শোকাতুর: দত্তপুকুরে বাজি বিস্ফোরণে মৃত, মুর্শিদাবাদের কলেজ শেখের স্ত্রী লুফানি বিবি। সোমবার, বারাসত হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কেউ বাড়িতে বলে এসেছিলেন, রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাচ্ছেন। কেউ জানিয়েছিলেন, গাড়িচালকের সহকারীর কাজ পেয়েছেন। কেউ আবার কলকাতায় দোকানে কাজ করতে যাচ্ছেন বলে পড়াশোনা ছেড়ে চলে আসেন। তবে, অত দূর থেকে দত্তপুকুরে এসে তাঁরা যে আসলে বাজি তৈরির কাজে হাত পাকাচ্ছিলেন, সে খবর ঘুণাক্ষরেও জানতেন না বলে সোমবার বারাসত হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে দাবি করলেন মৃতের পরিজনেরা।
রবিবার সকালে দত্তপুকুরের মোচপোল এলাকায় একটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরে ন’জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃতদের মধ্যে তিন জন স্থানীয় বাসিন্দা বলে আগেই চিহ্নিত করা গিয়েছিল। এ দিন বেলার দিকে মুর্শিদাবাদের পাঁচ জন এবং ঝাড়খণ্ডের এক জনের দেহ শনাক্ত করা হয়। তাঁদের পরিবারের সদস্যেরাই হাসপাতালে এসে দেহ শনাক্ত করেন। রবিবার বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পরে এ দিন ভোরেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাঁরা।
সপ্তাহখানেক আগেই বাড়ি থেকে এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের সুতির বাসিন্দা কলেজ শেখ। হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে তাঁর স্ত্রী লুফানি বিবি জানালেন, কলেজ আগে বিড়ি শ্রমিক ছিলেন। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে এলাকায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজও করতেন। দিন দশেক আগে জিরাট শেখ নামে এক জনের সঙ্গে কলকাতায় যাচ্ছেন বলে বাড়িতে জানিয়েছিলেন তিনি। লুফানি বলেন, ‘‘বাড়িতে বলেছিল, রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে এখানে আসার দিন দুই পরে ফোন করে বলল, দত্তপুকুরে কাজ করছি। কিন্তু এখানে যে বাজি কারখানায় কাজ করত, তা জানতাম না।’’
রবিবার বিকেলেই বিস্ফোরণে নিজের নাবালক ছেলে-সহ পরিবারের চার জনের জখম হওয়ার খবর পান সুতির বাসিন্দা খালিদা পরভিন। এ দিন হাসপাতালে এসে ছেলে রনি-সহ বাকিদের দেহ শনাক্ত করেন তিনি। খালিদা জানান, ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ত। কাকা জিরাট শেখের কথা শুনে তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে রনিও দত্তপুকুরে এসেছিল। তবে, ছেলে যে বাজি তৈরির কারখানায় কাজ করছিল, তা তিনি জানতেন না বলে দাবি করেন খালিদা। তিনি বলেন, ‘‘ফোন করলে সব সময়ে ছেলে ধরত না। এক বার জিজ্ঞাসা করি, ও কী কাজ করছে? বলেছিল, দোকানে কাজ পেয়েছে। তাই ব্যস্ত ছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সুতির স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ত রনি। অভাবের সংসারে রোজগারের আশায় কাকা জিরাটের সঙ্গে চলে আসে।’’
কিন্তু, এখানে এসে যে ছেলের মৃতদেহ নিয়ে ফিরতে হবে, ভাবতে পারেননি মা। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘আমার তো সব শেষ হয়ে গেল!’’ মৃতদের পরিজনদের
এখন আরও একটি বড় চিন্তা হল, এতগুলো দেহ নিয়ে মুর্শিদাবাদে ফেরার খরচ কোথা থেকে জোগাড় করবেন? লুফানি বিবি বললেন, ‘‘গাড়ির ভাড়াই চাইছে কয়েক হাজার টাকা। এত টাকা কোথায় পাব? টাকা থাকলে কি আর ওঁরা গ্রাম ছেড়ে এখানে আসতেন?’’
ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ থেকে দত্তপুকুরের বাজি কারখানায় কাজ করতে এসে মৃত্যু হয়েছে বছর বাইশের শাহবাজ আলমেরও। তাঁর পরিজনেরাও এ দিন এসেছিলেন দেহ নিতে। মৃত যুবকের বাবা সেলিম খান বলেন, ‘‘কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে এসেছিল। এর বাইরে আর কিছু জানি না। দেহ আমিও দেখিনি। আমার ভাইপো মর্গের ভিতরে গিয়ে দেখে বলল, শুধু মুখটাই রয়েছে। বাকি সব ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে।’’
এ দিন বারাসত হাসপাতালের মর্গের সামনে এসে মৃতদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় দেহ ফেরত পাঠানোর দাবি জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy