রাজ্যের দিকে দিকে উৎসবের আনন্দে তৃণমূল নিজস্ব চিত্র
রবিবার। ১৬ আশ্বিন, ৩ অক্টোবর। দ্বাদশী তিথি। আরও তিন দিন পরে ৬ অক্টোবর অমাবস্যা তিথিতে মহালয়ার দিনে হবে পিতৃপক্ষের অবসান। বাংলায় ৭-এ শুরু দেবীপক্ষ। গোটা দেশে নবরাত্রি পর্ব।
পঞ্জিকার এই সব তিথি বিশ্লেষণের পরোয়া নেই তৃণমূলে। তাদের কাছে চার দিন আগে রবিবারই এসে গেল দেবীপক্ষ। কোথায় যেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মন্ত্রিত কণ্ঠধ্বনিতে শোনা যাচ্ছে— ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর;ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা...’
জিতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। পাঁচ মাস আগে বিপুল জয়ের প্রদীপ জ্বলে উঠলেও তার তলায় যেন রয়ে গিয়েছিল এক চিলতে আঁধার। রবিবার সে আঁধার উবে আরও আলোকিত দীপ। বরং, তৃণমূলের অন্তরে-অন্দরে যেন বাজেছে বীরেন্দ্র বাণী— ‘প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা। আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।’ শাসকদলের যাঁরা সত্যিই মমতাকে মাতৃরূপে কল্পনা করেন, রবিবার তাঁদের চোখে ও মনে সত্যিই তো, ‘আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।’
মমতা যে জিতবেন তা সবারই জানা ছিল। প্রতিপক্ষ বিজেপি-ও প্রচারে যা বলতে হয় তাই বললেও গণনা শুরুর আগে কোনও মন্তব্যের ঝুঁকি নেয়নি। রবিবার সকাল থেকে মমতা ক্রমশ জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েই গিয়েছেন। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার অনেক আগেই তাই নেচে উঠেছে তৃণমূল-বাংলা। গেয়ে উঠেছে আগমনী গান। কালিম্পং থেকে ক্যানিং— সর্বত্র শরতের নীল-সাদা আকাশ বারবার ঢেকে দিয়ে পড়েছে সবুজ আবিরের তাথৈ তাথৈ নাচ।
একই দিনে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরেও জয় পেয়েছে তৃণমূল। ভবানীপুরে সে অর্থে লড়াই ছিল না। নিশ্চিতই ছিল জয়। তবু একটি আসনে জয়ই তৃণমূলের কাছে যেন পাঁচ মাসের ব্যবধানে পরপর দু’দুবার বাংলা বিজয়। কারণ, বিজয়ীর নাম মমতা। বিরোধীদের হাতে থাকা ‘না-বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী’ অস্ত্র মুছে গেল। শুধু সেটাই নয়, আসলে ভবানীপুরে মমতার বড় ব্যবধানে জয় তো তৃণমূলের কাছে অনেক কিছুর জবাব।
সেই জবাব দেওয়ার কাজটা শেষ। এ বার পুজো শুরু। তৃণমূলের নামজাদা নেতারা সকলেই মহানগরের বিভিন্ন নামকরা পুজোর সঙ্গে যুক্ত। সে সব পুজোর প্রস্তুতি চলতে থাকলেও ভবানীপুরে ‘বড়’ জয় নিশ্চিত করার কাজে ব্যস্ত নেতারা কেউই প্রায় মণ্ডপ তৈরিতে মন দিতে পারেননি। রবিবার পুজোর ছুটি মিলল। ততটা খ্যাতির আলোয় না থাকা বিভিন্ন জেলা থেকে ব্লক স্তরের তৃণমূল নেতাদের মনও আটকে ছিল ভবানীপুরে। এ বার সবার মন উৎসবের উল্লাসে মেতে ওঠার ছুটি পেল। এসে গেল পুজো। পঞ্জিকা সরিয়ে শুরু হয়ে গেল মনের দেবীপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy