রাজভবনের সামনে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
‘আক্রান্ত’ বিজেপি কর্মীদের নিয়ে রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার সন্ধ্যায় রাজভবনের ভিতরে শুভেন্দুকে দেখা যায় ‘আক্রান্ত’ কর্মীদের ছবি বুকে নিয়ে বসে থাকতে। ‘আক্রান্তদের’ নামের তালিকা মিলিয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে থাকা পুরুষ এবং মহিলাদের ঢোকানো হয় রাজভবনে। তাঁদের উদ্দেশে রাজ্যপাল জানান, মোট ১০২৫টি অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। তিনি এই হিংসার শেষ দেখে ছাড়বেন। সাক্ষাতের সময় রাজ্যপাল বাংলাতেই বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্ট একটা অর্ডার করেছে। তাতে তারা আশ্চর্য যে, রাজ্যপাল গৃহবন্দি রয়েছেন। কারণ, যাঁদের উপর হিংসা হয়েছে, তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা বাংলাকে হিংসামুক্ত করব। আমি নেতাজির নামে শপথ করে বলছি, রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দের নামে শপথ করে বলছি, শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।’’ রাজ্যপাল জানান, আক্রান্তেরা যত ক্ষণ তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন, তত ক্ষণ স্বরাষ্ট্র দফতরের কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। পাশপাশি শুভেন্দু তাঁর দলের কর্মীদের উপর হিংসার ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন রাজ্যপালকে। দুর্গাপুজো পর্যন্ত বাংলায় যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকে, সেই আর্জি জানান রাজ্যপালকে। পরে রাজভবন থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে বলেছি বাংলায় গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভই আক্রান্ত। পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের রেশন কার্ড নিয়ে নেওয়া হয়েছে। গবাদি পশু পর্যন্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’
শনিবার শুভেন্দু কোচবিহারে ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’য় আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানেই তিনি জানিয়েছিলেন, কলকাতায় ফিরে রবিবার রাজভবনে যাবেন। শুক্রবার ওই কথাই জানিয়ে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। বস্তুত, এর আগে ‘আক্রান্তদের’ নিয়ে রাজভবনে যেতে না পারায় আদালতে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে তিনি জানান, অনুমতি থাকার পরেও আক্রান্তদের নিয়ে তাঁকে রাজভবন যেতে বাধা দেয় পুলিশ। শুনানিতে আদালত জানিয়ে দেয়, আবার রাজভবন যেতে চাইলে নতুন করে অনুমতি নিতে হবে শুভেন্দুকে। শনিবার সেই অনুমতিও পান।
অন্য দিকে, ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি সরগরম তখন একাধিক মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল বোসও। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরেও হিংসার অভিযোগ উঠেছিল। তার জেরে কলকাতা হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। এ বারও বিজেপি সেই একই অভিযোগ করার প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল তাঁর বার্তায় বলেছিলেন, ‘‘নিরাপরাধ মানুষদের বন্দুকের নলের সামনে রাখা হচ্ছে। রাজ্য সরকার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ। রাজ্যপাল হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকব না।’’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান শুভেন্দু। রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা ছিল তাঁদের। যদিও শেষ পর্যন্ত রাজভবনের ভিতরে ঢুকতে পারেননি তাঁরা। শুভেন্দুর অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের বাধা দিয়েছে। সে কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ফিরে যেতে বাধ্য হন তাঁরা। তার পরই ‘আক্রান্ত’দের থাকার ব্যবস্থা করা হয় মাহেশ্বরী ভবনে। শুক্রবার রাজ্যপাল বোস উত্তর কলকাতার মাহেশ্বরী ভবনে ‘ঘরছাড়া’ বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁদের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসে তিনি জানান, এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের থেকে রিপোর্ট তলবও করেছেন। সেখানে দাঁড়িয়েই রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। কেন রাজভবনে ঢুকতে বাধা দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘এটা সংবিধান বিরোধী।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে বেশ কিছু অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। আমি কিন্তু চুপ করে থাকব না। আমার সঙ্গে কেউ দেখা করতে এলে তাঁদের আটকানো উচিত নয়। এই ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
অন্য দিকে, চার সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল রাজ্যে আসছে ভোট পরবর্তী ‘হিংসা’ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। এই আবহে গোটা বিষয়ে রাজ্য সরকারের থেকে রিপোর্ট তলব করেছেন রাজ্যপাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy