মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর রবিবার শুভেন্দুর প্রথম সভার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে রাজ্য এবং দেশের রাজনৈতিক মহলের। —ফাইল চিত্র।
শুক্রবার মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। শনিবার প্রায় দিনভর কাঁথির বাড়িতেই কাটিয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কারও সঙ্গে দেখা করলেন না। কথাও বললেন না বাইরের কারও সঙ্গে। মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর আগামিকাল রবিবার মহিষাদলে তাঁর প্রথম সভা। সদ্যপ্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী রণজিৎ বয়ালের স্মরণসভায় বলবেন শুভেন্দু। প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর মন্ত্রী না-থাকা শুভেন্দুর এটাই প্রথম সভা। এই সভা নিয়ে নানা রাজনৈতিক জল্পনা তৈরি হয়েছে। তীক্ষ্ণ নজরও রয়েছে রাজ্য এবং দেশের রাজনৈতিক মহলের। তবে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের অনেকেরই মতে, এখান থেকে তাঁর রাজনৈতিক কথা বলার সম্ভাবনা কম।
শনিবারও থমথমে ছিল কাঁথির রাজনৈতিক হাওয়া। তার থেকেও বেশি নিস্তব্ধ হাতাবাড়ির ‘শান্তিকুঞ্জ’। এখানেই থাকে অধিকারী পরিবার। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন তিনি। মা গায়ত্রীদেবীর অসুস্থতার কারণে শনিবার তিনি বাড়ি থেকে বেরোননি। তৃণমূল নেতা সৌগত রায়ও শুভেন্দুর মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। তবে গতকালের মতো শনিবারও শান্তিকুঞ্জের মূল গেটের সামনে এক জন সশস্ত্র রক্ষীকে দেখা গিয়েছে। বাড়িতে কাউকে ঢুকতে বা বেরোতে তেমন ভাবে দেখা যায়নি।
শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ব্যক্তিগত গাড়িতে কাঁথির বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। দিঘা-মেচেদা সড়ক ধরে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন। তবে মন্ত্রী শুভেন্দুর পদত্যাগপত্র কলকাতায় পৌঁছে গেলেও তিনি থেকে গিয়েছিলেন কোলাঘাটের একটি গেস্ট হাউসে। দিনভর যখন শুভেন্দুকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল, তিনি তখন ওই গেস্ট হাউসেই নিজেকে ‘বন্দি’ রেখেছিলেন। গোটা দিন কারও সঙ্গেই দেখা করেননি। অন্য কোথাও যানওনি। তবে শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র জানিয়েছে, ওই সময়টায় তিনি বেশ ক’জন সাংবাদিক-সহ তাঁর বিশ্বস্ত কয়েক জনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামী রণজিৎ বয়ালের স্মরণসভার প্রস্তুতির বিষয়ে খোঁজখবরও নেন। রাত প্রায় সাড়ে ৯টার পর তিনি কোলাঘাট ছেড়ে কাঁথির বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। মায়ের অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় দুপুরের পর তাঁর চিকিৎসার জন্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন শুভেন্দু। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
নিস্তব্ধ শুভেন্দুর কাঁথির বাড়ি ‘শান্তিকুঞ্জ’। —নিজস্ব চিত্র।
শনিবারই কোলাঘাটে পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সেখানে তিনি জানান, আগামী ৭ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় পূর্ব মেদিনীপুরের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর দিনই হুগলির কোন্নগরে তাঁর ব্যানার ছিঁড়ে, পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। —নিজস্ব চিত্র।
শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছাড়ার আগে থেকেই তাঁর সমর্থনে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার টাঙানো হয়। কিন্তু মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর দিনই সেই ব্যানার ছিঁড়ে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে হুগলির কোন্নগরে। এই কাজের জন্য ‘দাদার অনুগামী’রা তৃণমূলকে দায়ী করে। তার প্রেক্ষিতে কোন্নগরের কানাইপুর গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য ভবেশ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে দল করি। এখানে কেউ দাদার অনুগামী নেই। এ রকম ব্যানার আমরা মানব না।’’ স্থানীয় বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল যদিও বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখব কী হয়েছে এবং কেন হয়েছে। এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোলাজলে মাছ ধরতে নেমেছে। তাই এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’’
আরও পড়ুন: শুভেন্দু দলত্যাগ করবেন ধরেই কৌশল সাজাচ্ছেন মমতার সৈনিকরা
আরও পড়ুন: কমিশনে সম্পত্তির ভুল তথ্য দিয়েছেন অর্জুন, অভিযোগ তৃণমূলের
শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর দিন তাঁর নাম না করে তাঁকে কটাক্ষ করেছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ‘দাদার অনুগামী’দের ব্যানার-পোস্টার সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সে তো মেদিনীপুরেও আমার পোস্টার ঝোলে। তাতে কী এসে যায়!’’ বীরভূমে ‘দাদার অনুগামী’দের পোস্টার পড়লেও যে তার কোনও প্রভাব জেলায় পড়বে না, সে কথাও বলেন অনুব্রত।
শনিবার রিষড়ার সভায় শুভেন্দুকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দুকে। তিনি বলেন, ‘‘শুভেন্দু ওঁর ইচ্ছামতো মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন। সে বিষয়ে কিছু বলার নেই। আর একটা জিনিস— পশ্চিমবাংলায় যে যেখানে জিতেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখিয়ে জিতেছে। ২৯৪টা সিটের মধ্যে ওঁর (শুভেন্দুর) কেন্দ্রওটাও পড়ে। মমতা’দি যখন বলেছিলেন, উনিই ২৯৪টা আসনে প্রার্থী, তখন কিন্তু উনি (শুভেন্দু) সাহস করে বলতে পারেননি যে, দিদি আমিই প্রার্থী। আমার জন্যই এই কেন্দ্র (নন্দীগ্রাম) শক্তিশালী হয়েছে!’’
অথচ যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই শুভেন্দু ছিলেন আন্তরালেই। রবিবার সামনে আসবেন। কিছু বলবেন কি? তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy