পড়ুয়ার দেখা নেই। রয়েছে পুলিশ। —ফাইল চিত্র।
রাজনৈতিক সন্ত্রাসের জেরে ক্রমশই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে পাড়ুই থানা এলাকার জনজীবন। শিক্ষা-স্বাস্থ্য, কৃষি প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমস্যার মুখে পড়ছেন এলাকার বাসিন্দারা। মুমূর্ষু রোগী, এলাকার পড়ুয়ারা যেমন সমস্যার মুখে পড়ছেন, বর্ষার শুরুতে বিপদে পড়েছেন দিন মজুর এবং এলাকার ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষিরা।
রাজ্যে পালা বদলের পর থেকে এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের কিছু আগেই অন্য জেলার মতো এই জেলাতেও শাসক দল তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। যত দিন গিয়েছে এলাকায় এলাকায় ওই গোষ্ঠী দ্বন্দ ক্রমশ বেড়েছে। কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকা এবং রাজ্যে সংগঠন বাড়ানোর উদ্যোগের জন্য জেলার একাধিক বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতা কর্মী এবং সমর্থকেরা দলে দলে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। আর স্বাভাবিক কারণে বিক্ষুব্ধদের দখলে থাকা পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে এলাকাগুলিতে ততই শক্তি সঞ্চয় করেছে বিজেপি। জেলার রাজনৈতিকমহলের দাবি, এতেই বেড়েছে এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ এবং হানাহানি। কার্যত গ্রাম দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে, বার বার তেতে ওঠে পাড়ুই থানা এলাকা।
স্থানীয় বিজেপি নেতা থেকে শুরু করে জেলা নেতা এবং রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য পর্যন্ত, এমন পরিস্থিতির জন্য শাসক দল তৃণমূলের পাশাপাশি দুষেছেন জেলা পুলিশের একাংশকে। এর সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশে দলীয় নেতা, কর্মী-সমর্থকদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, শাসক দলের অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করা, ধৃত বা অভিযুক্তদের অপেক্ষাকৃত লঘু ধারা এবং জামিনযোগ্য ধারা দেওয়া-সহ একাধিক অভিযোগে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়েই চলেছে এলাকায়। গত কয়েকদিনেও সেই ক্ষোভ তুঙ্গে।
গত কয়েক দিন ধরে এলাকার চারটি ব্লকের একাধিক পঞ্চায়েতের বহু গ্রামে বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা। সিউড়ি দু’ নম্বর ব্লকের বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের পলাশীতে সেই বিপর্যয়ের ছবি ধরা পড়ল। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত তিন দিন ধরে পড়ুয়া নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ নাসিরুদ্দিন বলেন, “স্কুল খোলা আছে। কিন্তু পড়ুয়ারা না এলে, আমরা কি করতে পারি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ুয়াদের অতীতে স্কুলে নিয়ে এসেছি, ঠিকই। কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতে, সাহস হল না। তাই নিজেই স্কুল খোলা রেখেছি।”
কেমন পরিস্থিতি গ্রামগুলির?
উভয় দলের কর্মী-সমর্থক বাসিন্দার জানাচ্ছেন, দিনে দুপুরে বাড়িতে ঢুকে লুঠপাট চলছে। নিত্য মুড়ি-মুড়কির মতো চলছে বোমাবাজি। গ্রামে ঢুকে পুরুষ মানুষের দেখা মেলে না বললেই চলে। গ্রামের মহিলারা এতটাই আতঙ্কিত, যে অচেনা মানুষ দেখলেই দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার, ঘর দুয়োর খুলে মাঠের দিকে ছুট দিচ্ছেন!
একই চিত্র লাগোয়া ইলামবাজার ব্লকের মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েতের গোলাপবাগ গ্রামে। গোলাপবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আকিল অহমেদ বলেন, “পড়ুয়ারা আসবে বলে সব কিছু ঠিক ঠাক ছিল। কিন্তু এলো না।” গোটা স্কুলে ভর্তি পুলিশ-কমব্যাট ও র্যাফ। বাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামে। শুক্রবার গভীর রাতে ওই গ্রামে বোমাবাজি এবং লুঠপাট হয়েছে একাধিক বাড়িতে। শনিবার বাড়তি গণ্ডগোলের আশঙ্কায় তাদের মোতয়েন করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাদ যায়নি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। কসবা-সাত্তোর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য ওই হাসপাতালের একাধিক পরিত্যক্ত ঘর মেরামত করে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার দেবজ্যোতি মণ্ডল বলেন, “আমরা স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার জন্য রয়েছি। এলাকায় ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্য পরিষেবা যাতে স্বাভাবিক থাকে তার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু রোগী নেই।”
এলাকায় শান্তি ফেরাতে তৃণমূলের পাড়ুই থানা কমিটির চেয়ারম্যান মুস্তাক হুসেন এবং বিজেপি-র জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা দু’জনেই প্রশাসনকে সহযোগিতার কথা বলেন। কিন্তু, বাস্তবে তার কোনও উদ্যোগ নজরে আসে না। উদ্যোগ নজরে পড়ে না জেলা পুলিশেরও।
কী বলছেন জেলা পুলিশসুপার?
মুকেশকুমার এ দিনও ফোন ধরেননি। এমনকী, এসএমএস-এরও উত্তর দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy