Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bengal SSC Recruitment Verdict

২৬ হাজার চাকরি আপাতত বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট! চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগে জোর ‘যোগ্যতা’ প্রমাণেই

‘দুর্নীতি’র অভিযোগে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো প্যানেলটিই বাতিল করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।

Graphical Representation

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ২৩:২০
Share: Save:

কলকাতা হাই কোর্টের বিশেষ বেঞ্চের রায়ে চাকরি গিয়েছিল যাঁদের, তাঁদের চাকরি আপাতত বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। তবে ‘আপাতত’। এ ব্যাপারে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছিল তাতে স্থগিতাদেশ দিয়ে দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, আগামী ১৬ জুলাই এ সংক্রান্ত পরবর্তী শুনানি হবে। ‘প্রমাণিত অযোগ্যদের’ বেতনের টাকা ফেরতের রায়েও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। কিন্তু, এই মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য-অযোগ্য বাছাই এবং বাছাইয়ের সূত্র যে গুরুত্বপূর্ণ, তা-ও শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ।

‘দুর্নীতি’র অভিযোগে ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো প্যানেলটিই বাতিল করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তাতে চাকরি যায় ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর। পাশাপাশি, যাঁরা ‘সাদা খাতা’ জমা দিয়ে কিংবা মেয়াদ উত্তীর্ণ সময়ে চাকরি পেয়েছেন, সেই ‘অযোগ্য’দের সুদসমেত বেতন ফেরানোর নির্দেশও দিয়েছিল হাই কোর্ট। এ ছাড়া ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ নতুন চাকরি দিতে রাজ্য মন্ত্রিসভা যে সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি করেছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে হাই কোর্ট। এই সিদ্ধান্তের জন্য সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে। রায়ে বলা হয়েছিল, সিবিআই প্রয়োজন মনে করলে মন্ত্রিসভার কোনও সদস্যকে এই তদন্তে হেফাজতে নিয়েও জেরা করতে পারবে। গত ২৯ এপ্রিলের শুনানির পরে, মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে এই তদন্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই আদেশও মঙ্গলবার বহাল রাখা হল। হাই কোর্টের রায়ের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ দেওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবারের নির্দেশের পর মমতা এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে ন্যায় প্রাপ্তির পর আমি বাস্তবিকই খুব খুশি এবং মানসিক ভাবে তৃপ্ত। সামগ্রিক ভাবে শিক্ষক সমাজকে জানাই আমার অভিনন্দন এবং মাননীয় সুপ্রিম কোর্টকে জানাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা।”

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ঠিক কী নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিচ্ছে তারা। কেন এই নির্দেশ, তার ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলে, ‘‘যদি যোগ্য এবং অযোগ্য আলাদা করা সম্ভব হয়, তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ন্যায্য হবে না।’’ স্থগিতাদেশ থাকবে বেতন ফেরানোর নির্দেশেও। তবে চাকরি বহাল রাখলেও এই ২৫,৭৫৩ জনকেই ‘মুচলেকা’ দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, এ ক্ষেত্রে পরে যাঁদের নিয়োগ ‘অবৈধ’ বলে প্রমাণ হবে, তাঁদের প্রত্যেককে টাকা ফেরত দিতে হবে।

হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

হাই কোর্টের চাকরি বাতিলের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

এরই পাশাপাশি, সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি করা নিয়ে বাংলার মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে যে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাতেও স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, সিবিআই তদন্ত করতে পারবে ‘অবৈধ নিয়োগ’ সংক্রান্ত অন্য মামলাগুলি নিয়ে। তবে তদন্ত করলেও কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। আপাতত এই সংক্রান্ত পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ১৬ জুলাই। অর্থাৎ লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের এক মাস ১২ দিন পর আবার শুনানি হবে এসএসসি-র ‘চাকরি বাতিল’ সংক্রান্ত মামলার। তবে হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিলেও সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে হাই কোর্টের রায়ে ভুল ছিল না।

