বাঁকুড়ার জয়রামবাটি এলাকা। ছবি: শুভ্র মিত্র।
কোমর জল ঠেলে বাড়ি ফিরছিলেন প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। পা পিছলে রাস্তার ধারের খাদে পড়ে ডুবে মৃত্যু হল হাবরার মছলন্দপুরের অর্পিতা মণ্ডলের (১৯)। রাস্তার ভাঙা অংশে পা পড়ে গিয়ে টাল সামলাতে পারেনি কান্দির আন্দুলিয়া মধ্যপাড়ার চুমকি পাল (১২)। পড়ে যাওয়ার পর আর উঠতে পারেনি সে। অর্পিতা, চুমকি-সহ দু’দিনে রাজ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য সরকারের হিসেব, এ পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৩৯জন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বহু ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সতর্ক রয়েছে প্রশাসন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হাওড়ার আমতা এবং উদয়নারায়ণপুর যান।
গত বুধবার (২৯ জুলাই ) টর্নেডো আর প্রবল বর্ষণ দিয়ে যে দুর্যোগের সূচনা, তিন দিন ধরে তার ব্যাপকতা আর তীব্রতা, দুই-ই বেড়েছে। সরকারি হিসেবই বলছে, দক্ষিণবঙ্গের ১২ জেলার ১৮১ ব্লকে এখন বন্যা পরিস্থিতি। এক লক্ষেরও বেশি মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে।
জলের তলায় কান্দির সালার রোড। ছবি: কৌশিক সাহা।
রাজ্য সরকার এখনও বন্যা পরিস্থিতি ঘোষণা না করলেও, নানা জেলায় যে চিত্র ছবি চোখে পড়েছে তা সাবেকি বন্যারই ছবি। দু’দিন আগেও যেখানে বাস চলত, বহরমপুর-রামনগরঘাটের সেই রাজ্য সড়কে এখন চলছে নৌকো। বাস স্ট্যান্ড থেকেই নৌকোয় উঠছেন যাত্রীরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের রাস্তায় দেখা গেল, জলমগ্ন রাস্তায় ভ্যান রিকশায় মোটর বাইক চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। পূর্বস্থলীতে বাড়ির চালের টিন দিয়ে নৌকো তৈরি করে পোষ্য জীবদের নিয়ে ত্রাণশিবিরে রওনা দিয়েছেন বাসিন্দারা। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের আমোদর নদীর উপর সেতু থেকে নামার মুখে জলের স্রোতে প্রায় ভেসে যাচ্ছিল একটি বাস। কোনও ক্রমে উদ্ধার করা হয়েছে ৩০জন যাত্রীকে।
জীবনহানির পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জীবিকার। ধান, সব্জির খেত বেশ কয়েকদিন জলের তলায়। নতুন করে বীজতলা করতে হবে অনেক চাষিকে। জোগান কমায় জেলার বাজারে সব্জির দাম বাড়ছে। পুজোর মুখে তাঁতঘরে হাঁটুজল ঢুকে যাওয়ায় বিপাকে তাঁতিরাও। পূর্বস্থলী, শান্তিপুর, ফুলিয়ার তাঁতিদের আশঙ্কা, তাঁরা বরাত অনুসারে কাপড় দিতে পারবেন না মহাজনদের। তাঁদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy