সরকারি অর্থানুকূল্যে ও ব্যবস্থাপনায় দিঘায় নতুন জগন্নাথ ধাম (জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র) তৈরি নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। উদ্বোধনের মুখে সেই বিতর্কে নতুন সংযোজন, ধর্মের নিরিখে দেব-দর্শনের পৃথক বন্দোবস্ত।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলেই তৈরি দিঘার জগন্নাথ ধাম। পুরীর মন্দিরে হিন্দু ব্যতীত অন্য ধর্মের লোকজনের ঢোকা নিয়ে বার বার জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে যাঁরা হিন্দু নন, তাঁদের জগন্নাথ দর্শনের ব্যবস্থা করতে সেখানে মন্দিরের বাইরে রয়েছে পতিতপাবন মূর্তি। এক ধাপ এগিয়ে দিঘায় পতিতপাবন মূর্তির পাশাপাশি, অহিন্দুদের জগন্নাথ দর্শনের জন্য আলাদা ঘরও হয়েছে।
বর্তমানে দিঘাতেই থাকা পুরীর প্রধান রাজেশ দয়িতাপতির কথায়, “জগন্নাথ সকলের প্রভু। তবে রীতি অনুসারে তাঁর কাছে হিন্দু ছাড়া কেউ যেতে পারেন না। তবু কেউ যদি তাঁর দর্শন পেতে চান, তা হলে প্রভু বাধাও দিতে পারেন না। তাই দিঘায় পতিতপাবন কক্ষ করিয়েছি।” দিঘার জগন্নাথ ধাম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসও বলেন, “পতিতপাবন কক্ষ আর মূর্তি করা হয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রভুর দর্শন পাবেন অহিন্দুরাও।”
দিঘার এই জগন্নাথ ধাম নির্মাণে আড়াইশো কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার। কাঁথির প্রভাত কুমার কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অমলেন্দুবিকাশ জানা মনে করান, “অযোধ্যায় রামমন্দির বা জামা মসজিদ কিন্তু তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট ধর্মের লোকজনের আর্থিক সহযোগিতায়। আর দিঘায় পুরোপুরি সরকারি অর্থে জগন্নাথ ধাম। সেখানে পতিতপাবনের মতো আয়োজন বাঞ্ছনীয় নয়। সংবিধানগত ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ভারতে আইনতও তা যেমন করা যায় না, নীতিগত ভাবেও ঠিক নয়।”
কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, “সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়তে পারে না। তাই সরকারি ভাবে জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র বলা হচ্ছে। সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে দেব-দর্শনে ভাগাভাগি, অত্যন্ত নিন্দনীয়।” তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, “বিজেপি অপপ্রচার করে মানুষকে আটকাতে পারবে না। বুধবার (কাল) ইতিহাস হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)