মাধ্যমিক পড়ুয়াদের জন্য অঙ্কের পাঠ ভিডিয়ো রেকর্ডিং করছেন শেখ শরিফ। নিজস্ব চিত্র
নিজে লড়েছেন অভাব-অনটনের সঙ্গে। জিতেছেন। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৭৮ পাওয়ার পরেও লড়াই থামাননি শেখ শরিফ। এখন তাঁর লড়াই অন্যদের জন্য। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে যেখানে তাঁর বাড়ি, সে এলাকার দুঃস্থ পরিবারের যে সব ছেলেমেয়েরা সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে, করোনা-পরিস্থিতিতে তাদের তিনি পড়াচ্ছেন বিনা মূল্যে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে ‘ভিডিয়ো কল’ করে এবং ‘সোশ্যাল মিডিয়া’র মাধ্যমে। বছর আঠারোর শরিফের কথায়, ‘‘ভাল করে বুঝি, অভাব কাকে বলে। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে ভাল লাগে।’’
থাকেন পাত্রসায়র মুসলিমপাড়ায়। এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা দিনমজুর। কয়েক জন ছোট ব্যবসায়ী। শরিফের বাবা শেখ সাকিমও দিনমজুরি করেন। মা পূর্ণিমা বেগম গৃহস্থালি সামলান। দিদির বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। পরিবারের মধ্যে শরিফই প্রথম উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেছেন। পাত্রসায়রের বামিরা গুরুদাস হাইস্কুল থেকে ৬৫৯ পেয়ে মাধ্যমিক পেরোন এই কৃতী। কিছু সরকারি ও বেসরকারি বৃত্তি পেয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন ওই স্কুলেরই বিজ্ঞান বিভাগে। শেখ সাকিম বলেন, ‘‘স্কুলের মাস্টারমশাইরা পাশে না দাঁড়ালে ছেলের ভাল রেজাল্ট হত না।’’ বামিরা গুরুদাস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রঘুনাথ দে বলেন, ‘‘ছেলেটা যেমন বুদ্ধিমান, তেমন বিনয়ী।’’
পাত্রসায়রের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বইপত্র দিয়ে সাহায্য করেছে শরিফকে। সংগঠনের সদস্যেরা অধিকাংশই শিক্ষক-শিক্ষিকা। দরকারে বিভিন্ন অধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। সংগঠনটির অন্যতম সদস্য অর্ক মুখোপাধ্যায় এবং মিলন মাঝি জানাচ্ছেন, তাঁদের হয়ে শরিফ গত পুজোয় গ্রামে-গ্রামে ঘুরে বিলি করেছেন নতুন কাপড়। শীতে দুঃস্থদের হাতে তুলে দিয়ে এসেছেন কম্বল।
করোনা-পরিস্থিতিতে ছাত্রটির ব্যস্ততা বেড়েছে অন্য কারণে। শরিফকে মোবাইল উপহার দিয়েছিলেন নিকটাত্মীয়েরা। ‘লকডাউন পর্বে’ তাতেই তিনি অঙ্কের পাঠ ‘রেকর্ড’ করেন। সে রেকর্ডিং ‘আপলোড’ করা হয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ‘ফেসবুক পেজ’-এ। সে কাজে যেটুকু ‘নেট-প্যাক’ লাগে তার বন্দোবস্ত অধিকাংশ সময় করে দিয়েছে ওই সংস্থা। এলাকায় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যে সব সদস্যের কাছে ‘স্মার্টফোন’ রয়েছে, তাঁদের সাহায্যে নিয়মিত ‘লাইভ ক্লাস’ও নিচ্ছেন শরিফ। যখন তিনি ক্লাস নিচ্ছেন, সংস্থার সদস্যেরা স্মার্টফোন নিয়ে যাচ্ছেন দুঃস্থ পড়ুয়াদের কাছে। অন্য সময় শরিফের পড়ানোর ‘ভিডিয়ো’ দেখানো হচ্ছে পড়ুয়াদের। বেলুট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রানি কুণ্ডুর কথায়, ‘‘দাদা সহজ করে অঙ্ক বোঝান। এক দিন ফেসবুকে প্রথম চোখে পড়ে। এখন নিয়মিত দেখি।’’
গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান শরিফ। তাই হতে চান ডাক্তার। বলছেন, ‘‘লড়াইটা কঠিন। কিন্তু ছোটবেলা থেকে অভাবের সঙ্গে লড়ে ভয় কেটে গিয়েছে। আমার কাছে পড়ে আর এক জনের যদি ভাল হয়, তা সব সময় করব। লড়াই করা অন্যদেরও শেখাতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy