নির্ভয়ে: আতঙ্ক কাটলেও অনুতপ্ত গ্রামবাসী। ছবি: কিংশুক আইচ
এখনও অনুতাপ নেই যবতমল বা দুধওয়ার। তবে ঘটনার সাত মাস পর বাগঘোরা মানছে, বাঘ মেরে ভুল হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের রালেগাঁও জেলার যবতমলে গুলি করে মারা হয়েছিল বাঘিনি ‘অবনী’কে। এরপর উত্তরপ্রদেশের দুধওয়া ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রেও লাঠি দিয়ে মারা হয় আরেকটি বাঘিনিকে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ট্র্যাক্টরে পিষে ফেলা হয় তাকে। বাঘ খুনে যবতমল ও দুধওয়ারের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের চাঁদরার বাগঘোরা।
গত এপ্রিলে এই বাগঘোরার জঙ্গলেই একদল শিকারির ছোড়া বল্লমে লুটিয়ে পড়েছিল পথ ভুলে আসা রয়্যাল বেঙ্গল। সে দিনের ঘটনায় এখন আফশোস করে বাগঘোরা। প্রাথমিক স্কুলের পাশে লক্ষ্মী মাহাতোর একচালার ঘর। মঙ্গলবার, কালীপুজোর দিনের পড়ন্ত দুপুর। ঘরের সামনে বাঁধা গরুকে খড় খাওয়াচ্ছিলেন লক্ষ্মী। তিনি বলছিলেন, ‘‘বাঘটা ভাল ছিল। কেন মিছা কথা বলব! মিছা কথা বললে অন্যায় হবে। ও জঙ্গলের মধ্যেই থাকত। একজনকেও মারেনি।’’ লক্ষ্মী বলে চললেন, ‘‘কয়েক জন জখম হয়েছিল। তবে তারা জঙ্গলের মধ্যে গিয়েছিল বলেই জখম হয়েছিল। কেউ যদি বাঘকে মারতে যায়, বাঘও তাকে মারতে আসবে। ওরা যদি বাঘটাকে না খোঁচাতো তা হলে বাঘটাও ওদের উপর হামলা করত না।’’ বাগঘোরার পাশেই শিরষি। সেখানকার বাসন্তী মাহাতোর কথায়, ‘‘বাঘটা মানুষখেকো ছিল না। ও নিজে থেকে কাউকে মারতে যায়নি।’’
বাঘ ‘খুনে’ কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয় একদল লোকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেই তদন্ত শুরু হয়! সেই সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারেও এসেছিল বাঘ প্রসঙ্গ। তরজায় জড়িয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মেনকা গাঁধী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার পরে ঘুরেফিরে এসেছে বাঘ প্রসঙ্গ। দুর্গা পুজোয় থিম হয়েছে বাঘ খুন। চলেছে লাগাতার প্রচার। তাতে কি কিছুটা হলেও ফিরেছে সচেতনতা? মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বললেন, ‘‘এই সময়ের মধ্যে গ্রামবাসীদের অনেকটাই সচেতন করা গিয়েছে। কেন বন্যপ্রাণ বাঁচানো দরকার তা বোঝানো গিয়েছে। বন্যপ্রাণ নিয়ে জনসচেতনতা আরও বাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।’’
আরও পড়ুন: টেস্টেই ডাহা ফেল, শব্দদানব দাপাল রাজ্যু জুড়ে, আজ ফাইনালে কী হবে?
জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে ফিরছিলেন মন্টু মাহাতো। তাঁর কথায়, ‘‘বাঘটা এখানে মারা গিয়েছে। একটা নজির হয়তো হয়ে গিয়েছে। হয়তো ভুল করেই হয়েছে! তবে এটা বলতে পারি, আর কথায় কথায় বাঘ মারা যাবে না এখানে! হাতি যেমন থাকে, বাঘও থাকবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy