ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাতের ফলে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজ়া। জলের অভাব, খাবার নেই, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব— রাষ্ট্রপুঞ্জের কথায়, গাজ়া আর মানুষের বাসযোগ্য নেই। পাল্লা দিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে দুর্ভিক্ষ ও অসুখ। এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশ। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস) আজ থেকে এই নিয়ে শুরু হয়েছে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে শুনানি। শুনানি চলবে গোটা সপ্তাহ ধরেই। চিন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও সৌদি আরব-সহ ৩৮টি দেশের ১৫ জন বিচারকের প্যানেল শুনানিতে বিচার করবেন, গাজ়ায় হামলার পর থেকে ঠিক কতগুলো আন্তর্জাতিক আইন খর্ব করেছে ইজ়রায়েল। কী ভাবে ক্রমাগত লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে মানবাধিকার।
ইজ়রায়েল এই শুনানির জন্য লিখিত বিবৃতি জমা দিলেও মৌখিক সওয়াল-জবাব করবে না। তবে আমেরিকা যোগ দিয়েছে এই শুনানিতে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বন্ধু আমেরিকা ইজ়রায়েলের হয়েই কথা বলতে পারে। তবে ইজ়রায়েলের বিদেশমন্ত্রী গিডিয়ন সারের মতে, এই আন্তর্জাতিক আদালতের শুনানি আসলে ‘সার্কাস’। এই শুনানির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
গত বছর রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে আবেদন জানানো হয়েছিল, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যে সংঘাত শুরু হয়েছে, তাতে গাজ়ার সাধারণ মানুষের বিপর্যয়ের জন্য ইজ়রায়েল কতটা দায়ী। গাজ়ায় ত্রাণ পৌঁছনোয় ইজ়রায়েল কি আদৌ বাধা দিতে পারে, তা কি গ্রহণযোগ্য। এর কারণ, সংঘাত শুরু থেকেই বার বার গাজ়ায় ত্রাণ পৌঁছতে বাধা দিয়েছে নেতানিয়াহুর দেশ। কখনও রাস্তা আটকে, কখনও গাড়ির দখল নিয়ে সাধারণ মানুষের অন্ন-জলটুকুও পৌঁছতে দেয়নি।
আজ শুনানিতে নেদারল্যান্ডসে প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রদূত আম্মার হিজাজ়ি দাবি করেন, ত্রাণ আটকানোর বিষয়টি যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে ইজ়রায়েল। গত ২ মার্চ থেকে কোনও খাবার বা ওষুধ গাজ়া ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে প্রায় ২৩ লক্ষ গাজ়াবাসী কার্যত অনাহারে। জল, ওষুধ ও খাবার নিয়ে চলছে হাহাকার। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইজ়রায়েলি হানা। হিজাজ়ির কথায়, গাজ়া ক্রমশ গণকবরে পরিণত হচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত শুনানি হওয়ার পরে আন্তর্জাতিক আদালত তার মতামত জানাবে। তবে মানবাধিকার কর্মীদের একাংশের মতে, তা তৈরি হতে হয়তো বেশ কয়েক মাস লাগবে। তত দিনে গাজ়া নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কি না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সংবাদ সংস্থা
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)