Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Suvendu Adhikari

শুভেন্দুর ‘৩৫৬’, দিলীপের ‘জানি না’

বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে রাজ্য বিজেপির অন্দরের এখন কী হাল, মঙ্গলবার দিনভর তা প্রকট হয়ে গেল একাধিক ঘটনায়।

অমিত শাহের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী। নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার।

অমিত শাহের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী। নয়াদিল্লিতে মঙ্গলবার। ছবি: টুইটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২১ ০৬:৪০
Share: Save:

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করলেন, ৩৫৬ ধারা যে সব কারণে জারি হয়ে থাকে, বাংলার পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ। রাজ্য সরকার সংবিধান, আইন কিছুই মানছে না। দিল্লিতে যখন বিরোধী দলনেতা ওই কথা বলছেন, কলকাতায় দলীয় বৈঠকে ৩৫৬ ধারা জারিরই দাবি তুললেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। আর বৈঠক সেরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করলেন, কী কারণে কার সঙ্গে শুভেন্দু দেখা করতে গিয়েছেন, তার কিছুই তাঁদের জানা নেই!

বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে রাজ্য বিজেপির অন্দরের এখন কী হাল, মঙ্গলবার দিনভর তা প্রকট হয়ে গেল একাধিক ঘটনায়। দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা শুভেন্দু ও মুকুল রায়ের সঙ্গে দিলীপবাবুর সমন্বয়ের অভাব প্রকাশ্যে এল। সামাজিক মাধ্যমে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য পাওয়া গেল একাধিক নেতার কাছ থেকে। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ল না শাসক দল তৃণমূল।

শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার সঙ্গে এ দিন দেখা করার পরে আজ, বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা শুভেন্দুর। নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে হয়ে চলা ‘সন্ত্রাসের ঘটনা’ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের কাছে দরবার করেন শুভেন্দু। পরে তিনি বলেন, ‘‘এ জিনিস বেশি দিন চলতে পারে না। কোনও একটি প্রদেশ বা শাসক দলের লোকেরা যদি মনে করে তাঁরা স্বাধীন দেশের রাজা বা রানি, তা কিন্তু বেশি দিন চলে না। কেন্দ্রে একটি শক্তিশালী সরকার রয়েছে। প্রশাসনের মদতে ওই সন্ত্রাস বেশি দিন চলতে পারে না। মানুষ সব দেখছেন। একটু অপেক্ষা করতে হবে।’’ রাজ্যে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুললেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অবশ্য রাষ্ট্রপতি শাসন বা ৩৫৬ ধারা জারি করার দাবি জানাননি নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘রাষ্ট্রপতি শাসন দাবি করা নিয়ে রাজ্য কমিটি বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমি দলের শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈনিক। তাই ব্যক্তিগত মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া, আমি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। আমার কোনও বক্তব্যকে দলের মত হিসাবে মনে করা হতে পারে।’’ একই সঙ্গে অবশ্য তিনি বলেছেন, ‘‘একটা কথা বলতে পারি, ৩৫৬ ধারা যে সব কারণে লাগানো হয়ে থাকে, তার থেকেও খারাপ পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। যে সরকার প্রধানমন্ত্রীকে মানে না। যে সরকারের মুখ্যসচিব প্রধানমন্ত্রীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান, সেই সরকার কোনও সরকার নয়!’’

একই সময়ে দিলীপবাবু প্রকাশ্যেই বলেছেন, রাজ্যে দলীয় বৈঠক ছেড়ে শুভেন্দু কেন দিল্লি গিয়েছেন, সে ব্যাপারে তাঁদের কাছে কোনও খবর নেই! বিজেপির রাজ্য সভাপতির মন্তব্য, ‘‘আমাদের কিছু জানা নেই। যাঁরা ডেকেছেন, তাঁরা হয়তো বলতে পারবেন! তবে উনি বিরোধী দলনেতা, ওঁর নিশ্চয়ই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।’’ শুভেন্দু আবার এই প্রতিক্রিয়া শুনে পাল্টা দাবি করেছেন, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে তিনি দিল্লি-যাত্রার খবর জানিয়ে এসেছিলেন।

শুভেন্দু যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে দরবার করছেন, প্রায় তাঁর সঙ্গেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তখন সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করছেন, ‘মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা করতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভাল ভাবে নেবে না’। কোভিড ও ‘ইয়াস’-এর ধাক্কায় বিপর্যস্ত মানুষের পাশে থাকার কথা উঠে এসেছে তাঁর পোস্টে। রাজীবের ইঙ্গিত যখন শুভেন্দুর দিকে, রাজীবকেই পাল্টা বিঁধে বিজেপির সাংসদ এবং যুব মোর্চার নেতা সৌমিত্র খাঁ আবার সামাজিক মাধ্যমে কটাক্ষ করেছেন, ‘মন্ত্রী হতে পারেননি বলে আবার কি পুরনো দলে ফিরতে ইচ্ছা করছে’?

এখানেই শেষ নয়! রাজ্য বিজেপির পদাধিকারীদের নিয়ে হেস্টিংসের কার্যালয়ে যে বৈঠক হচ্ছে, তার কথা জানতেন না বলে দাবি করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুকুলবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘বৈঠকের কথা জানতাম না। নিজের যন্ত্রণা নিয়ে আছি।’’ রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘বৈঠকের খবর ওঁকে দেওয়া হয়েছিল। উনি আসার চেষ্টা করবেন বলেছিলেন।’’

রাজ্য বিজেপির নানা নেতাকে জড়িয়ে দিনভর এমন ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘ওঁদের উচিত নিজেদের মধ্যে বসে আগে অন্তর্দ্বন্দ্ব মেটানো। তার পরে তৃণমূলকে নিয়ে ভাববেন!’’

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রাজ্যের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তাঁর এই দিল্লি সফরের সঙ্গে নারদ-কাণ্ডে চার্জশিটের জন্য লোকসভার স্পিকারের কাছে সিবিআইয়ের অনুমতি চাওয়ার কোনও সম্পর্ক আছে কি না, সেই চর্চাও শুরু হয়েছে। সেই জল্পনাই উস্কে দিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ মন্তব্য করেছেন, ‘‘শুভেন্দু বাইরে ৩৫৬ ধারার কথা বলছেন। আমাদের কাছে খবর, নারদ ও সারদায় গ্রেফতার এড়াতে দিল্লিতে দরবার করে বেড়াচ্ছেন। চেষ্টা করছেন, যাতে নারদে তাঁর গ্রেফতারে সিবিআই-কে লোকসভার স্পিকার অনুমতি না দেন!’’ প্রসঙ্গত, দিল্লিতে এ দিনই নড্ডার সঙ্গে দেখা করেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়।

শুভেন্দু যখন দিল্লিতে দরবার করছেন, রাজ্য বিজেপির বৈঠকে তখন সরব হয়েছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুনও। ভাটপাড়ার পরিস্থিতির প্রসঙ্গে তাঁর সওয়াল, হয় পাল্টা মার দরকার নয়তো কেন্দ্রীয় সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ভোটের প্রচারে কেন্দ্রীয় নেতারা এসে যে সব কথা বলেছিলেন, তা মানুষের মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ভোটের প্রচারে বিজেপির হিন্দিভাষী নেতাদের দাপট নিয়ে বৈঠকে সমালোচনার সুর শোনা গিয়েছে সব্যসাচী দত্তের গলাতেও। বৈঠকের পরেও অর্জুন বলেছেন, ‘‘আমার সামনে আমার ভাই খুন হবে, বৌ-মেয়ে ধর্ষণ হবে, তখন তো রাষ্ট্র আমাকে অধিকার দিয়েছে আত্মরক্ষার তাগিদে পাল্টা মারের! আর তা না হলে রাষ্ট্র আমাকে বাঁচাক! মানে ৩৫৬ প্রয়োগ করুক।’’

দিলীপবাবু অবশ্য এই প্রসঙ্গে সরাসরি না গিয়ে জানিয়েছেন, আগামী ২৩ জুন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী থেকে বিজেপি আন্দোলনে নামবে সন্ত্রাস, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা ও রাজ্যের ‘ভ্যাকসিন দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে। সাংসদ-বিধায়কেরাও আন্দোলনে শামিল হবেন। ভোটের পর থেকে সাড়ে ৬ হাজার ঘটনার কথা রাজ্য প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করে দিলীপবাবু জানিয়েছেন, তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করার কথা ভাবছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Dilip Ghosh Amit Shah Suvendu Adhikari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy