গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মঙ্গলবার এক অন্য ‘মা’কে দেখল কলকাতা। টাকার জন্য নিজের কোলের সন্তানকে বিক্রি করে দিলেন মহিলা। আনন্দপুর এলাকায় চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে ২১ দিনের কন্যাসন্তানকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে মায়ের বিরুদ্ধে। মা-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, টাকার লোভে এক নিঃসন্তান গৃহবধূর কাছে কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দেন অভিযুক্ত। বেহালা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সদ্যোজাতকে। মায়ের কোল ছেড়ে ওই একরত্তির বর্তমান ঠিকানা হোম। কলকাতার বুকে শিশু বিক্রির অভিযোগে নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার। শুধু কলকাতাই নয়, সাম্প্রতিক কালে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও শিশু বিক্রির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এপ্রিল এবং জুলাই মাসে টাকার বিনিময়ে শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরে। আবার গত মাসে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে আইফোন ১৪ কেনার জন্য পুত্রসন্তানকে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছিল দম্পতির বিরুদ্ধে। মায়ের কোল যে কোনও শিশুর কাছেই নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু ‘টাকার লোভে’ সেই আশ্রয়ই কখনও সখনও শিশুদের কাছে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। শিশু বিক্রির নেপথ্যে কি তা হলে কোনও চক্র রয়েছে? শিশু জন্মানোর আগেই কি বিক্রির দর ঠিক করা হচ্ছে? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজতে এখন মরিয়া তদন্তকারীরা। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, কোনও চক্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিশু জন্মানোর আগেই বিক্রি করা হয় কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সম্প্রতি যে সব অভিযোগ উঠেছে, তার সঙ্গে কলকাতার ঘটনার কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
কলকাতায় শিশু বিক্রি
আনন্দপুর এলাকায় সোমবার রাতে ২১ দিনের কন্যাসন্তানকে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে এক মহিলার বিরুদ্ধে। তাঁর নাম রূপালি মণ্ডল। স্থানীয়দের দাবি, অভিযুক্ত মহিলা নোনাডাঙা রেল কলোনির একটি বাড়িতে তিন জন শিশুকে নিয়ে একাই থাকতেন। তিন জনকেই সন্তান হিসাবে পরিচয় দিতেন তিনি। কিন্তু কয়েক দিন ধরেই তাঁর ২১ দিনের কন্যাসন্তানকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে স্থানীয়দের দাবি। এর পর সন্দেহ বাড়লে স্থানীয়দের কয়েক জন পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কন্যাসন্তান কোথায়? এর সদুত্তর দিতে পারেননি ওই মহিলা। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জেরায় শেষে ভেঙে পড়েন তিনি। অভিযোগ, চার লক্ষ টাকার বিনিময়ে সন্তানকে বিক্রি করেছেন মা। সেই সূত্র ধরেই পাটুলি এলাকা থেকে রূপা দাস নামে আরও এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রূপাকে জেরা করে পাটুলি থেকে স্বপ্না সর্দার নামে অন্য এক মহিলাকে পাকড়াও করে পুলিশ। তার পর হরিদেবপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় পূর্ণিমা কুণ্ডু এবং লালতি দে নামে দুই মহিলাকে। লালতির সূত্র ধরেই বেহালার পর্ণশ্রী এলাকা থেকে কল্যাণী গুহ নামে আরও এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, কল্যাণী আদতে মেদিনীপুরের বাসিন্দা। পর্ণশ্রীতে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তাঁর বাড়ি থেকেই সেই সদ্যোজাতকে উদ্ধার করা হয়। ১৫ বছর ধরে বিবাহিত কল্যাণী। কিন্তু নিঃসন্তান তিনি। ধৃতদের আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁদের সকলকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
নরেন্দ্রপুরে সন্তান বিক্রি
জুলাই মাসে কলকাতার অদূরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরেও শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল। দু’লক্ষ টাকার বিনিময়ে সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল মায়ের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ঘটনায় শিশুর মা-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছিল, স্বামীর মৃত্যুর পর অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন অভিযুক্ত মহিলা। তার পর তিনি সন্তানসম্ভবা হন। লজ্জার কারণে সন্তান বিক্রি করেন তিনি, এমনটাই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করেছিল পুলিশ। যদিও অভিযুক্ত বলেছিলেন, ‘‘আমি বাচ্চাকে বিক্রি করিনি। আমার স্বামী নেই। অসুস্থ বলে কাজ করতে পারছি না। বাচ্চা মানুষ করতে পারছি না। তাই বাচ্চাটিকে মানুষ করার জন্য দিয়ে দিয়েছিলাম।’’ কিছু দিন আগে কলকাতার এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানিয়েছিলেন, কোনও সদ্যোজাত শিশুর ভার পরিবার নিতে না চাইলে সরকার তার দায়িত্ব নেবে। তবে নরেন্দ্রপুরের ঘটনায় যে হেতু টাকার লেনদেন হয়েছে, তাই এ ক্ষেত্রে ‘লালনপালনের সামর্থ নেই’ যুক্তি খাটে না বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। এপ্রিল মাসে নরেন্দ্রপুরে আরও এক শিশু বিক্রির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছিল। সদ্যোজাত সন্তানকে দু’লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক মহিলার কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছিল দম্পতির বিরুদ্ধে। আবার ওই সন্তান বিক্রির অভিযোগ ওঠে ক্রেতার বিরুদ্ধে। তিন জনকেই গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, দম্পতির সন্তান হওয়ার আগেই বিক্রির রফা হয়েছিল। তাঁরা শিশু পাচার চক্রেও জড়িত ছিলেন বলে দাবি।
আইফোনের জন্য সন্তান বিক্রি
আইফোন ১৪ কেনার জন্য আট মাসের শিশুপুত্রকে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছিল দম্পতির বিরুদ্ধে। গত জুলাই মাসে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির ঘটনা। জানা গিয়েছিল, ওই দম্পতির সাত বছরের এক কন্যাসন্তান এবং আট মাসের পুত্রসন্তান রয়েছে। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে রিলস বানানোর জন্য আইফোনের দরকার ছিল দম্পতির। অভিযোগ, সেই কারণেই শিশুকে বিক্রি করেন তাঁরা। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। খড়দহে এক মহিলার কাছে শিশুটিকে বিক্রি করা হয়েছিল। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। যদিও এই ঘটনায় পুলিশের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy