Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Vandalism

বিশ্বভারতীতে ভাঙচুরের নেপথ্যে ছিল রাজনৈতিক মদত: উপাচার্য

১৭ তারিখ জমায়েত করে পে-লোডার এনে ভাঙচুর চালানো হয়। তা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ

বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

সৌরভ চক্রবর্তী
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০৫:৩৭
Share: Save:

পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়াকে ঘিরে সোমবার যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল শান্তিনিকেতনে, তা নিয়ে এত দিন চুপ ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় বিবৃতি দিয়ে তিনি অভিযোগ করলেন, বিশ্বভারতীতে ভাঙচুরের নেপথ্যে ছিল রাজনৈতিক মদত।

শনিবার বিশ্বভারতীর সরকারি ওয়েবসাইট একটি বিশেষ বার্তালাপের মাধ্যমে উপাচার্য অভিযোগ করেন, “১৭ অগস্ট, ২০২০ সেই সমস্ত ভণ্ডদের জন্য একটি লাল-পত্র-দিবস, যারা রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের প্রতি ভালবাসার নাম করে পেশীশক্তির প্রয়োগে ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালিয়েছে। দুর্বৃত্তেরা কেবল তাদের রাজনৈতিক কর্তাদের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল তাই নয়, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য গুরুদেবের রেখে যাওয়া মহান ঐতিহ্যকে তারা ভূলুণ্ঠিত করেছে।’’

১৭ তারিখ জমায়েত করে পে-লোডার এনে ভাঙচুর চালানো হয়। তা নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ভাঙচুরের আগে পাঁচিল দেওয়ার প্রতিবাদে যে মিছিল হয়, তাতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের বিধায়ক-সহ বীরভূমের একাধিক নেতাকে। বিজেপিও প্রথম থেকেই অভিযোগ করছে, ওই ভাঙচুরের নেপথ্যে রয়েছে শাসক দল। এ বার উপাচার্যের বিবৃতিতেও উঠে এল ‘রাজনৈতিক কর্তা’দের কথা।

মেলার মাঠ কেন পাঁচিল ও বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া উচিত, তার পক্ষে বেশ কিছু যুক্তিও উত্থাপন করেছেন উপাচার্য। নিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষার খাতিরে পাঁচিল নির্মাণের পরম্পরাকে দেখাতে গিয়ে তিনি টেনে এনেছেন রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার খাতিরে কবিগুরুর জীবদ্দশাতেই চিনাভবনের চারপাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়। পরবর্তী কালেও বিশ্বভারতী বহু ক্ষেত্রে পাঁচিল ও বেড়া নির্মাণ করেছে নিরাপত্তার স্বার্থে। পুরনো পৌষমেলার মাঠ, আশ্রম মাঠ, শ্রীনিকেতন মাঠ, বিনয় ভবন প্রভৃতি বিশ্বভারতীর বহু এলাকা ইতিপূর্বেই পাঁচিল বা বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে, কিন্তু তখন কোনও রকম প্রতিবাদের কন্ঠস্বর উত্থাপিত হয়নি বলেই মত উপাচার্যের।

যদিও প্রাক্তনীদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পাঁচিল নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আগেও হয়েছে। পাঁচিলের বিরুদ্ধে অতীতে মুখ খুলেছেন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও। এ দিনই শান্তিনিকেতনে সাংবাদিক বৈঠক করে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত দাবি করেন, পরিবেশ আদালতের নির্দেশের ‘অপব্যাখ্যা’ করে সেই নির্দেশকে বিশ্বভারতী হাতিয়ার করছে পৌষমেলার মাঠ ঘিরে দেওয়ার যুক্তি হিসেবে। কিন্তু পরিবেশ আদালত কখনওই মেলার মাঠ পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার আদেশ দেয়নি।

প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, “উপাচার্যের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। উপাচার্য রজতকান্ত রায়ের আমলে যখন বিনয়ভবন ও সংলগ্ন এলাকা ঘেরা হচ্ছিল, তখনও প্রতিবাদ করেছিলাম। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল-সহ অনেককে জানিয়েছিলাম। আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কোর্টে মামলাও হয়। গত এক দশক ধরে আমাদের প্রতিবাদ চলছে।’’ এ দিন বার্তালাপে বিশ্বভারতীতে কয়েক পুরুষ ধরে বাস করা মানুষেরা বাইরে থেকে আসা কর্মী, আধিকারিকদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেন উপাচার্য। এই প্রসঙ্গে ফের রবীন্দ্রনাথকে টেনে তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ নিজে বহিরাগত ছিলেন। তিনি যদি এই অঞ্চল পছন্দ না করতেন তবে বিশ্বভারতী এখানে বিকশিত হত না। এ ছাড়াও গুরুদেব, তাঁর সহকর্মীরা, যাঁরা বিশ্বভারতীকে জ্ঞান, সৃষ্টি এবং বিস্তারের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করেছিলেন, তাঁরা সকলেই বোলপুরের বাইরে থেকে এসেছিলেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Vandalism TMC BJP Visva Bharati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy