Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
৯ তারিখ পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে সুদীপ

রোজভ্যালি থেকে ১৭ লক্ষ টাকা নিয়ে ইউরোপ ঘুরেছিলেন সুদীপ

বছর চারেক আগে বিদেশ ভ্রমণের জন্য তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ২২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, তার ১৭ লক্ষ টাকাই রোজ ভ্যালির অ্যাকাউন্ট থেকে গিয়েছিল বলে দাবি করল সিবিআই।মঙ্গলবার কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে জেরা করার পরে সুদীপকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

‘বীরের মতো...।’ বুধবার ভুবনেশ্বরের সিবিআই আদালতে সা‌ংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

‘বীরের মতো...।’ বুধবার ভুবনেশ্বরের সিবিআই আদালতে সা‌ংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৭
Share: Save:

বছর চারেক আগে বিদেশ ভ্রমণের জন্য তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ২২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, তার ১৭ লক্ষ টাকাই রোজ ভ্যালির অ্যাকাউন্ট থেকে গিয়েছিল বলে দাবি করল সিবিআই।

মঙ্গলবার কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে জেরা করার পরে সুদীপকে গ্রেফতার করে সিবিআই। রাতেই তাঁকে উড়িয়ে আনা হয় ভুবনেশ্বর। বুধবার তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপকে ভুবনেশ্বর আদালতে তোলা হয়।

সিবিআই সুদীপকে আরও জেরা করার জন্য ১২ দিনের হেফাজত চেয়েছিল। বিচারক আপাতত ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সুদীপকে সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ৯ তারিখই এই মামলার পরবর্তী শুনানি। সুদীপের আইনজীবী অবশ্য এ দিন সরাসরি সাংসদের জামিনের জন্যই আবেদন করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, সুদীপ রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান। ৯ তারিখ ওই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক রয়েছে। সেখানে তাঁর যোগ দেওয়াটা জরুরি। তা ছাড়া সিবিআই আদালতে তাদের তোলা অভিযোগের সপক্ষে কোনও নথি জমা দিতে পারেনি। ফলে তাঁর আবেদন, সুদীপবাবুকে জামিন দেওয়া হোক। আদালত তা মঞ্জুর করেনি।

এ দিন সিবিআই দাবি করে, রোজ ভ্যালির টাকায় ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে সুদীপ তাঁর স্ত্রী নয়নাকে নিয়ে সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ, লুসার্ন, ইতালির পিসা, রোম, ফ্লোরেন্স-সহ বিভিন্ন শহরে বেড়িয়েছিলেন। সুদীপ সেই অভিযোগ ওড়াতে নিজেই নিজের হয়ে সওয়াল করেছেন। পাঁচ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক ড্রাফ্টের নথি দেখিয়ে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই সফরের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার ড্রাফ্ট কাটা হয়েছিল।’’

তবে সিবিআই সূত্রের দাবি, সিবিআই অফিসারদের জেরার মুখেও প্রথমে সাংসদ জানিয়েছিলেন, নিজের পকেট থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে তিনি ইউরোপ ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। কিন্তু তদন্তে জানা গিয়েছে, বিলাসবহুল সেই ভ্রমণে খরচ হয়েছিল ২২ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে সাংসদ ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ঠিকই। বাকি ১৭ লক্ষ টাকা এসেছিল রোজ ভ্যালির অ্যাকাউন্ট থেকে। এ সংক্রান্ত নথিও এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে। সূত্রের খবর, সুদীপকে ওই নথি দেখানোর পরে তিনি চুপ করে যান। যদিও আদালতে সিবিআই এখনও সেই নথি জমা দেয়নি। সুদীপও নিজের পুরনো দাবিতেই অনড় থাকেন।

কী নিয়ে জেরা করা হল আপনাকে? আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুদীপ বলেন, ‘‘সারদা নিয়ে কেউ আমায় কোনও প্রশ্ন করেনি। যা কথা হয়েছে, সব রোজ ভ্যালি নিয়ে। পরের শুনানি ৯ তারিখ।’’

শুধু বিদেশ সফরের টাকার উৎসই নয়, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে এ দিন আদালতে বলা হয়েছে— রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে একাধিকবার ‘ক্লোজড ডোর’ বৈঠক করেছেন সুদীপ। যদিও সুদীপের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার দাবি করেন, ক্লোজড ডোর বৈঠকের কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি সিবিআই।

দুপুরে শুনানির সময়ে বিচারকের উদ্দেশে সুদীপ বলেন, ‘‘আমি কিছু বলতে চাই।’’ বিচারক অনুমতি দিলে সাংসদ বলেন, ‘‘ডিমনিটাইজেশন বা নোট বাতিলের ফলে সাধারণ মানুষের যে ভোগাম্তি হয়েছে তা লোকসভায় তুলে ধরতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলাম।’’ আদালতের কাছে তাঁর অভিযোগ, প্রতিহিংসাবশত তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলার সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। রোজ ভ্যালি সংস্থার লেনদেনের সঙ্গেও তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই।

বিচারক সিবিআই আইনজীবীদের কাছে মামলার কেস ডায়েরিটি দেখতে চান। সেটা দেখার পর সাংসদকে ছ’দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বুধবার সকাল থেকেই ভুবনেশ্বরের নয়াপল্লিতে সিবিআইয়ের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তৃণমূল। এ দিন আদালত চত্বরেও বিক্ষোভ দেখায় তারা।

এ দিন সকালে সুদীপের সঙ্গে দেখা করতে যান পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি। তিনি বলেন, ‘‘এক ঝলক দেখা হল। গেস্ট হাউসের মতো একটা ঘরে ছিলেন। কাগজ পড়ছিলেন। আমাকে দেখে নমস্কার করলেন।’’ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে সিবিআই অফিসেই এ দিন চিকিৎসকদের ডেকে সুদীপের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। নিয়মিত ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তাঁকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sudip Bandopadhyay TMC Sarada
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE