—প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রের ইস্যুতেই মঙ্গলবার সরগরম রইল রাজ্য বিধানসভা। একদিকে, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলে প্রস্তাব আনল তৃণমূল। পাল্টা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হল বিরোধীদল বিজেপি। তৃণমূল দাবি করেছে, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আটকে রেখে কেন্দ্র আসলে বাংলার বিরুদ্ধে অলিখিত আর্থিক অবরোধ শুরু করেছে। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, আগে যে টাকা এসেছিল তার হিসাব দেয়নি রাজ্য সরকার। টাকা লুট হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীদের প্রশ্ন, হিসাব না দিলে নতুন করে কেন টাকা দেবে দিল্লি?
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে লেখা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের একটি চিঠি নিয়ে তপ্ত হয় অধিবেশন। মঙ্গলবার আলোচনায় বিরোধী দলনেতা গিরিরাজের চিঠি দেখিয়ে দাবি করেন, রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পাঠানো অর্থের অপব্যবহার হয়েছে। শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন তিনি। তাঁর এ-ও দাবি, স্বজনপোষণের মাধ্যমে সরকারি অর্থ খরচে বেনিয়ম হয়েছে। শুভেন্দুর দাবি, দফতরভিত্তিক যে ১৭টি অভিযোগ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর কাছে তিনি জানিয়েছিলেন, মন্ত্রীর পাঠানো চিঠিতে তাঁকে জানানো হয়েছে, দু’টি অভিযোগ ছাড়া সব অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়ে অধিবেশন কক্ষেই জোর তরজা হয় শুভেন্দু ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের।
জবাবি ভাষণে অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা বলেন, “কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী আমাদের সংসদীয় দল যখন দেখা করতে গেল তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন না। আর পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতাকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে বাংলার অর্থ দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার ভাব স্পষ্ট হয়েছে।”
মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে বিধানসভায় প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ। পক্ষে আলোচনা করেন তাপস রায়, মোশারফ হোসেন এবং দেবব্রত মজুমদার। বিপক্ষে বলেন শুভেন্দু, হিরণ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ মুখোপাধ্যায় এবং বঙ্কিম ঘোষ।
সোমবার বিধানসভা তপ্ত ছিল মণিপুর ও মালদহ ইস্যু নিয়ে। মঙ্গলে তা ঘুরে যায় ১০০ দিনের কাজের দিকে। এ নিয়ে তৃণমূল দীর্ঘদিন ধরেই সরব। এমনকি, এই ইস্যুতেই বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়েছিল তৃণমূল। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ৫ অগস্টের সেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চেই সেই কর্মসূচিতে কিছুটা সংশোধন করেন। যদিও জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট ৫ তারিখের ওই কর্মসূচিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। ত়ৃণমূলের বক্তব্য, ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখে আসলে নরেন্দ্র মোদী সরকার বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চাইছে।
অধিবেশনে দুই হুমায়ুন
ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর মঙ্গলবারের অধিবেশনের প্রথমার্ধে উপস্থিত ছিলেন। লাগাতার দলবিরোধী মন্তব্যের জন্য হুমায়ুনকে শোকজ করেছে তৃণমূল। হুমায়ুন জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর ফোনে কথা হয়েছে। বক্সী তাঁকে জানিয়েছেন, শোকজের উত্তর লিখিত ভাবে তৃণমূল ভবনে জমা দিতে হবে। তিনি তা-ই করবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিম মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডারে মাসে ১০০০ টাকা দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন ডেবরার তৃণমল বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর। যা নিয়ে শাসকদলকে তীব্র অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। মঙ্গলবারও শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিধানসভায় প্রশ্ন তোলেন হুমায়ুন। মঙ্গলবার তিনি জানতে চান, কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন শিক্ষানীতি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কার্যকর করা হয়েছে কি? যদি হয়ে থাকে, তবে কী ভাবে করা হয়েছে? দ্বিতীয়ত, হুমায়ুন জানান, তিনি কাগজে পড়েছেন, রাজ্যে ‘প্রিমিয়ার ইনস্টিটিউট’ বেথুন-সহ একাধিক কলেজের আসন ফাঁকা রয়েছে। এটা কি কেন্দ্রীয় ভাবে কাউন্সিলিংয়ের জন্য হয়েছে? জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন শিক্ষানীতি রাজ্য সরকার গ্রহণ করেনি। এর মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে। একটা ছোট অংশ শুধুমাত্র চার বছরের ডিগ্রি কোর্স। আমরা শুধু সেটাই গ্রহণ করেছি। জোর করে তিন বছরের ডিগ্রি কোর্স রেখে দিলে সমস্যায় পড়তে হত ছাত্র-ছাত্রীদের। যে হেতু সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু হয়ে গিয়েছে, তাই সর্বভারতীয় স্তরে পরীক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা হত। বামফ্রন্ট সরকারের মতো জোর করে ইংরেজি তুলে দেওয়া অথবা ব্রিজ কোর্স চালু করে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যায় ফেলতে চাইনি। তাই আমরা চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু করেছি।’’ আগের দিনের মতো অস্বস্তি পোহাতে হয়নি মঙ্গলবার। বরং দেখা যায়, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস গিয়ে হুমায়ুনের সঙ্গে করমর্দন করছেন।
শুভেন্দুর ‘নাচানাচি’ বিতর্ক
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে অধিবেশন কক্ষে নাচানাচি করার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। শাসকদলের অভিযোগ, ওয়াক আউটের সময় হাত তুলে অধিবেশন কক্ষে নৃত্য করেছেন শুভেন্দু। বিজেপি বিধায়কেরা অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর স্পিকারের উদ্দেশে বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায় অভিযোগ করেন, “কোনও বিধায়ক অসংসদীয় কথা বললে তা বাদ দেওয়া হয়। এর আগে বিজেপি বিধায়কেরা অধিবেশনে হাততালি দিয়েছেন। আজ তো বিরোধী দলনেতা দু’হাত তুলে বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে নৃত্য করে গেলেন। তাঁর এই অসংসদীয় আচরণ কী ভাবে বাদ দেবেন?” পাল্টা স্পিকার বলেন, “বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে কখনওই এই ধরনের আচরণ কাম্য নয়। আমি বিরোধী দলনেতার এমন আচরণের নিন্দা করছি।” পাল্টা বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, “তৃণমূল নেত্রী সংসদে স্পিকারকে কাগজ ছুড়ে মেরেছিলেন। এ ছাড়াও ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বিধানসভা ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। তাই তাঁর দলের কাছে আমরা বা আমাদের বিরোধী দলনেতা সংসদীয় শব্দ বা আচরণ শিখবেন না। আগে কাকে সংসদীয় ভাষা বলা হয় তা শিখুক তৃণমূল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy