Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Justice Abhijit Gangopadhyay

মেডিক্যাল মামলায় সিবিআই: বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এক ঘণ্টার মধ্যেই স্থগিতাদেশ!

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির মামলায় বুধবার দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। একই সঙ্গে এ-ও বলেছিলেন যে, ‘‘রাজ্য এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে’’।

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৯
Share: Save:

পুরোপুরি এক ঘণ্টাও হয়নি। বা সবে এক ঘণ্টাই হয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া নির্দেশের। মেডিক্যাল কলেজে দুর্নীতির মামলায় সিবিআইকে তদন্তভার দিয়েছিলেন বিচারপতি। একই সঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের উপর এই আদালতের ভরসা নেই।’’ বিচারপতির সেই নির্দেশের এক ঘণ্টার মধ্যেই তাতে মৌখিক স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতির নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল রাজ্য। মৌখিক ভাবে করা সেই আবেদন শুনে মৌখিক ভাবেই স্থগিতাদেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির মামলায় বুধবার দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। একই সঙ্গে এ-ও বলেছিলেন যে, ‘‘রাজ্য এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে। যদি তা হয়, তবে সিবিআই তদন্ত আটকাতে রাজ্য এ যাবৎ কত টাকা খরচ করেছে, তা জানাবে আশা করি!’’ রাজ্য অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগেই ডিভিশন বেঞ্চে যায়।

বিচারপতি সৌমেন সেন এবং উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চে মৌখিক আর্জি জানান রাজ্যের এজি। সেই আর্জি শোনার পরেই মেডিক্যাল কলেজ মামলায় দেওয়া বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। তবে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হবে কি না সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বৃহস্পতিবার। মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্যের মামলাটির বৃহস্পতিবারই শুনানি হবে ডিভিশন বেঞ্চে।

আগে যা হয়েছিল

বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উঠেছিল রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত মামলা। সেই মামলাতেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি। এজলাসে বসেই তিনি বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তার তদন্ত করবে সিবিআই। এই ঘটনায় যদি কোনও আর্থিক দুর্নীতি হয়ে থাকে, তবে তা-ও সামনে আসা দরকার।’’

বিচারপতির এই নির্দেশের পরেই রাজ্যের তরফে তীব্র আপত্তি তোলেন রাজ্যের এজি। কিন্তু বিচারপতি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘শাহজাহানকে আপনাদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছে? রাজ্যটা দিনে দিনে কয়েক জন দুর্নীতিগ্রস্তের আখড়ায় পরিণত হচ্ছে। অথচ এত কিছুর পরেও পুলিশের তরফে কোনও সদর্থক ভূমিকা চোখে পড়ছে না। এ রাজ্যের পুলিশ কর্তৃপক্ষের উপর এই আদালতের কোনও আস্থা নেই। দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার তাই সিবিআইকেই দেওয়া যথাযথ মনে করছে আদালত।’’ পাশাপাশিই সিবিআইকে বিচারপতি জানান, সিবিআই তদন্তের নির্দেশনামা দুপুর আড়াইটার মধ্যে সিবিআইকে দিতে হবে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে।

এমবিবিএস পরীক্ষায় ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে আদালতে মামলা করেছিলেন ইতিশা সোরেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, ‘‘তফসিলি জনজাতি না হওয়া সত্ত্বেও অনেক পড়ুয়া ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করে সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছেন। ওই সরকারি কলেজের তালিকায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজেরও নাম রয়েছে।’’

প্রসঙ্গত, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির এই মামলাটি গত বছর থেকেই চলছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। চিকিৎসক হওয়ার প্রশিক্ষণে অযোগ্যরা গুরুত্ব পেয়েছেন জেনে আদালতেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। মামলাকারী আদালতে যে ৫০ জনের নাম জমা দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের শংসাপত্র খতিয়ে দেখতে বলেন বিচারপতি। গত ১৬ অক্টোবর ওই ৫০ জনকে মামলায় যুক্ত করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি রাজ্যের স্ক্রুটিনি কমিটিকে বলেছিলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।

৩০ নভেম্বরের মধ্যে এই খতিয়ে দেখার কাজ সম্পন্ন করতে বলেছিলেন বিচারপতি। গত ১৪ ডিসেম্বরে রাজ্য জানায়, এমন ১৪ জন প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে, যাঁরা ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করেছিলেন। বিচারপতি দু’সপ্তাহের মধ্যেই তাঁদের বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে তদন্ত শুরু করতেও বলেছিলেন বিচারপতি। বুধবার এই মামলাতেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy