৫ অগস্ট এসইউসি-র ব্রিগেড সমাবেশ। — ফাইল চিত্র।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে ব্রিগেড সমাবেশ ডেকে সেই মঞ্চ থেকে কি একদা জোটসঙ্গী এবং অধুনা বাংলার শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাবে এসইউসি? ১৯৮৮ সালের ৪ এপ্রিল শেষ বার ব্রিগেড সমাবেশ ডেকেছিল তারা। এর পরে আবার ব্রিগেডে সমাবেশ ডাকা হয়েছে ৫ অগস্ট। অর্থাৎ আগামী শনিবার।
রাজ্য রাজনীতিতে যখন বিরোধীরা সমস্বরে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি নিয়ে সরব, তখন ব্রিগেড থেকে কি সেই রাজনৈতিক আক্রমণে গলা মেলাবে এসইউসি। সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ জানালেন, সব দল সম্পর্কেই তাঁদের অবস্থান বলা হবে। প্রভাসের কথায়, ‘‘আমরা সব দলের সম্পর্কেই আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান বলব। বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল— সবার সম্পর্কে।’’ কিন্তু তৃণমূল সম্পর্কে তাঁরা ‘নরম’ থাকবেন না ‘গরম’, তা খোলসা করেননি বর্ষীয়ান বামনেতা।
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে তৃণমূলের সঙ্গী ছিল এসইউসি। ২০০৯ সালে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সমর্থনে জয়নগর লোকসভা থেকে সংসদে পৌঁছেছিলেন এসইউসির চিকিৎসক নেতা তরুণ নস্কর। কিন্তু ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এসইউসিআই সেই ক্ষমতার বৃত্তে যায়নি। বরং সরকার বিরোধী আন্দোলনে বারবার তাদের রাস্তায় দেখা গিয়েছে। এমনকি ইস্যুর ভিত্তিতে বামেদের সঙ্গেও মিছিল করতে দেখা গিয়েছে এসইউসিই-কে। তবে এখনও তাদের মূল শক্তি দক্ষিণ ২৪ পরগনা কেন্দ্রিক।
রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই ধারনা, জমি আন্দোলনের পর্বের সঙ্গী সম্পর্কে তৃণমূল সম্পর্কে এসইউসি ‘নরম’। কিন্তু প্রভাসের বক্তব্য, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে এসইউসি-ই আন্দোলন শুরু করেছিল। পরে যুক্ত হয়েছিল তৃণমূল। তিনি কি তা হলে মনে করেন, তৃণমূল তাঁদের আন্দোলন ‘হাইজ্যাক’ করে নিয়েছিল? জবাবে প্রবীণ নেতা বলেন, ‘‘হাইজ্যাক আমি বলব না। সেই সময়ে তৃণমূল ছিল ছাতার মতো। না হলে আমরা সিপিএমের ওই আক্রমণ রুখতে পারতাম না।’’ সিঙ্গুরে টাটার নির্মীয়মান কারখানার গেটের সামনে জাতীয় সড়কের উপর ‘কৃষিজমি বাঁচাও কমিটি’র ধর্নামঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যমণি হলেও পার্শ্ববর্তী বাজেমেলিয়া, বেড়াবেড়ি, গোপালনগর মৌজার গ্রামে গ্রামে পৌঁছে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছিলেন এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল অতি বাম সংগঠন ‘মজদুর ক্রান্তি পরিষদ’ও (এমকেপি)। সেই সময়ে অধুনাপ্রয়াত সিপিএম নেতা বলাই সাঁবুই হুগলি জেলা সিপিএমের অন্দরে বলেছিলেন, এসইউসি-র ছেলেমেয়েরা ছিনে জোঁকের মতো গ্রামে পড়ে রয়েছেন। পুলিশ তাঁদের কিছু করছে না!
এসইউসি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রভাসের আরও দাবি, ‘‘আমরা সেই সময়ে তৃণমূলকে শর্ত দিয়েছিলাম, মার্ক্সবাদকে আক্রমণ করা যাবে না। ওরা সেই শর্ত ভাঙেনি।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘২০১১ সালের আগেই দলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, তৃণমূল ক্ষমতায় এলে সেই অলিন্দে এসইউসিআই ঢুকবে না। বরং রাস্তার আন্দোলনে থাকবে। আমরা সেটাই করেছি।’’ প্রভাস বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁরা তাঁদের রাজনীতিতে ‘সৎ’। ফলে তাঁরা যেমন বলেছিলেন, তেমনই করেছেন। বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘ইন্ডিয়া’কে কী ভাবে দেখছে এসইউসি? প্রভাস তা-ও খোলসা করেননি। বলেছেন, যা বলার ব্রিগেডেই বলবেন।
প্রয়াত শিবদাস ঘোষের জন্মদিবসে ফি-বছর ৫ অগস্ট কলকাতার রানি রাসমণি রোড অথবা শহিদ মিনারে সভা করে এসইউসি। এ বার শিবদাসের জন্মশতবর্ষ। তাই আয়োজনও বড়। তা-ই ব্রিগেডে সমাবেশের আহ্বান। প্রভাস জানাচ্ছেন, তাঁরা আশা করছেন, ব্রিগেডে দু’লক্ষেরও বেশি লোক সমাগম হবে আগামী শনিবার।
ব্রিগেডের মতো অত বড় মাঠে দু’লক্ষ লোক তেমন নয় বলেই মত রাজনৈতিক মহলের অনেকের। তবে এসইউসিআই-এর মতো একটি ক্ষুদ্র দলের কাছে ব্রিগেডে সমাবেশ করার ‘স্পর্ধা’ দেখানোটাই তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু বাংলা নয়। সারা দেশ থেকেই কর্মী-সমর্থকেরা আসবে বলে দাবি প্রভাসের। তিনি জানিয়েছেন, ওড়িশা থেকে দু’টি ট্রেন তাঁরা ভাড়া করেছেন। তাতে লোক আসবে। বিহার থেকেও একটি ট্রেন ভাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের কারণে তা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসইউসিআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। লোক এসে কোথায় থাকবে? এসইউসিআই-এর তরফে বলা হয়েছে, সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক, কসবা গীতা়ঞ্জলি স্টেডিয়াম, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম-সহ বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশে যোগ দিতে আসা কর্মী-সমর্থকদের রাখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy