Advertisement
E-Paper

ব্রেলের বিকল্প নেই, রায় শিক্ষক-পড়ুয়ার

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ঘোষের মতে, ভাষা ও বানান সম্পর্কে যথাযথ ধ্যানধারণা পেতে এখনও পর্যন্ত ব্রেল-ই একমাত্র ভরসা।

ব্রেল একটা ‘স্ক্রিপ্ট’, যেটিকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দৃষ্টিহীনেরা পড়াশোনা করেন।

ব্রেল একটা ‘স্ক্রিপ্ট’, যেটিকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দৃষ্টিহীনেরা পড়াশোনা করেন। ছবি: সংগৃহীত।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৪
Share
Save

অডিয়ো বুক আছে। রয়েছে স্ক্রিন রিডিং সফটওয়্যার। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির এই সব দান কি দৃষ্টিহীনদের লেখাপড়ায় চিরাচরিত ব্রেলের জায়গা নিতে পারছে বা ব্রেল পদ্ধতিকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে পারছে? আজ, বুধবার ‘ওয়ার্ল্ড ব্রেল ডে’ বা বিশ্ব ব্রেল দিবসে প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। যদিও দৃষ্টিহীন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্রেল বিশেষজ্ঞ— সকলেরই অভিমত, ব্রেলের বিকল্প আজও নেই।

ব্রেল একটা ‘স্ক্রিপ্ট’, যেটিকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দৃষ্টিহীনেরা পড়াশোনা করেন। অভিযোগ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ব্রেল পদ্ধতিতে পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও উচ্চশিক্ষায় খুব কম বই-ই আছে, যেগুলি ব্রেলের মাধ্যমে পড়া যায়। তার জায়গা নিচ্ছে অডিয়ো বুক। কিন্তু দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা, ব্রেলের মাধ্যমে যতটা গভীরে গিয়ে পড়াশোনা করা যায়, অডিয়ো বুকে তা সম্ভব নয়।

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ঘোষের মতে, ভাষা ও বানান সম্পর্কে যথাযথ ধ্যানধারণা পেতে এখনও পর্যন্ত ব্রেল-ই একমাত্র ভরসা। কিন্তু ব্রেলের পর্যাপ্ত বই নেই। বিশ্বজিৎ বলেন, “অডিয়ো বুকের মাধ্যমে দৃষ্টিহীনেরা পড়াশোনা করলে তাঁরা ভাষা, সাধারণ বানান শিখতে পারেন না। তাই আন্তর্জাতিক ব্রেল দিবসে ব্রেলের মাধ্যমে পড়ার উপযোগী আরও বেশি বই প্রকাশ করা উচিত।”

মেদিনীপুর কলেজের ইংরেজির দ্বিতীয় বর্ষের দৃষ্টিহীন ছাত্র শান্তনু গাঁতাইত বলেন, “কলেজ স্তরে ব্রেলের মাধ্যমে পড়াশোনা করার বই না-থাকায় অডিয়ো বুকের সাহায্য নিতেই হচ্ছে। কিন্তু অডিয়ো বুকে অনেক উচ্চারণ স্পষ্ট বোঝা যায় না। বোঝা যায় না, বানান কেমন হবে।”

শ্রীরামপুর কলেজের ইংরেজির শিক্ষক, দৃষ্টিহীন মহম্মদ ফজলে আলম বলেন, “উচ্চশিক্ষার বেশি পাতার বই ব্রেলে রূপান্তর করলে অনেক বড় হয়ে যাবে। সাধারণ বইয়ের তুলনায় ব্রেলে পাতা লাগে পাঁচ গুণ। তাই অডিয়ো বুক এসেছে। আমি এখনও পড়ানোর আগে বিষয়টা ব্রেলে ঝালিয়ে নিলে অনেক আত্মবিশ্বাস পাই।”

উত্তর ২৪ পরগনার গুমায় দৃষ্টিহীনদের জন্য অডিয়ো লাইব্রেরি করেছেন দৃষ্টিহীন তারক চন্দ্র। তারক বলেন, “বড় বড় বইকে ব্রেলে রূপান্তর করার মতো পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। তাই অডিয়ো বুক দৃষ্টিহীনদের এখন খুব কাজে লাগছে। তবু আমি অডিয়ো লাইব্রেরিতে ব্রেল বিভাগও রেখেছি। হাত দিয়ে স্পর্শ করে যে পড়া, তা অডিয়ো বুকে কোনও দিনই হয় না।”

আইআইটি খড়্গপুরের প্রাক্তন অধ্যাপক অনুপম বসু দৃষ্টিহীনদের জন্য স্পর্শ সফটওয়্যার তৈরি করেছেন। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে যে-কোনও ভাষার রচনাকে ব্রেলে রূপান্তরিত করা যায় এবং তাকে ব্রেলে ছাপাও যায়। অনুপম বলেন, “দৃষ্টিহীনদের জন্য উচ্চশিক্ষায় ব্রেলের মাধ্যমে আরও বেশি পড়াশোনা করার সুযোগ থাকা দরকার। স্পর্শ সফটওয়্যার ব্যবহার করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বেশ কিছু পাঠ্যবই ব্রেলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষার কিছু বইকেও এই সফটওয়্যারের সাহায্যে ব্রেলে রূপান্তরিত করার জন্য আমরা আবেদনও করেছি।”

Teachers Students

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}