হাই কোর্টের রায় যথার্থ

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের যে সিদ্ধান্ত কলকাতা হাই কোর্ট নিয়েছিল, তা যথার্থ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ‘‘হাই কোর্টের রায় সম্পূর্ণ ঠিক এবং সন্দেহাতীত। চাকরি খারিজের যে সিদ্ধান্ত হাই কোর্ট নিয়েছিল, তা বৈধ।’’ কারণ ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘‘যে দুর্নীতি হয়েছে, তা যে ভবিষ্যতে আর হবে না, তা কে বলবে? এ ব্যাপারে রাজ্য বা এসএসসি কেউই এমন পর্যায়ে নেই যে, এই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারে। সে ক্ষেত্রে হাই কোর্টের সিদ্ধান্তে তো কোনও ভুল নেই। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে হাই কোর্ট যা রায় দিয়েছে তা যথার্থ।’’

হোঁচট যোগ্য-অযোগ্য যুক্তিতে

হাই কোর্ট যদি সন্দেহাতীত হয়, তবে স্থগিতাদেশ কেন? সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, তার কারণ ‘‘যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ আদালত বলেছে, ‘‘পৃথকীকরণ যদি সম্ভব হয় তবে শুধু তাঁদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করা হোক যাঁদের বিরুদ্ধে আসল অভিযোগ।’’ এ নিয়ে এসএসসি, রাজ্য এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বক্তব্যকেও গুরুত্ব দিয়ে শুনেছে সুপ্রিম কোর্ট।

দীর্ঘ শুনানি এসএসসি-র

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের যে সিদ্ধান্ত কলকাতা হাই কোর্ট নিয়েছিল, তা যথার্থ।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের যে সিদ্ধান্ত কলকাতা হাই কোর্ট নিয়েছিল, তা যথার্থ।

সুপ্রিম কোর্টে মঙ্গলবার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি চলে দীর্ঘ ক্ষণ। চার ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ধরে এসএসসি-র চাকরি বাতিল মামলার সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শোনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ। সকাল ১১টা ১৩ নাগাদ শুনানি শুরু হয়। মাঝখানে এক ঘণ্টার বিরতি নিয়ে বিকেল ৪টে পর্যন্ত চলে সেই শুনানি পর্ব। তবে আদালত যেমন মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত পক্ষ— রাজ্য, এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, ‘চাকরিহারা’ এবং তাঁদের বিপরীত পক্ষ অর্থাৎ মূল মামলাকারীদের বক্তব্য শুনেছে, তেমনই প্রত্যেকের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নিজেদের ‘বিশেষ’ পর্যবেক্ষণ এবং মন্তব্যও জানিয়েছে। সেই মন্তব্য কখনও পৌঁছেছে ‘ভর্ৎসনা’র পর্যায়ে। কখনও বার বার একই প্রশ্নের আঘাতে বেসামাল হয়েছেন বিবিন্ন পক্ষের আইনজীবীরা।

রাজ্য এবং সুপারনিউমেরারি কাঁটা

মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করছিল রাজ্য। রাজ্যের স্কুলগুলিতে অতিরিক্ত নিয়োগের জন্য যে সুপারনিউমেরারি পদ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার সে ব্যাপারেই প্রশ্ন তুলে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে ওই নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার সে প্রসঙ্গেই রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘‘বেআইনি নিয়োগ ঢাকতে বা আদালতকে বোকা বানাবে বলে রাজ্য সুপারনিউমেরারি পদ তৈরি করেনি। বরং বেআইনি নিয়োগকে দূরেই রাখা হয়েছিল এই পদ থেকে।’’ যদিও রাজ্যের এই যুক্তিতে ‘মন গলেনি’ সুপ্রিম কোর্টের। তাঁরা বার বার রাজ্যের কাছে জানতে চায়, ঠিক কেন তৈরি করা হয়েছিল ওই সুপারনিউমেরারি পদ। শেষে ‘রাজ্যের কোনও খারাপ অভিসন্ধি ছিল না, মন্ত্রিসভা কোনও নিয়োগও করেনি’ জানিয়ে নিষ্কৃতি পায় রাজ্য।

এসএসসি এবং ওএমআর

ওএমআর শিট নষ্ট হওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একের পর এক ‘ভর্ৎসনা’য় এক সময় ধরাশায়ী হয়ে পড়ে এসএসসি।

ওএমআর শিট নষ্ট হওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একের পর এক ‘ভর্ৎসনা’য় এক সময় ধরাশায়ী হয়ে পড়ে এসএসসি।

চাকরি বাতিল আদালতের এক্তিয়ারে পড়ে না বলে সওয়াল শুরু করেছিল এসএসসি। থামতে হল ‘পদ্ধতিগত জালিয়াতি’র অভিযোগে। ওএমআর শিট নষ্ট হওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একের পর এক ‘ভর্ৎসনা’য় এক সময় ধরাশায়ী হয়ে পড়ে এসএসসি। প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য অন্য সংস্থার হাতে তুলে দিলেন আপনারা! এটা কি আপনাদের দায়িত্বশীল কাজ? আপনারা নাইসাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আর সেই নাইসা অন্য এক সংস্থাকে নিয়ে আপনাদের অফিসে ঢুকে গেল! অদ্ভুত ব্যাপার, সেটা আপনারা জানলেনও না। এটা কী ভাবে হয়? আপনাদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল সব তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার। এখানে তো দেখা যাচ্ছে ‘বড় মাপে’র নিরাপত্তা লঙ্ঘন হয়েছে!’’ আদালত এসএসসিকে প্রশ্ন করে, ‘‘এত দিন তা হলে তথ্য জানার অধিকারে যা যা বলতেন, সে সব অসত্য ছিল?’’

পর্ষদের পরিতাপ

মধ্যশিক্ষা পর্ষদও মামলা করেছিল সুপ্রিম কোর্টে। তারা অবশ্য আদালতের কাছে ‘কাতর আর্জি’ জানিয়েছে। পর্ষদ আদালতকে বলেছে, “সবার চাকরি চলে গেলে শিক্ষক পাব কোথা থেকে? সিনিয়র শিক্ষকদের চাকরি চলে যাচ্ছে। এর পরে আগামিদিনে স্কুলগুলির জন্য প্রধানশিক্ষক পাওয়া যাবে না।’’ একই সঙ্গে পর্ষদের আইনজীবীর সওয়াল, ‘‘মাথাব্যথা হচ্ছে বলে পুরো মাথা কেটে দেব এটা হতে পারে না! যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হলে যোগ্যদের চাকরি রাখা হোক।’’

চাকরিহারাদের যুক্তি

আপাতত চাকরি বহাল থাকলেও হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি গিয়েছিল যাঁদের, তাঁদের আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন, সিবিআইয়ের উদ্ধার করা ওএমআর শিটের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। তাঁদের বক্তব্য, যে প্রমাণের ভিত্তিতে ২৬ হাজার চাকরি খারিজ হল, সেই প্রমাণ যে বিশ্বাসযোগ্য তা-ই এখনও প্রমাণ হয়নি। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই সমস্ত ওএমআর শিটের বৈদ্যুতিন তথ্যের ৬৫বি এভিডেন্স আইন অনুযায়ী কোনও সার্টিফিকেটও নেই। তা হলে তার ভিত্তিতে কী করে এক কথায় ২৬ হাজারের চাকরি যায়? যখন সুপ্রিম কোর্ট জানতে চায়, তবে কি ওই ওএমআর শিট থেকে যোগ্যদের আলাদা করা যাবে না? তখন নিজেদের বক্তব্য থেকে কিছুটা সরে ‘চাকরিহারা’দের আইনজীবীরা বলেন, ‘‘যদি ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সঠিক ভাবে করা হয়ে থাকে, তবে প্রমাণ করা যাবে।

বিপরীত পক্ষের বক্তব্য

যাঁদের করা মামলার ভিত্তিতে এসএসসি নিয়োগ মামলার সূত্রপাত, সেই মূল মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য হাজির ছিলেন সুপ্রিম কোর্টে। আদালতকে বিকাশ বলেন, ‘‘টাকার বিনিময়ে বাজারে চাকরি বিক্রি করা হয়েছে। ২৩ হাজার ১২৩ চাকরির সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। বেআইনি নিয়োগ হয়েছে ৮,৩২৪ জনের।’’ বিচারপতি বিকাশকে প্রশ্ন করেন, ‘‘তা হলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল চাইছেন কেন?’’ বিকাশ বলেন, ‘‘কারণ এটা একটা বিরাট দুর্নীতি হয়েছে। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই অবৈধ।’’ বিকাশের এই বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ হলে সম্পূর্ণ নিয়োগ বাতিল করাই তো স্বাভাবিক।’’

এল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রসঙ্গও

বর্তমানে তিনি বিজেপি নেতা। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে তমলুকের বিজেপি প্রার্থীও। কিন্তু কিছুদিন আগে ছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি। প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ই প্রথম নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন সিবিআই তদন্তের নির্দেশও। ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে প্রথম চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ই। সেই সংক্রান্ত মামলাই হাই কোর্ট ঘুরে এখন সুপ্রিম কোর্টে। আদালতে ‘চাকরিহারা’দের আইনজীবী বলেন, ‘‘প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিচার বিভাগীয় কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর নির্দেশের ভিত্তিতেই এই গোটা মামলার ফল হয়েছে। এত জনের চাকরি গিয়েছে। অথচ এই তিনিই এক সাক্ষাৎকারে নিজের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা বলছিলেন। চাকরি বাতিলের কথাও বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন যে কোনও দল তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।’’ আদালতে এই প্রসঙ্গ উঠতেই অবশ্য আইনজীবীকে থামিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ওঁর আচরণের বিচার করতে বসিনি আজ।’’

আবার যোগ্য অযোগ্য প্রশ্ন

কিন্তু পুরো বিষয়টিই আটকে রইল সেই যোগ্য অযোগ্যের প্রশ্নে। আদালতকে এসএসসি বলেছিল, সিবিআইয়ের উদ্ধার করা ওএমআর শিট থেকেই যোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব। কিন্তু চাকরিহারাদের আইনজীবীরা আদলতকে বলেন, সিবিআই যে ওএমআর শিট উদ্ধার করেছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ওই সমস্ত ওএমআর শিট পাওয়া গিয়েছে ওএমআর মূল্যায়নকারী সংস্থা নাইসার প্রাক্তন কর্মী পঙ্কজ বনসলের বাড়ি থেকে। তবে একইসঙ্গে তাঁরা আদালতকে এও বলেন যে, ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ সঠিক ভাবে হলে সিবিআইয়ের তালিকা থেকেই যোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব। যোগ্যদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে পর্ষদও। যার ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট যোগ্যদের চাকরি পাওয়ার পক্ষে সংক্ষিপ্ত নির্দেশ দিয়েছে।

তবে নিষ্পত্তি হল না মামলার

মামলার নিষ্পত্তি হল না। কারণ কোর্ট জানিয়েছে, অবৈধ নিয়োগ নিয়ে মামলায় এখনও তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবে সিবিআই। অন্য দিকে, শুনানিও চলবে সুপ্রিম কোর্টে। ফলে ২৫,৭৫৩ চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ এখনও রয়ে গেল আশা-নিরাশার দোলাচলেই। ‘সুপ্রিম নির্দেশ! তাতে সাময়িক স্বস্তি দিলেও শান্তি দিল না। তবু এই রায়কেই স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন মহল।

কে কী বললেন?

রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু সুপ্রিম কোর্টের সংক্ষিপ্ত নির্দেশ প্রসঙ্গে বলেন, “আমি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে খুশি। তবে এসএসসি হাই কোর্টে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা দেয়নি, এটা সংবাদমাধ্যমের তৈরি করা গল্প। এসএসসি-র বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। এসএসসি কোনও পরস্পরবিরোধী কথা বলেনি।” সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর বিকাশ বলেন, ‘‘আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। চাকরি বহাল থাকছে। ওদের একটা মুচলেকা দিতে হবে। সিবিআই তদন্ত চালিয়ে যাবে।” তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, ‘‘বাংলার ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিজেপি যে ‘বোমা’ ছুড়েছিল, তা নিষ্ক্রিয় করল মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট। সত্যের জয় হয়েছে।” অন্য দিকে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বা তৃণমূল কংগ্রেস বার বার যে কথা বলছিল— মানবিকতার কথা, চাকরি না খাওয়ার কথা, তারই ইতিবাচক প্রতিফলন আপাতত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বোঝা যাচ্ছে।’’ তবে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েও বলেন, “সিবিআই তদন্ত করবে। তাই, বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে মনে করার কারণ নেই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy