বিতর্কের নতুন রসদ জোগাল সলমন রুশদির বই ‘স্যাটানিক ভার্সেস’। —ফাইল চিত্র।
সংবিধান নিয়ে রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই বিতর্কের নতুন রসদ জোগাল সলমন রুশদির বই ‘স্যাটানিক ভার্সেস’। গত মাসে দিল্লি হাই কোর্টের রায়ে ভারতে এই বই আমদানি এবং বিক্রয়ের উপরে নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছে। এ মাস থেকেই বইটি দেশের একাধিক শহরের বইয়ের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। এই আবহে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কংগ্রেস সরকারই বইটি ‘নিষিদ্ধ’ করেছিল। মত প্রকাশের স্বাধীনতা তারাই খর্ব করে এসেছে।
১৯৮৮ সালে ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ রাজীব গান্ধী সরকারের আমলে কার্যত নিষিদ্ধ হয় ভারতে। সরাসরি নিষেধাজ্ঞা চাপানো না হলেও বইটি বিদেশ থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। সেই থেকে ভারতীয় বাজারে বইটি আর পাওয়া যায়নি। বইটির কোনও ভারতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়নি। ২০১৯-এ কলকাতা থেকে সন্দীপন খান নামে এক ব্যক্তি এই নিষেধাজ্ঞা তোলার জন্য আদালতে আবেদন করেন। দিল্লি হাই কোর্ট সরকারের কাছে নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তি তলব করেছিল। সরকারের তরফে সেই বিজ্ঞপ্তি হাজির করা যায়নি। তার পরেই গত মাসে হাই কোর্ট রায় দেয়, যেখানে নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিই নেই, সেখানে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকে কী করে? সলমন রুশদির বিতর্কিত বইটি এখন ভারতের বাজারে আসছে সেই সূত্রেই। প্রসঙ্গত, এই বইটির জন্যই রুশদির উপরে ফতোয়া জারি করেছিলেন ইরানের তৎকালীন ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খোমেইনি। দু’বছর আগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই লেখকের উপরে আমেরিকায় যে ছুরি হামলা হয়, তাতেও শিয়া চরমপন্থার যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ।
রাজীব গান্ধী সরকার দাবি করেছিল, বইটি নিয়ে ধর্মদ্রোহের অভিযোগের জেরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পড়েই এ দেশে বইটির আমদানি বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, সংখ্যালঘু তোষণের অঙ্ক মেনেই বইটি কার্যত নিষিদ্ধ করা হয়। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তের দাবি, ‘‘কংগ্রেস গল্প বানাচ্ছে। বইটি নিয়ে প্রতিবাদ ইত্যাদি হওয়ার আগেই বইটি আটকানো হয়। বইটি তখনও ভারতের বাজারে আসেইনি, কেউ পড়েইনি।’’ ব্রিটেনে বইটি প্রকাশিত ১৯৮৮-র ২৬ সেপ্টেম্বর। ভারতে বইটি নিষিদ্ধ হয় ৫ অক্টোবর। কাঞ্চনের মতে, পেঙ্গুইন ইন্ডিয়ার তৎকালীন প্রধান খুশবন্ত সিংহ বইটি আনিয়ে পড়েছিলেন এবং তিনিই রাজীব গান্ধীকে চিঠি লিখে বইটি আটকানোর পরামর্শ দেন। সরকার তাতেই পদক্ষেপ করে। কাঞ্চন এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘এটা খুবই ভাল যে, বইটা অটলবিহারী বাজপেয়ীর শতবর্ষের সময়ে বাজারে আসছে। অটলজি বলতেন, অপছন্দের বইয়ের জবাব হল পছন্দের বই। বই পুড়িয়ে বা নিষিদ্ধ করে জবাব দেওয়া যায় না।’’
এত দিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সাংবিধানিক অধিকারের কথা বলা হলেই বিজেপির পক্ষ থেকে পাল্টা উদাহরণ হিসেবে জরুরি অবস্থার কথা তোলা হচ্ছিল। সংবিধান এবং অম্বেডকর নিয়ে বিতর্কের আবহে রুশদির বইও নতুন হাতিয়ার হল। কংগ্রেস যদিও বলছে, বইটি সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়নি কোনও দিন। বইয়ের আমদানি আটকানো হয়েছিল। সেটাও স্পর্শকাতরতার কথা ভেবেই। রাজীব গান্ধীকে এ জন্য দোষ দেওয়া ঠিক নয়।
এখন আবার কিছু মুসলিম ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে নতুন করে রুশদির এই বইটি নিষিদ্ধ করার দাবি উঠছে। তাঁরাও সাংবিধানিক অধিকারের কথাই বলেছেন। জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দের উত্তরপ্রদেশের নেতা মৌলানা কাব রশিদির বক্তব্য, ‘‘কারও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অন্যের ভাবাবেগে আঘাত করলে সেটা অপরাধ। বাকস্বাধীনতার নামে ধর্মদ্রোহী বইয়ের বিক্রি প্রশ্রয় দেওয়া সংবিধানের বিরোধী।’’ অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সচিব মৌলানা ইয়াসুব আব্বাস বলছেন, ‘‘এই বই ইসলামকে নিয়ে মস্করা করে, ভাবাবেগে আঘাত করে। এই বইয়ের বিক্রি জাতীয় সংহতিকে আঘাত করবে। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, এই বই যাতে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy