বাঁ দিকে, রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং ডান দিকে, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা। ছবি: সংগৃহীত।
মিছিলের সামনে মহিলা এবং ছাত্রদের রেখে আড়াল থেকে অশান্তি করা হতে পারে নবান্ন অভিযানে! এমনটাই আশঙ্কা করছে পুলিশ। তারা এ-ও মনে করছে, ওই অভিযান থেকে পুলিশকে বলপ্রয়োগ করতে উস্কানি দেওয়া হতে পারে। সোমবার একটি সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য পুলিশের তরফে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা এবং এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, তথাকথিত ‘ছাত্র সমাজ’ ওই কর্মসূচির ডাক দিলেও এর নেপথ্যে অন্য চক্রান্তের ইঙ্গিত পাচ্ছে পুলিশ। বেশ কিছু ঘটনায় তাদের সেই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে।
সোমবার সকালেই নবান্ন অভিযান নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছিল তৃণমূল। দু’টি গোপন ভিডিয়ো (আনন্দবাজার অনলাইন ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি) প্রকাশ করে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ দাবি করেছিলেন, নবান্ন অভিযানে গুলি চালানো হতে পারে। এমনকি, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য নবান্ন অভিযানে খুনও করা হতে পারে বলে অভিযোগ করেছিলেন কুণালেরা। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম বলেন, ‘‘নবান্নের ওই অভিযানে মহিলা এবং ছাত্রদের সামনে রেখে পিছন থেকে অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি করা হতে পারে বলে খবর পেয়েছি আমরা। পুলিশকে বলপ্রয়োগে উস্কানি দিতেই এটা করা হবে।’’ কারা এ কাজ করছে তা স্পষ্ট না করলেও সুপ্রতিম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর রয়েছে, নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া ছাত্র সমাজের এক প্রতিনিধি রবিবারই কলকাতার এক বিলাসবহুল হোটেলে গিয়ে এক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা করেছেন।’’
ছাত্র সমাজের ডাকা নবান্ন অভিযানে পিছন থেকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন বিজেপির নেতারা। যদিও সিপিএম ওই মিছিল থেকে নিজেদের দূরে রাখছে বলেই খবর। পুলিশ অবশ্য বলেনি ছাত্র সমাজের ওই প্রতিনিধি কোন দলের নেতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তবে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া ছাত্র সমাজকে নিয়ে আরও একটি তথ্য প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
সোমবার সুপ্রতিম জানিয়েছেন, নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে যে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, পুলিশ খোঁজ নিয়ে দেখেছে, ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’ নামে কোনও সংগঠন আদপেই নেই বা আগেও ছিল না। ভুঁইফোঁড় ওই সংস্থা হঠাৎ জেগে উঠে কী ভাবে সোজা নবান্ন অভিযানের ডাক দিল, তা নিয়েও সন্দিহান পুলিশ।
সুপ্রতিম সোমবার বলেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, আগামিকাল সংগ্রামী যৌথমঞ্চও নাকি এই ছাত্র সমাজের অভিযানে যুক্ত হয়েছে। আমরা খবর পেয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তারাও আমাদের কিছু জানায়নি।’’ যদিও সুপ্রতিমের অভিযোগকে পুলিশের ‘মিথ্যাচার’ বলে মন্তব্য করেছে সংগ্রামী যৌথমঞ্চ। তাদের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘পুলিশ মিথ্যাচার করছে। সোমবার সকালেই আমরা রাজ্য প্রশাসনকে মেল মারফত জানিয়েছি। যৌথমঞ্চ-সহ আরও দু’টি সংগঠন মঙ্গলবার হাওড়া স্টেশনের বাইরে জমায়েত করবে। ফরশোর রোড ধরে আমরা নবান্নের দিকে যাব। রাত ৮টা পর্যন্ত নবান্নের সামনে সভা করব।’’ তবে ‘ছাত্রসমাজ’-এর তরফে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
অনুমতি নেওয়া হোক বা না হোক নবান্নের সামনে জমায়েত এমনিতেই বেআইনি বলে জানিয়েছেন রাজ্যপুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের এত জায়গায় এত আন্দোলন, মিছিল হচ্ছে। পুলিশ তাদের সহযোগিতাই করছে। কিন্তু নবান্ন সংরক্ষিত এলাকা। এর আশপাশে ১৪৪ ধারা অর্থাৎ বর্তমান আইনের ১৬৩ ধারা জারি করা থাকে। যার অর্থ ওই এলাকায় পাঁচ জনের বেশি জমায়েত সম্ভব নয়। তা ছাড়া যাঁরা ওই আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন, তাঁরা আগাম অনুমতি নেননি। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছেন। তাই ওই মিছিল বেআইনি। আমরা অন্য যে কোনও জায়গায় মিছিলে সহয়তা করতে পারি, কিন্তু নবান্নে এই ধরনের মিছিলে সাহায্য করতে পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy