জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেনি। আদালতে আত্মসমর্পণ করে সঙ্গে সঙ্গেই জামিন পেয়ে যান শিক্ষক-নিগ্রহে অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতা গৌরব দত্ত মুস্তাফি। এ-হেন গৌরবের বিরুদ্ধে অবশেষে ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে তাঁর সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদই।
এর মধ্যেই নিগৃহীত শিক্ষক ভাস্কর দাস মঙ্গলবার জানান, শিক্ষক সংগঠন কুটা বৃহস্পতিবার যে-সভা ডেকেছে, তিনি সেখানে যোগ দিয়ে নিগ্রহের সবিস্তার বিবরণ দেবেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ভাস্করবাবুকে নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত গৌরবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মঙ্গলবার জানান টিএমসিপি-র সভানেত্রী জয়া দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে-ঘটনা ঘটেছে, আমরা তা সমর্থন করি না। গৌরবের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, দলের সঙ্গে কথা বলেই তা ঠিক করা হবে।’’
শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে এক সপ্তাহ আগে। সেই ঘটনা নিয়ে শিক্ষা থেকে রাজনীতি, সব শিবিরে তোলপাড় চললেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে এত দেরি কেন? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য মিলছে না। উপাচার্য থাকাকালীন সুগত মারজিত এক শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতাকে সেই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করিয়েছিলেন। এ বারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের তরফে তেমন কোনও উদ্যোগ এখনও নেই। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে শিক্ষক-নিগ্রহের বিষয়টি ওঠার কথা।
গৌরব ৬ ফেব্রুয়ারি রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ভাস্করবাবুকে তাঁর ঘরে ঢুকে চড়থাপ্পড় মেরে নিগৃহীত করেছেন বলে অভিযোগ। তার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কম্পিউটার নিয়ে অসহায় ভাবে বসে আছেন এক মাঝবয়সি ভদ্রলোক। কখনও আঙুল উঁচিয়ে, কখনও চড় মারার ভঙ্গিতে সমানে তড়পাচ্ছেন দুই যুবক। ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়া শিক্ষক ভাস্করবাবুকে মারধরের হুমকি চলছে সমানে। এক যুবকের মুখে ‘পার্থ চ্যাটার্জি’ নামটিও শোনা যায়। উল্টে দেওয়া হয় কম্পিউটারের কি-বোর্ড। মাঝবয়সি ভদ্রলোক তবু চুপ করেই বসে আছেন। ভাস্করবাবুর অভিযোগ, ওই দু’জনের মধ্যে ডান দিকের যুবক গৌরব, অন্য জন তাঁর সঙ্গী। ওই শিক্ষক জানান, ভিডিওয় যা দেখা যাচ্ছে, গৌরব তাঁকে প্রথম চড়টি মারেন তার আগেই। শাসানি চলতে চলতেই আরও বেশ কয়েকটি চড় মারা হয় তাঁকে।
ভাস্করবাবু তাঁর উপরে হামলার বিষয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় গৌরবের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন। জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযোগ আনা হলেও গৌরব জামিন পেয়ে যাওয়ায় বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনার নিন্দা, সমালোচনা শুরু হয় সর্বত্র। জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযোগ সত্ত্বেও ছাত্রনেতাকে গ্রেফতার করা হল না কেন, ওঠে সেই প্রশ্নও। ভাস্করবাবুকে নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (কুটা) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সামনে সভার ডেকেছে। কুটা-র সাধারণ সম্পাদক রামপ্রহ্লাদ চৌধুরী জানান, ভাস্করবাবু সভায় থেকে নিগ্রহের কথা জানাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy