Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Suvendu Adhikari

মোদীর স্লোগান বদলে চাপে শুভেন্দু, বৈঠকের মধ্যেই ‘ব্যাখ্যা’, দল অনুমোদন করে না, বললেন সুকান্ত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান বদলে দেওয়ার কথা বলার পরে পরেই নিজের তরফে সাফাই দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও একটি অংশের সাফাই দিলেও অন্য একটি মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল।

BJP leader Suvendu Adhikari clarifies why he changes slogan of PM Narendra Modi in party meeting

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ১৬:৫০
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেশ শাসনের স্লোগান ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ বন্ধ করে দেওয়ার ডাক দিয়ে চাপের মুখে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য বিজেপির অনেকে তেমনই বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, দলের অন্দরের সেই ‘চাপ’ নিজেই প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি। কারণ, বুধবার সায়েন্স সিটি প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য বিজেপির বর্ধিত কর্মসমিতির বৈঠক চলার মধ্যেই তাঁর মন্তব্যের নিজস্ব ‘ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন শুভেন্দু। প্রথমে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। পরে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলেও কী কারণে ওই স্লোগান বদলের কথা তিনি বলেছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

ঘটনাচক্রে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মোদী সরকারের মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সরাসরিই বলেছেন, শুভেন্দুর ওই বক্তব্য দল ‘অনুমোদন’ করে না। সুকান্তের কথায়, ‘‘বাংলায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে বিজেপি এগোবে।’’

শুভেন্দু অবশ্য় পরে দাবি করেছেন, মোদীর স্লোগানে তাঁর ভরসা রয়েছে। তিনি তা বদলও করতে চাননি। সেই সঙ্গে তিনি যা বলেছেন, তা ‘ভুল প্রেক্ষাপটে প্রচার’ হচ্ছে বলেও দাবি শুভেন্দুর। তাঁর বক্তব্য, তাঁর ওই বক্তব্যকে ‘ভুল প্রেক্ষাপটে’ (আউট অফ কনটেক্সট) ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে শুভেন্দু তৃণমূল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেছেন।

এমনিতে বিজেপির এই দলীয় বৈঠকের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার নয়। তবে আগে থেকেই রাজ্য বিজেপি ঠিক করেছিল রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর এবং শুভেন্দুর বক্তৃতার সরাসরি সম্প্রচার হবে। সংবাদমাধ্যমকেও ওই সময়ে কর্মসমিতির বৈঠকে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। সেখানে বক্তৃতা করতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ স্লোগান বন্ধ করতে হবে। সে কথা বলার পাশাপাশি বিজেপির সংগঠনে বড় রকমের পরিবর্তনের প্রস্তাবও দেন। বলেন, দলের সংখ্যালঘু মোর্চা রাখার প্রয়োজন নেই। শুভেন্দু ওই বক্তব্য পেশ করার পরেই শোরগোল পড়ে। তার পরেই তড়িঘড়ি ‘ব্যাখ্যা’ দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তবে তাঁর ব্যাখ্যায় শুধু মোদীর স্লোগান নিয়ে তাঁর বক্তব্যের কথা রয়েছে। সংখ্যালঘু মোর্চা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে কোনও বক্তব্য জানাননি শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, তিনি শুধু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ওই আহ্বান করেছেন। দেশের ক্ষেত্রে নয়।

২০১৪ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পরেই মোদী ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ স্লোগান দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সব শ্রেণি, বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষের বিকাশ বা উন্নতিই হবে তাঁর শাসনের মন্ত্র। সেই স্লোগান পরে বিজেপিও ব্যবহার করে।

গত লোকসভা ভোটে বিজেপি যে সংখ্যালঘু ভোটারদের সমর্থন পায়নি, সে কথা বলতে গিয়ে শুভেন্দু প্রকাশ্যেই গলার স্বর চড়িয়ে বলেন, ‘‘আমিও বলেছি রাষ্ট্রবাদী মুসলিম। আপনারাও বলেছেন সব কা সাথ, সব কা বিকাশ। আর বলব না।’’ এর পর দু’হাত জড়ো করে কিছু ক্ষণ চুপ থেকে বলেন, ‘‘বলব, যো হমারি সাথ, হম উনকা সাথ। সব কা সাথ, সব কা বিকাশ বন্ধ করো।’’ বারংবার ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে বক্তৃতা শেষ করার আগে রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে হাঁটতে চাওয়ার মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘নো নিড অফ সংখ্যালঘু মোর্চা।’’ অর্থাৎ, দলে সংখ্যালঘু মোর্চা রাখার প্রয়োজন নেই। সেই সময় মঞ্চেই ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডেদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরও।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের বৈঠকের মধ্যেই প্রকাশ্য কর্মসূচিতে শুভেন্দুর এমন মন্তব্য দলের ‘ভাবমূর্তি নষ্ট করবে’ বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও ওই ‘অস্বস্তি’ কী ভাবে কাটানো যায়, তা নিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করেন উপস্থিত নেতৃত্ব। এর পরেই ব্যাখ্যা দেন শুভেন্দু। প্রথমে তিনি একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমি যা বলেছি, তা তো স্বামী বিবেকানন্দও বলে গিয়েছেন! তিনি বলেছিলেন, নিজের ধর্ম আচরণ কর। অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও।’’ অর্থাৎ, দূর থেকে অন্যের ধর্ম এবং ধর্মাচরণকে শ্রদ্ধা জানাও। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘আমি তো সেই কথাটাই বলেছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছি। এর সঙ্গে ভারত সরকারের স্লোগানের কোনও সম্পর্ক নেই। এর সঙ্গে এনডিএ সরকারের বা প্রধানমন্ত্রীর স্লোগানকে দয়া করে মেলাবেন না।’’

তার অব্যবহিত পরে এক্স হ্যান্ডলেও তাঁর বক্তৃতার ব্যাখ্যা দেন শুভেন্দু। সেখানে তিনি লেখেন, তাঁর বক্তব্য সঠিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করা হয়নি। শুভেন্দু লেখেন, ‘‘আমার বক্তব্যের প্রেক্ষাপট বদলে দেওয়া হয়েছে। আমি স্পষ্টই এটা বলেছি যে, যাঁরা জাতীয়তাবাদী, দেশ ও বাংলার পক্ষে দাঁড়ান, তাঁদের সঙ্গে আমাদের থাকতে হবে। যাঁরা আমাদের সঙ্গে থাকেন না, দেশ এবং রাজ্যের স্বার্থবিরোধী কাজ করেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে।’’ এর পরেই তৃণমূলের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষকে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু হিসাবে ভাগ না করে ভারতীয় হিসাবে দেখব। আমি আক্ষরিক ভাবে এবং মনের থেকে প্রধানমন্ত্রীর ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস, সব কা প্রয়াস’ আহ্বানকে সমর্থন করি।’’

শুভেন্দুর প্রথমার্ধের বক্তব্যের পরে দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ সরাসরিই বলেন, ‘‘এটা কারও মনের কথা হতে পারে। কিন্তু ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’ তো মোদী সরকারের স্লোগান! সেটাকে কী করে অস্বীকার করা যাবে?’’

বুধবার বেলা ১১টা থেকে বৈঠক শুরু হয়েছিল। শেষ হতে হতে বিকেল গড়িয়ে যায়। কিন্তু বৈঠক শেষের আগেই প্রথমার্ধে বলা নিজের বক্তব্যের ‘সাফাই’ দিতে শুরু করেন শুভেন্দু। রাজ্য বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে নিজের বক্তব্য শুভেন্দু যা বলেছিলেন, তা সমর্থন করছেন না কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। দলের ‘অস্বস্তি’ কাটাতেই শুভেন্দুকে ‘ব্যাখ্যা’ সাফাই দিতে বলা হয়েছে বলে ওই সূত্রের দাবি। শুভেন্দু এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা দলের পক্ষে প্রচার করাও শুরু হয়ে গিয়েছে। যদিও দলের অন্য একাংশের দাবি, বিরোধী দলনেতা নিজেই বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর বক্তব্য নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে। তাই তিনি নিজেই ‘উদ্যোগী’ হয়ে তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর মধ্যে দলের কোনও ভূমিকা নেই। তবে শুভেন্দু ব্যাখ্যা দিলেও ‘অস্বস্তি’ সহজে কাটবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান রাজ্য বিজেপির নেতারা। একই সঙ্গে এমন জল্পনাও শুরু হয়েছে যে, বিরোধী দলনেতার ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিছু বলবেন কি না! কারণ, শুভেন্দু আদতে যেটা বলেছিলেন, তার পূর্ণাঙ্গ ভিডিয়ো দলের পক্ষেই সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে। পরের ব্যাখ্যার সঙ্গে যার ‘অমিল’ রয়েছে। দলের সংখ্যালঘু মোর্চার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে শুভেন্দু যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়েও রাজ্য বিজেপির অন্দরে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari BJP Leader PM Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE