Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

শিউলির গন্ধে পুজোর অনুভব দৃষ্টিহীনদের

কতই বা বয়স ওদের? কারও সাত, কারও দশ বা বারো বছর। সকলেরই দু’চোখে আঁধার। কেউ জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন, কেউবা অন্য কোনও কারণে।

পুজোর পরশ: কাশফুল ছুঁয়ে শরৎকে চেনানো দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের। উলুবেড়িয়ার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। ছবি: সুব্রত জানা

পুজোর পরশ: কাশফুল ছুঁয়ে শরৎকে চেনানো দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের। উলুবেড়িয়ার একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। ছবি: সুব্রত জানা

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

এই প্রথম কাশের স্পর্শ পেল মন্দিরা।

শিউলির গন্ধ নিল অর্জুন।

ঢাক বাজছে ক্লাসে। আচ্ছা, ঢাকি কেমন হন? খোদাই করা ঢাকির ছবিতে হাত বুলিয়ে চিনল অষ্টমী। আগমনীর বার্তা এর আগে কখনও ওরা এ ভাবে বোঝেনি।

কতই বা বয়স ওদের? কারও সাত, কারও দশ বা বারো বছর। সকলেরই দু’চোখে আঁধার। কেউ জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন, কেউবা অন্য কোনও কারণে। ব্রেল-এর ছ’টি ‘ডট’-এ মাধ্যমে ওরা জগৎ চেনে। কিন্তু ‘পুজোর গন্ধ’ চিনবে কী ভাবে? উলুবেড়িয়ার জগৎপুর গ্রামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিশেষ শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তাদের দৃষ্টিহীন ৩৫

জন আবাসিক পড়ুয়াকে এ বার আগমনীর বার্তা চেনাচ্ছে। ক’দিন

ধরেই চলছে এই বিশেষ ক্লাস। শিক্ষকেরাই কাশ, শিউলি নিয়ে আসছেন। হাতে তুলে দিচ্ছেন পড়ুয়াদের। বোঝাচ্ছেন, শরৎ এলে কাশ ফোটে। শিউলি ঝরে।

যাঁর আগমনের জন্য প্রকৃতির এই সাজ, সে মা দুর্গা কেমন হন? ঢাকির মতো খোদাই করা দুর্গার ছবিতেও হাত বুলিয়ে চিনছে সপ্তম শ্রেণির মন্দিরা ঘোষ, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অষ্টমী মাহাতোরা। নতুন স্পর্শ, নতুন অনুভূতিতে তারা বিহ্বল। ঢাক বাজছে টেপ রেকর্ডারে। চলছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই চণ্ডীপাঠও। মন্দিরার কথায়, ‘‘রেডিয়োয় মহালয়া শুনে এত দিন বুঝতাম পুজো আসছে। কাশ ফুটলে যে পুজো পুজো ভাব আসে, সেটা বইতে পড়েছি। এই প্রথম কাশফুল ছুঁয়ে দেখলাম।’’ অর্জুনের কথায়, ‘‘মহালয়া শুনে বুঝতাম, পুজো আসছে। কিন্তু এর সঙ্গে যে এত কিছু থাকে, সেটা আগে বুঝিনি।’’

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ উত্তম দলুই বলেন, ‘‘এরা ব্রেল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে। ব্রেল-এর ছ’টা ‘ডট’-এর মাধ্যমে এরা পৃথিবীকে চেনে। স্পর্শ ও অনুভূতিতে অনেকটাই বুঝতে পারে। কাশফুল ফুটলেই আমরা বুঝতে পারি, পুজোর বেশি দেরি নেই। মনটা অন্য রকম হয়ে যায়। কিন্তু ওরা তো সেটা বুঝতে পারে না। ওদের সেই অনুভূতিটাই উপলব্ধি করানোর চেষ্টা করছি মাত্র।’’ প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিহীন বিভাগের শিক্ষক নারায়ণ দাস বলেন, ‘‘বেশ কিছু জিনিসের আকার সম্বন্ধে ওদের ধারণা দিতে আমরা মডেলের সাহায্য নিই। সেই কারণেই একই ভাবে আমরা মা দুর্গা এবং ঢাকিও চেনাচ্ছি ওদের।’’

পড়ুয়াদের কারও বাড়ি পুরুলিয়ায়, কারও বাড়ি হাওড়ায় বা অন্য কোনও জেলায়। পুজোর দিনগুলিতে ছুটি মেলে। বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান বাবা-মায়েরা। কিন্তু শ্রেষ্ঠ উৎসবে সবাই যখন মেতে ওঠে, তখন ওরা সে ভাবে মাততে পারে কই? চারপাশে আলোর রোশনাই ওরা দেখতে পায় না। ঝলমলে পুজো মণ্ডপের কথা ওরা শুধু শোনে। শোনে মণ্ডপে ঢাক বাড়ছে। ছুটি ফুরোলে আবার ফিরতে হয় উলুবেড়িয়ার এই কেন্দ্রে। পড়াশোনার ফাঁকে শিখতে হয় হাতের কাজ।

এই রোজনামচা এ বার অন্য মাত্রা পেল।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy