানা চালাতেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা রঞ্জন মাইতি। যদিও প্রথম থেকেই রঞ্জন মাইতির সঙ্গে দলের যোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল। এ দিনের সভা থেকে তৃণমূলের একই রকম মরিয়া চেষ্টা দেখা গেল। নির্মল ঘোষ বলেন, “কে বলেছে রঞ্জন মাইতি আমাদের লোক? বাড়ির দেওয়ালে আমাদের দলের দু’টি পোস্টার থাকলেই কেউ তৃণমূলের লোক হয়ে যায় না।” তৃণমূলের দাবি, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের হওয়ায় বিরোধী দলের সঙ্গেই রঞ্জন মাইতির যোগ রয়েছে।
গত ৬ মে রাতে ব্রাহ্মণবাড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু হয়। জখম হন চার জন। শুক্রবার কলকাতার বাঙুর হাসপাতালে শেখ জহিরুদ্দিন নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পরে দফায় দফায় বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা ব্রাহ্মণবাড়ে যান। এ দিন সভা থেকে বিরোধীদের আক্রমণ করে প্রদ্যোত ঘোষের কটাক্ষ, “আমাদের দ্রৌপদী (রূপা গঙ্গোপাধ্যায়) নেই, চৌধুরীও (অধীর চৌধুরী) নেই বা মিশ্রবাবুও (সূর্যকান্ত মিশ্র) নেই। কারণ ওদের কথার জবাব দিতে আমাদের শীর্ষ নেতার দরকার হয় না। এ জন্য গৌতম জানাই যথেষ্ট।” এ দিন নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘণ্টা পরে তৃণমূলের সভা শুরু হয়। প্রথমে সভাস্থলে প্রায় হাজার দেড়েক লোক থাকলেও আধ ঘণ্টা পর থেকেই ভিড় ক্রমে কমতে শুরু করে। সভার শেষ দিকে দীনেনবাবুর বক্তব্য রাখআর সময় মাঠ প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
বিস্ফোরণের ঘটনার পর গৌতম জানার সঙ্গে রঞ্জন মাইতির যোগাযোগ নিয়েও সরব হয় ব্রাহ্মণবাড়ের একাংশ বাসিন্দা। প্রশ্ন উঠছে, বিস্ফোরণের সঙ্গে দলের নাম জড়ানো সত্ত্বেও কেন এতদিন কোনও শাসক দলের নেতা ঘটনাস্থলে গেলেন না? প্রদ্যোতবাবু বলেন, ‘‘ব্রাহ্মণবাড়ে গেলেও কথা হত। যাইনি বলেও প্রশ্ন উঠছে। আমরা জল মাপছিলাম।” সভা থেকেই তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি গৌতম জানা হুঁশিয়ারি দেন, “কেউ যদি তারকা নিয়ে এসে পিংলা অশান্ত করার চেষ্টা করে তবে আমরাও হাত গুটিয়ে থাকব না। আমাদের ১৫ দিন সময় দিন। ওই গ্রামে একটিও লাল পতাকা থাকবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy