(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ায় বসবে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস)-এর আসর। তার আগেই ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউসিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ (হিডকো)-এর চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব নিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঠিক হয়েছে, হিডকোকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে আর রাখা হবে না। এ বার আনা হবে প্রশাসনিক সংস্কার এবং কর্মিবর্গ দফতরের অধীনে। যে দফতর রয়েছে মমতার হাতেই। মুখ্যমন্ত্রী কি হিডকোর চেয়ারম্যান পদে আসছেন? জানতে ফিরহাদকে ফোন করা হলে তিনি তা ধরেননি। হোয়াট্সঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও জবাব পাওয়া যায়নি। তাঁর জবাব পেলেই এই প্রতিবেদনে তা যুক্ত করা হবে।
নবান্ন সূত্রে খবর, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বি়জ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে বর্তমানে হিডকোর চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। যে হেতু হিডকো মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে থাকা দফতরের হাতে চলে যাচ্ছে, তাই প্রশাসনিক রীতি মেনেই হিডকোর প্রধান হবেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই ফিরহাদকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যেতে হবে বলেই খবর। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারই সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কলকাতার মেয়রকে।
বাম আমলে হিডকো ছিল আবাসন দফতরের অধীনে। আবাসনমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে সিপিএমের গৌতম দেব দীর্ঘ দিন ছিলেন হিডকোর চেয়ারম্যান। মমতার শাসনের গোড়া থেকেই অবশ্য হিডকোকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনে আনা হয়েছিল। ১৪ বছর পরে ফের হিডকোর ‘অভিভাবক’ বদলাতে চলেছে। যে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ভাবেও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে ‘ফিরহাদ-৩০’ সংগঠনের অনুষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জড়িয়ে ফিরহাদের একটি মন্তব্য নিয়ে বির্তক হয়েছিল। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের প্রেক্ষাপটে যে মন্তব্য ‘বিড়ম্বিত’ করেছিল শাসকদলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকেও। সেই প্রেক্ষাপটে হিডকোর দফতর বদল ঘটানোর সিদ্ধান্ত শুধুই প্রশাসনিক সংস্কার, না কি এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ফিরহাদের ক্ষমতা ‘খর্ব’ করার বিষয়, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে এই সিদ্ধান্তকে ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে ফিরহাদের উদ্দেশে মমতার ‘সতর্কবার্তা’ বলেও অভিহিত করছেন।
নবান্নের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘সম্প্রতি হাতিশালায় ইনফোসিসের নতুন ক্যাম্পাস উদ্বোধনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল হিডকো। চেয়ারম্যান ফিরহাদ ওই অনুষ্ঠানে যাননি। বরং অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন প্রধান অতিথি। সে দিনই হিডকো নিয়ে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছিল।’’ তবে নবান্নের অন্য একটি সূত্রের আবার বক্তব্য, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০২৫ সালই পূর্ণাঙ্গ বছর হিসাবে হাতে পাবেন মমতা। বছরের গোড়ায় ৫-৬ ফেব্রুয়ারি নিউটাউনে অনুষ্ঠিত হবে ‘বিজিবিএস’। সেই সময় রাজ্যে বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে হিডকোকে ব্যবহার করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাই এ বছর নয়া কৌশলে বিজিবিএস সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। সেই পরিকল্পনার নীল নকশা হিসেবেই তাঁর এই পদক্ষেপ।
তবে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক মহলের অনেকে আরও একটি প্রেক্ষাপটের কথা বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, হিডকোতে এই রদবদলের নেপথ্যে রয়েছে ‘মন্দির রাজনীতি’। এক সময় পুরমন্ত্রী হিসাবে তারকেশ্বর মন্দির এলাকা উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ফিরহাদ। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিজেপি। সে কথা এখনও মাথায় রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। ইতিমধ্যেই দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি হচ্ছে হিডকোর পৌরহিত্যে। সপ্তাহ দেড়েক আগে সেই কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মমতা। আগামী অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘার মন্দিরের উদ্বোধন হবে। মন্দির তৈরি হয়ে গেলে তা পরিচালনার জন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হবে। সেই সময় হিডকোর চেয়ারম্যান পদে থাকলে সরকারি নিয়মেই ফিরহাদকে ওই ট্রাস্টি বোর্ডে জায়গা দিতে হত। তাতে বিজেপি যে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে যাবে তা-ও জানেন পোড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে পদ্মশিবির যাতে মেরুকরণের নতুন হাতিয়ার না পায়, সেটাই রুখতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy