Advertisement
E-Paper

বাড়তি ছুটিতে স্কুল-খাবারে ‘বঞ্চনায়’ প্রশ্ন, মন্ত্রীর আশ্বাস

শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পর্ষদের নির্ধারিত গরমের ছুটি ছিল ২৪ মে থেকে ৪ জুন। গ্রীষ্মাবকাশের ওই ক’দিন মিড-ডে মিল বন্ধের হিসেব সরিয়ে রাখলেও ছুটি বাড়ানো হয়েছে দু’দফায়।

Mid Day meal

—প্রতীকী ছবি।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ ০৭:৩৯
Share
Save

দারুণ দহনের দরুন রাজ্য সরকার স্কুলে গরমের ছুটি এক দফা এগিয়ে এবং এক দফা পিছিয়ে দেওয়ায় বিতর্ক কম হয়নি, প্রশ্নও উঠছিল সমান তালে। সেই অতিরিক্ত গ্রীষ্মাবকাশে মিড-ডে মিল থেকে স্কুলপড়ুয়ারা যে ‘বঞ্চিত’ হল, তাদের পুষ্টির যে-ঘাটতি পড়ল, তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন জোরদার হয়েছে, দানা বাঁধছে নতুন বিতর্ক। শিক্ষা শিবির-সহ বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন, এটাকে বঞ্চনা বলা হোক বা পুষ্টি-ঘাটতি, তা পূরণ হবে কী ভাবে? স্কুল খুললে কি ছাত্রছাত্রীদের বাড়তি খাবার দিয়ে তা পূরণের ব্যবস্থা করা হবে?

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, ‘‘গরমের ছুটিতে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের যে-ঘাটতি হল, সেটা পূরণ করার একটা প্রস্তাব এসেছে। সংশ্লিষ্ট দফতরকে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে বলছি।’’

শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পর্ষদের নির্ধারিত গরমের ছুটি ছিল ২৪ মে থেকে ৪ জুন। গ্রীষ্মাবকাশের ওই ক’দিন মিড-ডে মিল বন্ধের হিসেব সরিয়ে রাখলেও ছুটি বাড়ানো হয়েছে দু’দফায়। ২ থেকে ২৩ মে এবং ৫ থেকে ১৪ জুন— বাড়তি ছুটি মোট ৩২ দিন। এই ৩২ দিনের অতিরিক্ত ছুটিতে পড়ুয়ারা মিড-ডে মিলের বরাদ্দ পেল না কেন? শিক্ষকদের প্রশ্ন, পূর্বনির্ধারিত গরমের ছুটিতে মিড-ডে মিল কখনওই দেওয়া হয় না। কিন্তু অতিরিক্ত ছুটিতে সেই প্রাপ্য থেকে ছাত্রছাত্রীদের ‘বঞ্চনা’ করা হবে কেন?

এই পড়ুয়া-বঞ্চনার মোট পরিমাণ টাকার হিসেবে কোটি ছাড়াতে পারে বলে শিক্ষা শিবিরের হিসেব। বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের দৈনিক মিড-ডে মিলের বরাদ্দ পাঁচ টাকা ৪৫ পয়সা। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাথাপিছু সেই বরাদ্দ আট টাকা ১৫ পয়সা। পর্ষদ নির্ধারিত ছুটি ছিল ১২ দিন। গরমের ছুটি বেড়ে হয়েছে ৪৪ দিন। অর্থাৎ অতিরিক্ত গরমের ছুটি ছিল ৩২ দিন। শিক্ষকদের একাংশের মতে, এই ৩২ দিনে চারটি রবিবার বাদ দিলে থাকে ২৮ দিন। হিসেব করলে দাঁড়ায়, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিল খাতে প্রত্যেক পড়ুয়ার ‘বঞ্চনা’র অঙ্ক ১৭৪ টাকা চার পয়সা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক পড়ুয়ার ক্ষেত্রে সেটা ২৬০ টাকা আট পয়সা। শিক্ষকদের একাংশর বক্তব্য, সারা রাজ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ার ‘বঞ্চনা’র হিসেব কোটি ছাড়াবে।

বাংলা শিক্ষা পোর্টাল বলছে, রাজ্যে সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা দেড় কোটি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সংখ্যাটা যদি ৮০ লক্ষও ধরা যায়, তা হলে অতিরিক্ত গরমের ছুটিতে সরকার মিড-ডে মিল থেকে কয়েক কোটি টাকা বাঁচিয়েছে। গরমের ছুটির পরে স্কুল খুললে পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল বাবদ অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’

ডোমজুড়ের কেশবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাসের প্রশ্ন, “গত বারেও অতিরিক্ত গরমের ছুটিতে পড়ুয়াদের চাল, আলু, ডাল, সয়াবিন দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেই ব্যবস্থা হল না কেন?” বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হণ্ডা জানান, জানুয়ারি থেকে চার মাসের জন্য প্রতি সপ্তাহে পড়ুয়া-পিছু অতিরিক্ত ২০ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। তাতে পড়ুয়ারা সপ্তাহে দু’দিন ফল ও মুরগির মাংস পাচ্ছিল। ‘‘বড় গরমের ছুটিতে ওদের পুষ্টির যে-ঘাটতি হয়েছে, তা পূরণের জন্য অন্তত আরও দু’মাস সপ্তাহে দু’দিন ফল-মাংসের দাবি জানাচ্ছি,’’ বলেন আনন্দ।

পুষ্টিবিদ হেনা নাফিসের বক্তব্য, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের এমনিতেই পুষ্টি কম থাকে। দীর্ঘ কাল পুষ্টির ঘাটতি চলতে থাকলে ‘এনার্জি লেভেল’ বা শক্তি-স্তর কমে যায়। তার ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ কম হতে পারে, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সর্বোপরি মার খেতে পারে শারীরিক বাড়বৃদ্ধিও।

স্কুল খুললে কি অতিরিক্ত মিড-ডে মিল দেওয়া হবে? এই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান শিক্ষা দফতরের এক কর্তা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mid Day Meal Bratya Basu

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}