নতুন করে দলকে সাজাতে চাইছেন সুকান্ত মজুমদার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
শুধু রাজনীতিক হিসাবে পরিচিতরাই রাজনীতি করবেন, এমন ধারণা ভাঙতে চাইছেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। নতুন রাজ্য কমিটি তৈরির পরে তিনি সহ-সভাপতি করেছিলেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ মধুছন্দা করকে। যুব মোর্চার সভাপতি করেছিলেন আর এক ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইন্দ্রনীল খাঁকে। এ বার যুব মোর্চার কমিটিতে জায়গা পেলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদাররা। ইন্দ্রনীল ছাড়াও নতুন যুব বিজেপি কমিটিতে রয়েছেন আরও দুই চিকিৎসক অপূর্ব দত্ত এবং সৌরভ সিংহ। এ ছাড়াও রয়েছেন চার জন ইঞ্জিনিয়ার, দু’জন অধ্যাপক। রাজনীতিতে আইনের ছাত্রদের থাকাটা নতুন কিছু নয়। তবে এই প্রথম রাজ্য বিজেপি-র যুব কমিটিতে একসঙ্গে জায়গা পেয়েছেন পাঁচ জন আইনজীবী। আর বিজেপি-র দাবি, কমিটিতে জায়গা পাওয়া সকলেরই বয়স ৩৫-এর নীচে।
বিজেপি-তে বরাবর সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তিরাই বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ পদ পান। রাজ্য সভাপতি হওয়া বটানির অধ্যাপক সুকান্ত এ বার সেই চিরাচরিত ধারণাতেই যে বদল আনতে চাইছেন তা যেন বেশি করে স্পষ্ট হল তাঁর যুব কমিটিতে। দিলীপের সময়ে বিজেপি অনেকটা সাফল্য দেখাতে পারলেও সেটা মূলত গ্রামাঞ্চলে। শহরে বিজেপি-র সাফল্য ছিল কম। গত বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতা বা তার আশপাশের আসনগুলিতে দলের খারাপ ফল এবং পুরভোটে পর্যুদস্ত হওয়া— এটা বেশি করে দেখিয়ে দিয়েছে যে, গেরুয়া শিবির এখনও শহরের মানুষের কাছে অনেকটাই ব্রাত্য। দলকে কেন শহরের মানুষ গ্রহণ করছেন না এই পর্যালোচনায় নেতৃত্বে থাকা পদাধিকারীদের ব্যক্তিগত পরিচয় থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে দলের ভিতরে ও বাইরে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। সেই প্রশ্ন উঠেছে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপকে নিয়েও। সেই সমালোচার ঊর্ধ্বে উঠতে চাইছেন সুকান্ত। বিজেপি সূত্রে খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও এমনটাই চাইছেন। কারণ তাঁরাও বুঝেছেন, বাংলার একটা বড় অংশের মানুষ রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের পরিচয়কে গুরুত্ব দেয়। বিধানসভা নির্বাচনে আশাপূরণ না হওয়ার কারণ বিশ্লেষণে এটাও দলে আলোচনা হয় যে, দিলীপের মুখে বিশিষ্টজনদের সম্পর্কে মন্তব্য ভাল চোখে দেখেনি শিক্ষিত বাঙালি সমাজ। বিজেপি সূত্রে খবর, দলকে সেই ধারণা থেকে বার করার উদ্যোগও শুরু হয়েছে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও যে এটা চাইছেন তা স্পষ্ট হয় সে ভাবে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা না থাকা সুকান্তকে দিলীপের উত্তরসূরী হিসেবে বাছা। জানা যায়, সুকান্তের ‘অধ্যাপক’ পরিচয় এই বাছাই পর্বে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। দিলীপের সময়ে যুব মোর্চার সভাপতি ছিলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। সহ-সভাপতি পদে শঙ্কুদেব পণ্ডা-সহ যাঁরা ছিলেন তাঁদের সকলেরই মূল পরিচয় তাঁরা রাজনীতিক। আর সুকান্তের তৈরি যুব মোর্চার সভাপতি পদে চিকিৎসক ইন্দ্রনীল। অন্যতম সহ-সভাপতি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গৌরব লামা। মূলত কার্শিয়াঙের বাসিন্দা গৌরব প্রেসিডেন্সি কলেজেরই প্রাক্তন ছাত্র। এর পরে দিল্লিতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্রা শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর সঙ্গে যুক্ত হন। নতুন যুব মোর্চার কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগেরই আর এক পড়ুয়া অঙ্কন দত্ত। রয়েছেন কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যাপক অভ্র সেন।
বিজেপি যুব মোর্চার কমিটিতে রয়েছেন চার ইঞ্জিনিয়ার— অভিষেক সেনগুপ্ত, সৌরভ চক্রবর্তী, সৌনাভ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উপমন্যু ভট্টাচার্য। অন্যতম সহ-সভাপতি হয়েছেন আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। এ ছাড়াও আইনজীবী অর্ক ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কানাই দত্ত, সৌরভ মণ্ডল রয়েছেন রাজ্য কমিটিতে। রাজ্য বিজেপি-র যুব মোর্চার কমিটিতে এমন ছবি অতীতে যে দেখা যায়নি তা মানছেন দলের নেতারাও। সাম্প্রতিক কালে বিজেপি-তে আরও একটা চল তৈরি হয়েছিল যে, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী হন কোনও সেলেব। পর পর রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পালের পরে সেই জায়গায় এসেছেন দলের পুরনো কর্মী তনুজা চক্রবর্তী।
তবে কি রাজনীতিকদের থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদারদের উপরে বেশি নির্ভর করছেন সুকান্ত? এমন প্রশ্নের জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘আমি মনে করি কেউ রাজনীতিক হয়ে জন্মান না। আর রাজনীতিতে সব ক্ষেত্রের মানুষের যোগদান দরকার। তাতে রাজনীতির অঙ্গন সমৃদ্ধ হয়। সব ক্ষেত্রের মানুষের নিজ নিজ বিষয়ের কিছু অভিজ্ঞতা থাকে। সেটা সাধারণ মানুষের কাজে লাগে। আর অন্য ক্ষেত্রের কৃতি রাজনীতিতে এলে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ে।’’
কিন্তু যুব বাহিনীকে তো সারা ক্ষণ আন্দোলনে থাকতে হয়। নির্বাচনে দলের সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হয়। চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপকেরা কি সেটা পারবেন? সুকান্ত বলেন, ‘‘প্রথমেই বলে রাখি, বিজেপি নির্বাচন নির্ভর দল নয়। গণতন্ত্রে নির্বাচন একটা বড় বিষয়, কিন্তু সেটাই সব নয়। সমাজের জন্য কাজ করাই আমাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। আর সেটা করতে গেলে সমাজের সব ক্ষেত্রের অংশগ্রহণটাও জরুরি। অনেকে বলেন, আজকাল ভাল ও অন্য ক্ষেত্রে সফল মানুষেরা রাজনীতিতে আসেন না। সেটা অন্তত বিজেপি-কে দেখিয়ে বলা যাবে না। গোটা দেশেই সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষদের সংগঠনে এনেছে বিজেপি। তাঁরা পরবর্তী কালে বড় সংগঠক হয়ে উঠেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy