(বাঁ দিকে) সুকান্ত মজুমদার। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ভোটে জিতলেই সকলে বলবে, সংগঠন দারুণ মজবুত! তবে ভোটে সংগঠনের কাজ শুধু ২৫ শতাংশ। এমনই মনে করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বুধবার রাজ্য বিজেপির বর্ধিত কর্মসমিতির বৈঠকের পর এক প্রশ্নের জবাবে সুকান্ত এমনই জানিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, তার আগেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোট এবং বিধানসভার উপনির্বাচনের নিরিখে বিজেপির সংগঠন নিয়ে পরোক্ষে কটাক্ষ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি বিরোধী দলনেতা। সংগঠনের দায়িত্বে নেই।’’ যা থেকে অনেকেই মনে করছিলেন, ‘সংগঠনের নেতা’ হিসেবে শুভেন্দু পরোক্ষে রাজ্য সভাপতি সুকান্তকেই নিশানা করেছিলেন। দেখা গেল, সুকান্ত তার সোজাসাপটা জবাব দিলেন।
সুকান্ত অবশ্য শুভেন্দুর নামোল্লেখ করেননি। সাধারণ ভাবে সংগঠন এবং নির্বাচন নিয়ে নিজের অভিমত জানিয়েছেন। তবে দলের অন্দরে যে ‘মতবিরোধ’ রয়েছে, তা-ও স্বীকার করে নিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। যদিও পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, ‘মতবিরোধ’ থাকলেও ‘মনোবিরোধ’ নেই। বুধবার রাজ্য বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠকে দলের কর্মীদের উদ্দেশে সেই বার্তা দিয়ে সুকান্ত বলেছেন, ‘‘আমাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে। কাজ করতে গেলে তা হয়। কিন্তু মনোবিরোধ নেই। তা থাকা উচিতও নয়।’’
প্রসঙ্গত, বুধবার কর্মসমিতির বৈঠকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যেই বলেছেন, তিনি বিরোধী দলনেতা। তিনি সংগঠনের দায়িত্বে নেই। অনেকের মতে, এই ভাবে শুভেন্দু লোকসভা ভোট এবং তার পরে চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ভরাডুবির ‘দায়’ সংগঠনের নেতা সুকান্তের উপরে চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন। অর্থাৎ, প্রকারান্তরে নিজের ‘দায়’ এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। বিজেপির অন্দরে অনেকেই বলছেন, এই দায় ঠেলাঠেলির প্রেক্ষিতে শুভেন্দু-সুকান্ত ‘মনোমালিন্য’ কর্মসমিতির বৈঠকের দিনেই প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ স্লোগানকেও শুভেন্দু যে ভাবে বন্ধ করে তার বদলে নতুন স্লোগানের আমদানি করতে চেয়েছেন, তা যে দল ‘অনুমোদন’ করে না, তা-ও পরে জানিয়েছেন সুকান্ত।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বাংলায় ১৮টি আসন জিতেছিল দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বাধীন বিজেপি। ২০২৪ সালে সুকান্তের নেতৃত্বাধীন বিজেপি কমে হয়ে গিয়েছে ১২। এ নিয়ে ভোটের পর থেকেই দলের ভিতরে-বাইরে নেতারা বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। কেন্দ্র বদল করা এবং ভোটে পরাস্ত হওয়ার পর প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপও ফোঁস করে উঠে বলেছেন, তাঁকে ‘কাঠি’ করা হয়েছে। ফলঘোষণার পর গত দেড় মাসে একাধিক নেতার একাধিক বক্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে। যা বিজেপির শৃঙ্খলা এবং সাংগঠনিক বাঁধুনি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে বুধবার দলের বৈঠকে ‘ঐক্যের’ বার্তা দিতে চাইলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত।
পাশাপাশি, সুকান্ত গোটা দলকে উজ্জীবিতও করতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে আমরা হয়তো ১৮ থেকে ১২ হয়েছি। তা গ্রহণ করতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। এই সাময়িক পিছিয়ে যাওয়া দেখে অনেকে বলছেন, বিজেপি হেরে গিয়েছে। আমি মনে করি, বিজেপি হেরে যেতে পারে। কিন্তু হারিয়ে যায়নি। এখনও বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির একই রকম প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।’’ সুকান্তের বক্তব্য সম্পর্কে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘হেরে গিয়েছি, হারিয়ে যাইনি গোছের যে কথা সুকান্ত বলেছেন, সেই কথা ২০১১ সালের ভোটের পর থেকে সিপিএমও বলত। তার পর কী হয়েছে সকলেই দেখেছেন। বিজেপি শুধু সিপিএমের ভোটে নয়, স্লোগানেও পুষ্ট হয়েছে বোঝা যাচ্ছে।’’ বিজেপির ক্ষয় নিয়ে ভোটের পর থেকেই আলোচনা জারি রয়েছে। যে হেতু এ বারের লোকসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ‘বিশেষ ভূমিকা’ নিয়েছিলেন, তাই ভোটে ভরাডুবির ‘দায়’ কার তা নিয়েও নানা ব্যাখ্যা রয়েছে বিজেপির ভিতরে-বাইরে। বুধবারের সভাতেও নেতৃত্বের বক্তব্যে দায় ঠেলাঠেলির প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে বলে মত অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy