ফের আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষিত চিকিৎসকের মৃত্যু নিয়ে সরব বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন তিনি। সেই পোস্টে শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন, মেয়ের মৃত্যুর আট মাস পরেও চিকিৎসকের মা-বাবা পাননি মৃত্যুর শংসাপত্র। সরকারি দফতরের দরজায় দরজায়, টেবিলে টেবিলে ঘুরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। বিজেপি নেতা শুভেন্দুর এমন অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়েছে শাসক তৃণমূল। কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বিরোধী দলনেতাকে বিদ্ধ করেছেন মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগে। পাশাপাশি প্রয়াত চিকিৎসকের মা-বাবাকে সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘২০২৪ সালের ৯ অগস্ট অভয়ার মৃত্যু হয়েছে। ওই দিন তৃণমূল নেতা এবং কলকাতা পুলিশ তড়িঘড়ি অভয়ার মৃতদেহ পুড়িয়ে দিয়েছে।’’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘আশ্চর্যজনক ভাবে তাঁর বাবা মা এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর শংসাপত্র পাননি। শংসাপত্রের জন্য তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য ভবন, কলকাতা পুরসভা এবং আরজি কর মেডিকেল কলেজ তাঁদের এক অফিস থেকে অন্য অফিস এবং এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে যেতে বাধ্য করছেন।’’ নন্দীগ্রাম বিধায়কের কথায়, ‘‘নির্যাতিতার মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ওই বিষয়ে মনে হচ্ছে অফিসারেরা খুবই সতর্ক। তাই বিষয়টি মন্থর গতিতে এগোচ্ছে।’’ প্রশাসনের এমন উদাসীনতা নিয়ে শুভেন্দু সরাসরি আক্রমণ জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে।
বিরোধী দলনেতা লিখেছেন, ‘‘রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে বলব আর যেন বাবা-মা হয়রান না হন এবং মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে কোনও বাধা না থাকে সে দিকে নজর দিন।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারদের কাছে আর্জি জানাব, মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের গাছাড়া মনোভাবের বিষয়টির উপরও একটু নজর দিন। ঢিবির নীচে কি পাহাড় আছে?’’ শাসকপক্ষের হয়ে যিনি বিরোধী দলনেতার অভিযোগের জবাব দিয়েছেন তিনি আবার কাশীপুর বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। যে বিধানসভা কেন্দ্রে অবস্থিত আর জি কর হাসপাতালে ওই চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। জবাবে অতীন বলেছেন, ‘‘বিরোধী দলনেতা দীর্ঘদিন পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রী পদেও তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়ার নিয়ম জানেন না, এমনটা হতে পারে না। আসলে মৃত্যু নিয়ে তিনি রাজনীতি করতে চাইছেন বলেই এমন অভিযোগ করেছেন।’’
আরও পড়ুন:
ডেপুটি মেয়র আরও বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি সরকারি হাসপাতালে মারা গেলে শ্মশানঘাটে তাঁর দেহ দাহ করার শংসাপত্র নিয়ে গেলেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর শংসাপত্র মেলে। এ ক্ষেত্রে ওই চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছিল আরজি কর হাসপাতালে, সেখানেই তাঁর ময়নাতদন্ত হয়েছিল। তাঁকে দাহ করা হয় পানিহাটি পুরসভা এলাকার একটি শ্মশানে। সেখান থেকে পাওয়া শংসাপত্রটি নিয়ে আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষ কিংবা এমএসভিপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেই তাঁরা মেয়ের মৃত্যু শংসাপত্র এত দিনে পেয়ে যেতেন। রাজনীতি করার লক্ষ্যেই হয়তো তাঁদের এই উপায়টি জানানো হয়নি।’’ যদিও শুভেন্দু নিজের এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইট স্পষ্ট ভাবে রয়েছে। মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে কী পদ্ধতি রয়েছে। মৃত্যুর পরে কোনও হাসপাতাল, চিকিৎসক অথবা শ্মশান থেকে শংসাপত্র দেখালে সেখানেই মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়া যাবে।’’ কলকাতা ডেপুটি মেয়র অতীন আশ্বাস দিয়েছেন, যদি শংসাপত্র পেতে প্রয়াত চিকিৎসকের মা-বাবা তাঁর দ্বারস্থ হন তিনি সবরকম সাহায্য করবেন।