তেষ্টা মেটাতে। শুক্রবার মধ্য কলকাতায়। ছবি: সুমন বল্লভ।
তাপপ্রবাহ নেই। শুকনো গরমের জ্বলুনিটাও কম। তবু কলকাতায় অস্বস্তির মাত্রা ক্রমে ঊর্ধ্বমুখী! হাওয়া অফিসের হিসেবে, শুক্রবার মহানগরে অস্বস্তিসূচক ছিল ৬৮, যা কিনা এ মরসুমের সর্বোচ্চ!
আর এই পরিস্থিতির পিছনে বঙ্গোপসাগর থেকে ঢুকে পড়া জলীয় বাষ্পকেই দায়ী করছেন আবহবিদেরা। পরিমণ্ডলের তাপমাত্রা ও বাতাসের আর্দ্রতা— দুয়ের গড় কষে হাওয়া অফিস অস্বস্তিসূচক নির্ধারণ করে। সূচক ৫৫ পর্যন্ত থাকলে তা স্বাভাবিক। ৬০ ছুঁয়ে ফেললে অস্বস্তির শুরু। সূচক ৬৫ বা তার বেশি উঠে গেলে বলা যেতে পারে, পরিবেশ চরম অস্বস্তিদায়ক।
সেই নিরিখে এ দিন কলকাতা তথা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গবাসীর অস্বস্তি ছিল তুঙ্গে। বাসে-ট্রেনে গরমের সঙ্গে তুমুল আর্দ্রতার যুগলবন্দি মানুষকে ঘামিয়ে-নাইয়ে প্রায় কাঁদিয়ে ছেড়েছে।
অন্য দিকে টানা তাপপ্রবাহে জ্বলে পুড়ে ফুটিফাটা হয়ে গিয়েছে পশ্চিমের জেলাগুলো। সেখানে আর্দ্রতার লেশমাত্র নেই, শুধু শুকনো গরমের গনগনে আঁচ। বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুরে এ দিনও তাপপ্রবাহ বয়েছে। বাঁকুড়ায় থার্মোমিটারের পারা উঠে গিয়েছে ৪৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। মানে, স্বাভাবিকের ৬ ডিগ্রি বেশি। শ্রীনিকেতনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও (৪৩ ডিগ্রি) তা-ই। আসানসোল, পুরুলিয়া, বর্ধমানের তা ৪২-৪৩ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস: ওই তল্লাটে আগামী ক’দিন তাপপ্রবাহ চলবে।
পশ্চিমাঞ্চলে শুকনো গরম বা তাপপ্রবাহ অস্বাভাবিক নয়। তবে এই সময়টায় কালবৈশাখীও হানা দেয়। ক’দিন তাপমাত্রা হুড়মুড়িয়ে বাড়ার পরে একটা ঝড়-বৃষ্টি হয়ে সাময়িক শান্তি আসে। এ বার কিন্তু তেমনটা হচ্ছে না। কেন?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা: এই সময়ে ছোটনাগপুর মালভূমির হাওয়া গরম হয়ে উপরে উঠে যায়। তার শূন্যস্থান পূরণ করতে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে ছুটে যায় জোলো বাতাস। ঠান্ডা ও গরম হাওয়ার সংমিশ্রণে উল্লম্ব মেঘ তৈরি হয়। সেটাই শেষে কালবৈশাখী হয়ে আছড়ে পড়ে। পশ্চিমাঞ্চলের আকাশে এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া বজ্রগর্ভ মেঘ উড়ে এসে কলকাতা ও আশপাশেও স্বস্তির ঝড়-বৃষ্টি নামায়।
কিন্তু এই নিয়মে এ বার যেন ব্যতিক্রম! এ বার পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে উচ্চচাপ বলয় না-থাকায় স্থানীয় পরিমণ্ডলে ঝাড়খণ্ডের গরম হাওয়া ঢুকে পড়ছে। উল্লম্ব মেঘ তৈরির হওয়ার সুযোগ থাকছে না। ফলে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার মতো খাস কলকাতাও ‘লু’-এ পুড়েছে।
এখন সঙ্গে জুড়েছে আর্দ্রতার অস্বস্তি। হাওয়া অফিস ভরসা দিতে পারছে না। বৃষ্টির প্রশ্ন শুনলেই কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, ‘‘আশা নেই, আশা নেই।’’ তিনি জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ উপকূলের একটি নিম্নচাপ-অক্ষরেখার দৌলতে দক্ষিণবঙ্গে খানিক জোলো হাওয়া ঢুকছিল। তাতে তাপমাত্রা কমলেও প্যাচপ্যাচে ঘামে নাকাল হতে হয়েছে। তবে নিম্নচাপ-অক্ষরেখাটি এখন দুর্বল হতে শুরু করেছে। তাই সাগরের জোলো বাতাসে লাগাম পড়তে পারে। শুকনো গরম ফেরার সম্ভাবনা প্রবল।
অর্থাৎ কলকাতাকে ফের চোখ রাঙাচ্ছে লু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy